রোজা রেখে দিনের বেলায় করোনার (কোভিড-১৯) টিকা নিলে কি রোজা নষ্ট হবে?
﷽
রোজা রেখে রমজানের দিনের বেলায় করোনা (কোভিড-১৯)-এর টিকা নেয়ার হুকুম কী?
রমজানের দিনের
বেলায় করোনার টিকা নিতে কোন অসুবিধা নেই।
যেহেতু এটি চিকিৎসা শ্রেণীয় ইনজেকশন; যা রোযা নষ্ট করে না। কেননা এটি পানাহার নয়, পানাহারের
স্থলাভিষিক্তও নয় এবং পানাহারের স্বাভাবিক পথ তথা মুখ বা নাক দিয়েও এটাকে প্রবেশ
করানো হয় না।
১৪১৮ হিজরীর ২৩-২৮ শে সফর
সৌদি আরবের জেদ্দাতে অনুষ্ঠিত ফিকাহ একাডেমীর দশম অধিবেশনের সিদ্ধান্তে এসেছে:
“চিকিৎসা সংক্রান্ত রোযা
ভঙ্গকারী বিষয়াবলী” বিষয়ে একাডেমীতে পেশকৃত গবেষণাসমূহ
পর্যালোচনা এবং ১৪১৮ হিজরীর ৯-১২ সফর (১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪-১৭ জুন) মরক্কোর ‘কাসাব্লাঙ্কা’ শহরে
ফিকাহ একাডেমী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ‘ইসলামিক মেডিকেল অর্গানাইজেশন’ কর্তৃক
নবম ‘ফিকহ
ও মেডিকেল সিম্পোজিয়াম’ এর পক্ষ থেকে ইস্যুকৃত গবেষণাপত্র, গবেষণা
প্রবন্ধ ও সুপারিশগুলো পর্যালোচনা এবং অংশগ্রহণকারী ফিকাহবিদ ও ডাক্তারগণের আলোচনা-পর্যালোচনা
শুনা এবং কুরআন-সুন্নাহ ও ফিকহ বিশারদদের বক্তব্য জানার পর নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত
দিচ্ছে:
নিম্নোক্ত বিষয়াবলী রোযাভঙ্গকারী হিসেবে গণ্য হবে না:
ত্বকে, পেশীতে
কিংবা শিরাতে প্রদত্ত চিকিৎসা শ্রেণীয় ইনজেকশন; তবে খাদ্যজাতীয় তরল ও ইনজেকশন বাদ দিয়ে।”[ফিকাহ
একাডেমীর জার্নাল, সংখ্যা-১০ থেকে সমাপ্ত]
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (১০/২৫২) এসেছে:
“রোযাদারের জন্য রমযানের
দিনের বেলায় পেশীতে ও শিরাতে ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়া জায়েয। তবে রোযাদারের
জন্য রমযানের দিনের বেলায় খাদ্যজাতীয় ইনজেকশন নেয়া জায়েয নয়। কেননা তা পানাহার
গ্রহণের পর্যায়ভুক্ত। এ ধরণের ইনজেকশন নেয়া রোযা না-রাখার কৌশল হিসেবে
গণ্য হবে। পেশীতে ও শিরাতে যদি রাতে ইনজেকশন নেয়ার সুযোগ থাকে তাহলে সেটা করা ভাল।”[সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“যা কিছু পানাহারের
স্থলাভিষিক্ত আলেমগণ সেগুলোকে রোযাভঙ্গকারী বিষয়ের অধিভুক্ত করেছেন; যেমন-
নিউট্রিশন ইনজেকশন। নিউট্রিশন ইনজেকশন বলতে সেসব ইনজেকশন নয় যেগুলো শরীরকে চাঙ্গা
করে বা সুস্থ করে। বরং নিউট্রিশন ইনজেকশন হচ্ছে যেগুলো গ্রহণ করলে পানাহার লাগে
না।
পূর্বোক্ত আলোচনার
ভিত্তিতে: যে সকল ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয় সেগুলো রোজা ভঙ্গ
করবে না। চাই সেগুলো শিরাতে পুশ করা হোক কিংবা রানে কিংবা অন্য যে কোন স্থানে।”[শাইখ
উছাইমীনের ফতোয়া ও পুস্তিকা সমগ্র (১৯/১৯৯)]
মাননীয় শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
“টিকার ইনজেকশন কি রোজার উপর
প্রভাব ফেলবে?”
জবাবে তিনি বলেন: প্রভাব
ফেলবে না। রোযা সহিহ। যে ইনজেকশনগুলো টিকা হিসেবে কিংবা চিকিৎসা হিসেবে পুশ করা হয়
সঠিক মতানুযায়ী সেগুলো রোযার উপর প্রভাব ফেলবে না। তবে নিউট্রিশন ইনজেকশন ব্যতীত।
কারণ নিউট্রিশন ইনজেকশন রোযার উপর প্রভাব ফেলবে। সাধারণ ইনজেকশন, টিকার
ইনজেকশন বা এ জাতীয় অন্যান্য ইনজেকশন রোজার উপর প্রভাব ফেলবে না। অতএব, সঠিক
মতানুযায়ী টিকার ইনজেকশন রোজার উপর প্রভাব ফেলবে না। রোজা
সঠিক।
উপস্থাপক: জাযাকুমুল্লাহু
খাইরা। চাই এই ইনজেকশন পেশীতে পুশ করা হোক কিংবা শিরাতে?
শাইখ: হ্যাঁ। আমভাবে
(পেশীতে দেয়া হোক বা শিরাতে)। এটাই সঠিক। [শাইখ বিন বাযের ওয়েবসাইট থেকে সমাপ্ত]
শাইখ ড. সাদ আল-খাছলান (হাফিযাহুল্লাহ্) বলেন:
“যে ব্যক্তি রমযানের দিনের
বেলায় করোনার টিকার ডোজ নিল তার রোজা কি নষ্ট হবে?
জবাব: তার রোজা নষ্ট হবে
না। কেননা করোনার টিকা চিকিৎসা শ্রেণীয় ইনজেকশন। অগ্রগণ্য মতানুযায়ী চিকিৎসা
শ্রেণীয় ইনজেকশন রোজা ভঙ্গ করে না। কেননা এ ধরণের ইনজেকশন
পানাহার নয় কিংবা পানাহারের স্থলাভিষিক্তও নয়।
মূল বিধান হল: রোজার
শুদ্ধতা। তাই সুস্পষ্ট কোন বিষয় ছাড়া আমরা এ মূল বিধানকে পরিবর্তন করব না।
অতএব, আমরা
বলব: রোজাদারের জন্য করোনার টিকা নিতে কোন অসুবিধা নাই। এতে রোজা ভাঙ্গবে না।
রোজা রেখে COVID-19 ভ্যাকসিন নেওয়া কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, আপনার প্রথম ডোজ হোক বা দ্বিতীয়, রোজা রাখার সময় টিকা নেওয়া নিরাপদ। COVID-19 ভ্যাকসিনের সুবিধাগুলি আপনি যে কোনও হালকা অস্বস্তি অনুভব করতে
পারেন তার চেয়ে বেশি, তাই আপনার ভ্যাকসিন
অ্যাপয়েন্টমেন্টে বিলম্ব করার দরকার নেই। সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত:
- বাহুতে ব্যাথা
- মাথাব্যথা
- ক্লান্তি
- শরীর ব্যথা
- জ্বর
- ঠাণ্ডা
- বমি বমি ভাব
আপনার শরীর কীভাবে
প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নিয়ে আপনি যদি চিন্তিত হন, তাহলে ইফতারের কয়েক ঘন্টা আগে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন, নিজেকে পরে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিন এবং তারপরে আপনার রোজা
ভাঙার জন্য।
আপনি যদি চিকিৎসাগতভাবে
অসুস্থ হন - যে কারণেই হোক না কেন - তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ।
রোজা রেখে কোভিড-১৯
ভ্যাকসিন নেওয়া কি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করবে?
না, আপনার উপবাসের সময় COVID-19 ভ্যাকসিন না নেওয়ার কোনও চিকিৎসা কারণ নেই, যদি সেই সময়ই আপনার এটি নেওয়ার জন্য নির্ধারিত হয়। আসলে, কেউ কেউ পরামর্শ দেন যে এমন কিছু প্রমাণও থাকতে পারে যে ইমিউন
সিস্টেম - এবং এইভাবে ভ্যাকসিন - উপবাসের সময়কালে আরও ভাল কাজ করে।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনে
কি কোন অ-হালাল উপাদান আছে?
কিছু ভ্যাকসিনে
জেলটিন থাকে, যা শূকর সহ প্রাণী থেকে আসতে পারে। যাইহোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে তিনটি প্রধান ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে
—
Pfizer-BioNTech, Moderna এবং Johnson &
Johnson-এর তৈরি — তাতে কোনও প্রাণীজ পণ্য নেই।
অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা
ভ্যাকসিন,
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে দেওয়া হচ্ছে, পশুদের থেকে কোনো উপাদান না থাকার জন্য নির্ধারিত ছিল। এছাড়াও, বেইজিং-ভিত্তিক কোম্পানি সিনোভাক দ্বারা উত্পাদিত করোনাভাক ভ্যাকসিন, ইন্দোনেশিয়ার ইসলামিক সংস্থা হালাল বলে বিবেচিত হয়েছিল।
তলদেশের সরুরেখা
আপনি রমজানে
রোজা রাখার সময় COVID-19 ভ্যাকসিন - বা যেকোনো
ভ্যাকসিন পেতে পারেন। এটি নেতৃস্থানীয় ইসলামিক স্কলার এবং সংগঠনের আদেশের উপর ভিত্তি
করে। এটি মুসলিম রোগীদের সাথে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের অনুশীলনও। আপনি যদি রোজা রাখেন, তাহলে ভ্যাকসিনটি কম কার্যকর হবে না এবং আপনি যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অনুভব করতে পারেন তা স্বাভাবিকের চেয়ে খারাপ হবে না। এই রমজানে সুস্থ থাকতে মনে রাখবেন
যখন আপনি মানুষের সাথে জড়ো হন তখন নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসরণ করে।
আল্লাহ্ই
সর্বজ্ঞ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url