ইমাম মাহদী - ইমাম মাহদী সম্পর্কে হাদীস সমূহ

ইমাম মাহদী সম্পর্কে হাদীস সমূহঃ শেষ যুগে রাসূল (সাঃ) এর বংশ থেকে এমন এক লোক জন্ম নিবেন যাঁর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা'আলা ইসলামের বিজয় দিবেন। তিনি সাত বছর ক্ষমতায় থাকবেন। তিনি ইন্সাফে পুরো বিশ্ব ভরে দিবেন। তাঁর যুগের উম্মতরা এমন নিয়ামত ভোগ করবে যা ইতিপূর্বে কেউ করেনি। জমিন পরিপূর্ণ ফসল দিবে। আকাশ যথেষ্ট বৃষ্টি দিবে। মানুষ তখন এমন সম্পদের মালিক হবে যার কোন হিসেব নেই।

ইমাম মাহদী

ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেনঃ তাঁর যুগে ফল-ফলাদি বেশি হবে। ভরপুর শস্য ও প্রচুর ধন সম্পদ হবে। শক্তিশালী ক্ষমতা ও ইসলাম সর্ব জায়গায় পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিষ্ঠিত হবে। শত্র“ পরাজিত ও সকল কল্যাণ তখন স্থায়ী হবে। তাঁর নাম হবে মুহাম্মাদ বা আহ্মাদ। তাঁর পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ্। তিনি হযরত হাসানের বংশধর হবেন। তাঁর মাথার অগ্রভাগে কোন চুল থাকবে না। তাঁর নাকের বাঁশি হবে লম্বা এবং মধ্যভাগ হবে ঢালু। তিনি পূর্ব দিক থেকে বের হবেন।


সাউবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


يقتتل عند كنزكم ثلاثة ؛ كلهم ابن خليفة ، ثم لا يصيرإلى واحد منهم ، ثم تطلع الرايات الشؤد من قبل المشرق ، فيقتلونكم قتلاً لم يقتله قوم ... فإذا رأيتموه فبايعوه، ولو حبوا على الثلج ، فإنه خليفة الله المهدي অর্থাৎ তোমাদের ধন-ভাণ্ডার গ্রাসের জন্য তিন ব্যক্তি যুদ্ধ করবে। সবাই খলীফার সন্তান। কিন্তু কেউ তা শেষ পর্যন্ত দখল করতে পারবে না। অতঃপর পূর্ব দিক থেকে কয়েকটি কালো ঝাণ্ডা বের হবে। তারা তোমাদের সাথে এমন কঠিন যুদ্ধ করবে যা কেউ ইতিপূর্বে করেনি। ... যখন তোমরা তাঁকে (মাহ্দীকে) দেখবে তাঁর হাতে বায়'আত করবে। এমনকি বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাঁর নিকট গিয়ে তাঁর হাতে বায়'আত করবে। কারণ, তিনি হবেন আল্লাহ্'র খলীফা মাহ্দী। (ইবনু মাজাহ্ ২/১৩৬৭ 'হাকিম ৪/৪৬৩-৪৬৪)


কারো কারোর মতে উপরোক্ত হাদীসটি দুর্বল। তবে ইমাম যাহাবী ও ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুমাল্লাহ্) হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লামাহ্ আল্বানী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেছেনঃ উক্ত হাদীসটি অর্থের দিক দিয়ে শুদ্ধ। তবে "তিনি হবেন আল্লাহ্'র খলীফা মাহ্দী” বাক্যটি অশুদ্ধ। ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেনঃ উক্ত হাদীসে ধন ভাণ্ডার বলতে কা'বার ধন-ভাণ্ডারকে বুঝানো হয়েছে। এ ধন-ভাণ্ডার গ্রাস করার জন্য খলীফাদের তিনটি সন্তান পরস্পর দ্বন্দ্ব করবে। এ ভাবেই শেষ যুগ এসেযাবে এবং ইমাম মাহ্দী বের হবেন। তিনি পূর্ব দিক থেকে বের হবেন।


তিনি আরো বলেনঃ পূর্বের কিছু লোক তাঁর সহযোগিতা করে তাঁকে পরিপূর্ণ ক্ষমতাশীল করবেন। তাদের ঝাণ্ডাগুলো হবে কালো এবং কালো রংই গাম্ভীর্যের নিদর্শন। কারণ, রাসূল (সাঃ) এর ঝাণ্ডাও ছিলো কালো। তাঁর ঝাণ্ডাখানার নাম ছিলো 'ইক্বাব। মূল কথা, ইমাম মাহ্দী পূর্ব দিক থেকেই বের হবেন। কা'বা শরীফের পার্শ্বেই তাঁর জন্য বায়'আত গ্রহণ করা হবে। (নিহায়াহ্ ১/২৯-৩০)


বিশুদ্ধ হাদীস থেকে ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের প্রমাণঃ


নিম্নে এমন কিছু বিশুদ্ধ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যার কোনটিতে ইমাম মাহ্দীর সরাসরি উল্লেখ আর কিছুতে তাঁর গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে।


১. আবু সা'ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


يخرج في آخر أمتي المهدي ، يسقيه الله الغيث ، وتخرج الأرض نباتها ، ويغطى المال صحاحا ، وتكثر الماشية ، وتعظم الأمة ، يعيش سبعا أو ثمانيا يغني حججا

অর্থাৎ আমার উম্মতের শেষাংশে মাহ্দী বেরুবে। আল্লাহ্ তা'আলা সে যুগে বেশি বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।

জমিন প্রচুর ফসল দিবে। সম্পদের সুসম বন্টন হবে। ছাগট-উট বেড়ে যাবে। উম্মতে মুস্লিমাহ্ তখন শক্তিশালী হবে। সে তখন সাত বা আট বছর বেঁচে


আবু সা'ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


أبشركم بالمهدي ، يبعث على اختلاف من الناس وزلازل ، فيملأ الأرض قسطا وعدلا كما ملئت جورا وظلما ، يرضى عنه ساكن الشماء وساكن الأرض ، يقسم المال صحاحا ، قال له رجل : ما صحاحا ؟ قال: بالشوية بين الناس ، قال: ويملأ غنى ، ويسعهم عدله ، حتى يأمر الله قلوب أمة محمد مناديا ، فينادي ، فيقول: من له في مال حاجة ؟ فما يقوم من النّاس إلا رجل ، فيقول: ائت الشدان يغني الخازن ، فقل له: إن المهدي يأمرك أن تغطيني مالاً ، فيقول له: احث ، حتى إذا حجرة وأبرزة ندم ، فيقول: كنت أخشع أمة محمد نفسا أو عجز عني ما وسعهم ؟! ، قال: فیرده ، فلا يقبل منه ، فيقال له: إنّا لا تأخذ شيئا أعطيناه ، فيكون كذلك سبع سنين ، أو ثمان سنين ، أو تسع سنين ، ثم لا خير للعيش بعده ، أو ثم لا خير في الحياة بعدة

অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে মাহ্দীর সুসংবাদ দিচ্ছি। মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব ও ভূমি কম্প যখন বেড়ে যাবে তখনই সে প্রেরিত হবে। তখন সে পুরো বিশ্ব ন্যায় ও ইন্সাফে ভরে দিবে যেমনিভাবে তা ভরে দেয়াহয়েছিলো অন্যায় ও অত্যাচারে। তার উপর ফেরেশ্তারাযেমন সন্তুষ্ট থাকবেন তেমন মানুষও।


তখন সম্পদের সুসম বন্টন হবে। আল্লাহ্ তা'আলা উম্মতে মুহাম্মদীর অন্তর সমূহ অমুখাপেক্ষিতায় ভরে দিবেন। মাহ্দীর ইন্সাফই তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। একদা সে জনৈক ব্যক্তিকে পাঠাবে মানুষকে এ কথা ডেকে বলে দিতে যে, কার সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে? তখন একটি মাত্র লোক দাঁড়িয়ে বলবেঃ আমার সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে। তখন সে বলবেঃ সম্পদের প্রয়োজন থাকলে আমার কোষাধ্যক্ষকে গিয়ে বলবেঃ মাহ্দী তোমাকে আদেশ করছেন আমাকে সম্পদ দিতে।


তখন সে বলবেঃ যা পারো অঞ্জলী ভরে নিয়ে নাও। যখন সে নিতে নিতে সম্পদের একটি তূপ বানিয়ে ফেলবে তখন সে লজ্জিত হয়ে বলবেঃ আমিই তো এ উম্মতের মধ্যকার লোভী মানুষটি। যা বন্টন করা হচ্ছে তা সবার যথেষ্ট আমার যথেষ্ট হবে না কেন?! তখন সে তা ফেরত দিবে। কিন্তু তা আর ফেরত নেয়া হবে না। বরং তাকে বলা হবেঃ আমরা যা কাউকে একবার দেই তা আর ফেরত নেই না। এভাবেই সে সাত, আট বা নয় বছর কাটিয়ে দিবে। তার ইন্তিকালের পর দুনিয়াতে বেঁচে থাকার আর কোন ফায়েদা নেই। (আহমেদ ৩/৩৭) কারো কারোর নিকট উপরোক্ত হাদীসটি দুর্বল। তবে আল্লামাহ্ হাইসামী হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।


৩. আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


المهدي منا أهل البيت ، يصلحه الله في ليلة অর্থাৎ মাদী আমারই বংশধর হবে। আল্লাহ্ তা'আলা তাকে একই রাত্রে উপযুক্ত বানিয়ে দিবেন। (আহ্মাদ্ ২/৫৮ ইবনু মাজাহ্ ২/১৩৬৭)


৪. আবু সা'ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


المهدي مني أجلى الجبهة ، أقنى الأنف ، يملأ الأرض قسطا وعدلا كما ملئت ظلما وجورا ، يملك سبع سنين

অর্থাৎ মাহ্দী আমারই বংশধর। তাঁর মাথার অগ্রভাগে কোন চুল থাকবে না। তাঁর নাকের বাঁশি হবে লম্বা এবং মধ্যভাগ হবে ঢালু। সে পুরো বিশ্ব ন্যায় ও ইন্সাফে ভরে দিবে যেমনিভাবে তা ভরে দেয়া হয়েছিলো অন্যায় ও অত্যাচারে। সে সাত বছর ক্ষমতাসীন থাকবে। (আবু দাউদ ১১/৩৭৫ 'হাকিম ৪/৫৫৭)


৫. উম্মে সালামাহ্ থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


المهدي من عثرتي ، من ولد فاطمة অর্থাৎ মাহ্দী আমারই বংশধর ; ফাতিমার সন্তান। (আবু দাউদ ১১/৩৭৩ ইবনু মাজাহ্ ২/১৩৬৮) ৬.


জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


ينزل عيسى ابن مريم ، فيقول أميزهم المهدي: تعال ضل بنا ، فيقول: لا ، إن بعضهم أمير بغض ، تكرمة الله هذه الأمة

অর্থাৎ 'ঈসা বিন্ মারইয়াম (আঃ) অবতীর্ণ হবেন। তখন মুসলমানদের আমীর মাহ্দী 'ঈসা (আঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলবেঃ আসুন, নামাযের ইমামতি করুন। তখন তিনি বলবেনঃ না, বরং উম্মাতে মুহাম্মাদীর একে অপরের আমীর। এটা আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে এ উম্মতের প্রতি এক বিরাট সম্মান। (ইবনু ক্বাইয়ি আল্-মানারুল্ মুনীফ ১৪৭-১৪৮ সুয়ূত্বী/ আল্‌-'হাভী ২/৬৪)


৭. আবু সা'ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


خلفه منا الذي يصلي عيسى ابن مريم অর্থাৎ সে আমারই বংশধর যার পেছনে 'ঈসা বিন্ মারইয়াম (আঃ) নামায় আদায় করবেন। (সহীহুল্‌ জামি', হাদীস ৫৭৯৬)


৮. আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস'ঊদ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ


لا تذهب أو لا تنقضي الدنيا حتى يملك العرب رجل من أهل بيتي ، يواطئ اسمه اسمي ، وفي رواية: يواطئ اسمه اسمي واسم أبيه اسم أبن

অর্থাৎ দুনিয়া নিঃশেষ হবে না যতক্ষণ না আরবদেরঅধিপতি হবে আমারই বংশের একজন। যার নাম হবে আমারই নাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যার নাম হবে আমারই নাম এবং তার পিতার নাম হবে আমার পিতার নাম। (আবু দাউদ ১১/৩৭০)


৯. আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


كيف أنتم إذا نزل ابن مريم فيكم ، وإمامكم منكم অর্থাৎ তোমাদের কেমন লাগবে! যখন 'ঈসা বিন্ মারইয়াম (আঃ) তোমাদের মাঝে অবতীর্ণ হবেন। তখন তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য থেকেই হবে। (বুখারী, হাদীস ৩৪৪৯ মুসলিম, হাদীস ১৫৫)


১০. জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


لا تزال طائفة من أمين يقاتلون على الحق ظاهرين إلى يوم القيامة ، قال: فينزل عيسى ابن مريم ، فيقول أميرهم : تعال ، صل لنا ، فيقول: لا ، إن بعضكم على بعض أمراء ، تكرمة الله هذه الأمة

অর্থাৎ সর্বদা আমার উম্মতের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সত্যের উপর যুদ্ধ করে জয়ী হবে। অতঃপর 'ঈসা বিন্ মাইয়াম (আঃ) অবতীর্ণ হবেন। তখন মুসলমানদের আমীর বলবেঃ আসুন, নামাযের ইমামতি করুন। তখন তিনি বলবেনঃ না, বরং তোমাদের মধ্য থেকে একে অপরের আমীর। এটাআল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে এ উম্মতের প্রতি এক বিরাট সম্মান। (মুসলিম, হাদীস ১৫৬)


১১. আবু সা'ঈদ্ খুদ্রী ও জাবির বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ


يكون في آخر الزمان خليفة يقسم المال ولا يعده অর্থাৎ শেষ যুগে এমন একজন খলীফা হবেন যিনি হিসাব ছাড়া মানুষের মাঝে সম্পদ বন্টন করবেন। (মুসলিম, হাদীস ২৯১৩, ২৯১৪)


ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসগুলো

মুতাওয়াতিরঃ

মাদী সংক্রান্ত হাদীসগুলো মুতাওয়াতিরঃ


উক্ত হাদীস ও অন্যান্য হাদীস থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, মাহ্দী সংক্রান্ত হাদীসগুলো অর্থের দিক দিয়ে মুতাওয়াতির। মুতাওয়াতির হাদীস বলতে বর্ণন ধারার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্ব যুগে বর্ণনাকারীদের এমন এক জনগোষ্ঠীর বর্ণনাকেই বুঝানো হয় যাদের মিথ্যা বলা স্বভাবতই অসম্ভব।


এ ব্যাপারে নিম্নে কয়েকজন বিশিষ্ট আলিমের মতামত তুলে ধরা হয়েছেঃ


১. হাফিয আবুল হাসান সিজিস্তানী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেনঃ মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা এ কথা প্ৰমাণিত যে, একদা ইমাম মাহ্দী আবির্ভূত হবেন। তিনি হবেনরাসূল (সাঃ) এর বংশধর। তিনি সাত বছর ক্ষমতাসীন থাকবেন। পুরো বিশ্ব ন্যায় ও ইন্সাফ দিয়ে ভরে দিবেন। একদা 'ঈসা (আঃ) অবতীর্ণ হয়ে দাজ্জাল হত্যায় তাঁর সহযোগিতা করবেন। তিনিই তখন এ উম্মতের ইমামতি করবেন। ’ঈসা (আঃ) তাঁর পেছনেই নামায আদায় করবেন। (ফাত্’হুল-বারী ৬/৪৯৩-৪৯৪ তাহ্যীবুল-কামাল ৩/১১৯৪)


২. শায়েখ মুহাম্মাদ আল-বারাযাঞ্জী (রাহিমাহুল্লাহ্) তাঁর ”আল-’ইশা’আহ্ লি-আশরাত্বিস্ সা’আহ্” নামক কিতাবে বলেনঃ 

ইমাম মাহ্দী সংক্রান্ত হাদীসগুলো বর্ণনার ভিন্নতার দরুন তা সীমাহীন। তিনি আরো বলেনঃ মাহ্দী সংক্রান্ত হাদীসগুলো অর্থের দিক দিয়ে মুতাওয়াতির। তিনি রাসূল (সাঃ) এর মেয়ে ফাতিমার বংশধর। (আল-’ইশা’আহ্ ৮৭, ১১২)


৩. 'আল্লামাহ্ মুহাম্মাদ আস-সাফারিনী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেনঃ

মাহ্দী সংক্রান্ত হাদীসগুলো এতো বেশি যে, তা অর্থের দিক দিয়ে মুতাওয়াতিরের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। এমনকি তা আহ্লে সুন্নাত ওয়াল-জামা'আতের বিশেষ আক্বীদাভুক্তও বটে। তিনি আরো বলেনঃ মাহ্দী সংক্রান্ত হাদীসগুলো বহু সাহাবায়ে কিরাম ও তাবি'য়ীনে 'ইযাম থেকে বর্ণিত হওয়ার দরুন তা এ কথা প্রমাণ করে যে, , ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাব একেবারেই সুনিশ্চিত এবং এর উপর ঈমান আনা একান্ত ওয়াজিব। (লাওয়ামি’উলআহারিল-বাহিয়্যাহ্ ২/৮৪)


৪. ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেনঃ 

এ পর্যন্ত মাদী সংক্রান্ত যে হাদীসগুলো জানা সম্ভব হয়েছে তা সর্বমোট পঞ্চাশটি। নিঃসন্দেহে তা মুতাওয়াতির। কারণ, এর কম সংখ্যক হাদীসের উপরও কখনো মুতাওয়াতির শব্দ ব্যবহার করা হয়। তেমনিভাবে মাদী সংক্রান্ত সাহাবাদের সুস্পষ্ট বর্ণনাও অনেক। যা রাসূলের হাদীস বলেই গণ্য করা হয়। কারণ, এ জাতীয় কথা ওহী ছাড়া নিজ আন্দাজে বলা কখনোই সম্ভবপর নয়। (আল-ইযা’আহ্ : ১১৩-১১৪)


৫. 'আল্লামাহ্ সিদ্দীক হাসান খান (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেনঃ 

মাহ্দী সংক্রান্ত হাদীসগুলো অনেক বেশি। যা অর্থের দিক দিয়ে মুতাওয়াতিরের পর্যায়ে পড়ে। (আল-ইযা’আহ্ ১১২)


৬.শায়েখ মুহাম্মাদ বিন্ জা'ফর আল-কাত্তানী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেনঃ

মোটকথা, ইমাম মাহ্দী, দাজ্জাল ও ’ঈসা (আঃ) সংক্রান্ত হাদীসগুলো মুতাওয়াতির। (নামুল-মুতানাসির ১৪৭ ) ইমাম মাহ্দী সংক্রান্ত বিশেষ কয়েকটি কিতাবঃ 


হাদীসের কিতাব সমূহঃ

যেমনঃ আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্, মুস্লাদে আহ্মাদ, মুস্নাদে বায্যার, মুস্লাদে আবী ইয়া'লা, মুস্লাদে 'হারিস বিন্আবী উসামাহ্, মুস্তাদ্রাকে 'হাকিম, মুসান্নাফে ইবনুআবী শাইবাহ্, স'হীহ্ ইবনু খুযাইমাহ্ ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ছাড়াও যে কিতাবগুলো শুধু ইমাম মাহ্দীর উপরেই লেখা হয়েছে তার কিছু নিম্নরূপ:


১. হাফিয আবু বকর ইন্নু আবী খাইসামাহ্'র "আহাদীসুল-মাহ্দী"।

২. ইমাম সুয়ূত্বীর "আল-'উফুল-ওর্য়াদী ফী আখবারিল-মাহ্দী"।

৩. ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ্) এর ”আল-মাহ্দী”।

৪. 'আলী মুত্তাক্বীর "আল-ইমামুল-মাহ্দী”।

৫. ইবনু 'হাজার মাক্কীর "আল-ক্বাওলুল-মুখতাসার ফী 'আলামাতিল-মাহ্দী আল-মুন্তাযার”।

৬. মোল্লা ’আলী আল-ক্বারীর "আল-মাশ্রাবুল-ওয়াদী ফী মায্হাবিল-মাহ্দী"।

৭. মার'য়ী বিন্ ইউসুফের "ফাওয়াইদুল-ফিক্র ফী যুহুরিল-মুন্তাযার”।

৮. ইমাম শাওকানীর "আত-তাওযীহ্ ফী তাওয়াতুরি মা জাআ ফিল-মাদিল-মুন্তাযারি ওয়াদ্দাজ্জালি ওয়াল

মাসীহ্”।

৯. মুহাম্মাদ্ বিন্ ইস্মা'ঈল্ আল-ইয়ামানীর "আহাদীসুল-মাহ্দী"।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url