মীমাংসা - ইসলামে মীমাংসার এক মহিমান্বিত গুণ
মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহমান সকলের কর্তব্য পরস্পরে মিলেমিশে ও ভাই-ভাই হয়ে চলার চেষ্টা করা। ঝগড়া-বিবাদ থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা। কিন্তু এ সত্ত্বেও দু'জনের মধ্যে কখনো বিবাদ সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়। দুই অন্তরঙ্গ বন্ধুর মধ্যে ও বিবাদ সৃষ্টি হয়। স্বামী-স্ত্রীর নিরাবরণ সম্পর্ককেও তা স্পর্শ করে। মা আর সন্তানের নাড়ির বন্ধনও একে সম্পূর্ণ এড়াতে পারে না ।
কিন্তু তা অমীমাংসিতভাবে চলতে থাকা, সহিংসতা ও হানাহানির রূপ ধারণ করা বিরাট ক্ষতিকর। এই ক্ষতি শুধু বিবাদরতদেরই নয়, গোটা সমাজের। এতে সমাজের উন্নতি-অগ্রগতি ব্যাহত হয়। সামাজিক শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এবং সামষ্টিক প্রভাব প্রতিপত্তি লোপ পায় ৷
তাই দুজনের মধ্যে কখনো ঝগড়া
হলে উভয়ের কর্তব্য, অতি দ্রুত এর উপর শান্তির শীতল
প্রলেপ দিয়ে দেওয়া। আপোস-নিষ্পত্তি করে আবার মিলেমিশে চলতে শুরু করা। এ আল্লাহ
তাআলার অত্যন্ত পছন্দ৷
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা
ইরশাদ করেন,
و إن امرأة خافت من بغلها نشورا أو إغراضا فلا جناح ... عليهما أن يصلحا بينهما صلحا و الصلح خير
(তরজমা) কোনো নারী যদি তার
স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার বা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে
তাদের জন্য এতে কোনো অসুবিধা নেই যে, তারা পারস্পরিক
সম্মতিক্রমে কোনো রকমের আপোস-নিষ্পত্তি করবে। আর আপোস-নিষ্পত্তিই উত্তম।... -সূরা
নিসা (৪) : ১২৮
পক্ষান্তরে তা অমীমাংসিতরূপে
অব্যাহত থাকা কিংবা সহিংসতা ও হানাহানির রূপ ধারণ করা তাঁর খুবই অপছন্দ। এক হাদীসে
ইরশাদ হয়েছে,
تفتح أبواب الجنة يوم الإثنين، ويوم الخميس، فيغفر لكل عبد لا يشرك بالله شيئا، إلا رجلا كانت بينه وبين أخيه شخناء، فيقال : أنظروا هذين حتى يصطلحا، أنظروا هذين حتى يصطلحا، أنظروا هذين حتى يصطلحا
সোমবার ও বৃহস্পতিবার
জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে না। এমন
সকলকে মাফ করে দেওয়া হয়। তবে ঐ দুই ব্যক্তি ছাড়া যারা পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করে।
তাদের সম্পর্কে বলা হয়, 'পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত
এদের বিষয়টি মওকুফ রাখ' (তিন বার)। -সহীহ মুসলিম,
হাদীস ২৫৬৫
আপোসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে
সহায়ক হল উভয়ের বা অন্তত কোনো একজনের একটু সংযত হওয়া। খানিকটা সহিষ্ণুতা
অবলম্বন করা। প্রয়োজনে নিজেরদাবি বা অবস্থান থেকে কিছুটা নেমে আসা। এছাড়া আপোস
সম্ভব হয় না। আর এটা বাহ্যিক দৃষ্টিতে নিচু মনে হলেও পরিণামে মহৎ।
একটু বিনয় বা সহিষ্ণুতা
কিংবা অবস্থান থেকে নেমে আসার কারণে যদি কোনো বিবাদের আপোস-নিষ্পত্তি হয়ে যায়, তবে তা উত্তম বৈ কি? এজন্য বিনয় ও সহিষ্ণুতার
উপস্থিতি সবক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিবাদ-মীমাংসার ক্ষেত্রে অতি প্রাসঙ্গিক।
এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে
.ومن ترك المراء وهو محق بني له في وسطها (الجنة... যে ব্যক্তি ন্যায়ের উপর থাকা
সত্ত্বেও বিবাদ পরিহার করে, তার জন্য জান্নাতের মাঝে একটি
ঘর তৈরি করা হবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৯৩
যে ন্যায়ের উপর থাকে তার
অবশ্যই অভিযোগ আপত্তির অধিকার আছে। কিন্তু কখনো পরিস্থিতি এমন হয় যে, সেটা করলে বিবাদ সৃষ্টি বা ঘটনা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণের আশংকা হয়। এ
ক্ষেত্রে তা পরিহার করা নিঃসন্দেহে ব্যক্তির বিনয়, সহিষ্ণুতা
ও কল্যাণকামিতারই পরিচায়ক।
এখানে হাসান রা.-এর ঘটনা
বিশেষভাবে স্মরণীয়। আলী রা.-এর মৃত্যুর পর কূফাবাসীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ তাঁর
হাতে বাইআত হয়। ওদিকে শামবাসীরা মুআবিয়া রা.-এর হাতে বাইআত হয়। হাসান রা.-এর
শামবাসীদের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি-সামর্থ্য পুরোপুরিইছিল। এ সত্ত্বেও মাস খানেক
পরই তিনি মুআবিয়া রা. এর সঙ্গে আপোস করে নেন এবং খেলাফত থেকে পদত্যাগ করে তাঁর হাতে
বাইআত হয়ে যান।
এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল
নিষ্পাপ-রক্তের নিরাপত্তা ও পারস্পরিক সম্প্রীতির সুরক্ষা। তিনি যথার্থই উপলব্ধি
করেছিলেন যে, আপোস না করলে কূফাবাসী ও
শামবাসীদের মধ্যে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী, যার পরিণতি অতি
ভয়াবহ। সুতরাং তাঁর আপোস-পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক, প্রশংসনীয় ও যুগান্তকারী। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বহু আগেই এর সুসংবাদ দিয়েছিলেন।
আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত
একদিন আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে (বসে আছেন) আর তাঁর পাশে হাসান ইবনে আলী। তিনি একবার
লোকদের দিকে তাকাচ্ছেন আর একবার তার দিকে তাকাচ্ছেন আর বলছেন, ‘আমার এই ছেলে সাইয়িদ। আল্লাহ তাআলা হয়তো তার মাধ্যমে মুসলিমদের দুটি
দলের মধ্যে মীমাংসা করবেন।'
সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭০৪ কিন্তু কখনো কখনো বিবাদ এত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যে, এর আপোস-নিষ্পত্তি বিবাদরতদের সক্ষমতার বাইরে চলে যায়। তাদের নিজেদের
পক্ষে আর আপোস করা সম্ভব হয় না। বরং পরস্পরের নামই শুনতে পারে না।
চেহারা দেখলেই গা জ্বলে।
এক্ষেত্রে সমাজের অন্য লোকদের বিশেষ করেকর্তাব্যক্তিদের অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে
এবং তাদের মধ্যে মীমাংসার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।এ যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রে
জরুরি।
আর মুসলমানদের পরস্পরে তো
আরো জরুরি। কারণ মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক মানব-সম্পর্কের চেয়ে গভীর ও
হৃদ্যতাপূর্ণ। সমস্ত মুসলিম পরস্পর ভাই-ভাই। আর ভাই মাত্রই ভাইয়ের কল্যাণকামনা
করে। আর বিবাদরতদের কল্যাণকামনা তো উল্লসিত হওয়া বা তাদেরকে উসকে দেওয়া অথবা
অন্যায় সাহায্য করা কিংবা নিরুদ্বেগ ও নিরুদ্যোগ থাকা নয়, বরং ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন হওয়া, সহানুভূতি ও
সহমর্মিতা প্রকাশ করা এবং আল্লাহ তাআলার কাছে মীমাংসার দুআ করা সর্বোপরি তাদের
মধ্যে মীমাংসার আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
দেখুন কুরআনে কারীম
ভ্রাতৃত্বের এই স্বভাবজাত প্রেরণাকে কী বলিষ্ঠভাবে উল্লেখ করেছে!
و ان طايفتن من المؤمنين اقتتلوا فأصلحوا بينهما فإن بعث إخذيهما على الأخرى فقاتلوا التي تبغى حتى تفيء إلى أمر الله فإن فاءت فاضلحوا بينهما بالعدل و اقسطوا إن الله يحب المقسطين، إنما المؤمنون إخوة فأصلحوا بين أخويكم و اتقوا الله لعلكم ترحمون
'মুমিনদের দুটি দল দ্বন্দ্বে
লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর তাদের একটি দল যদি অন্য দলের উপর
বাড়াবাড়ি করে, তবে যে দলবাড়াবাড়ি করছে তাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে।
সুতরাং যদি ফিরে আসে তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মীমাংসা করে দাও এবং
ইনসাফ কর। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।
মুমিনগণ পরস্পর ভাই-ভাই।
সুতরাং তোমরা তোমাদের দু' ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও,
আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা
রহমতপ্রাপ্ত হও।' -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ৯-১০ এখানে দুজন
মুমিন দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে অন্যদেরকে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়ার আদেশ করা
হয়েছে।
একই সাথে আল্লাহকে ভয় করার
কথাও বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য সম্ভবত এই যে, সামাজিক
সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখতে মীমাংসার গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং বিবাদরতদের মধ্যে
মীমাংসার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ত্রুটি বা অবহেলা কিংবা যুলুম করা যাবে না। বরং
সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
প্রয়োজনে ন্যায়সঙ্গতভাবে
চাপ সৃষ্টি করতেও কোনো অসুবিধা নেই। মীমাংসার সদিচ্ছা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা
অব্যাহত থাকলে আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই সঙ্গী হবে; তিনি মীমাংসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেবেন।
আয়াতটির শেষাংশ (যাতে তোমরা
রহমতপ্রাপ্ত হও) থেকেও এটা উপলব্ধি করা যায়। পারস্পরিক বিবাদ আল্লাহর পক্ষ থেকে
এক ধরনের আযাব। আর এর মীমাংসা হল রহমত, যার
প্রতিশ্রুতি এখানে করা হয়েছে। আরঅন্যত্র তো স্পষ্টই বলা হয়েছে,
و إن خفتم شقاق بينهما فابعثوا حكما من أهله و حكما من أهلها إن يريدا إصلاحا يوفق الله بينهما إن الله كان عليها
'তোমরা যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে
কলহ সৃষ্টির আশংকা কর, তাহলে পুরুষের পরিবার হতে একজন
সালিস ও নারীর পরিবার হতে একজন সালিস পাঠিয়ে দাও। তারা যদি মীমাংসা করতে চায়,
তবে আল্লাহ উভয়ের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ
সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।' -সূরা
নিসা (৪) ৩৫ এ প্রতিশ্রুতি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার কলহ সম্পর্কে হলেও অন্য
ক্ষেত্রেও আশাপ্রদ।
মীমাংসার গুরুত্ব উপলব্ধির আরো বিভিন্ন দিক আছে। একটি দিক এ-ও যে, বিবাদের কারণে শুধু বিবাদরতরাই নয়, গোটা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা আছে এবং তা সমাজের জন্য সুদূরপ্রসারী ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাই অন্তত সমাজকল্যাণের স্বার্থে বিবাদরতদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এ উপলব্ধি মুসলমানদের জন্য আরো সহজ।
কারণ মুসলমানদের পারস্পরিক
সম্পর্ক সামাজিক সম্পর্ক অপেক্ষা গভীর ও অন্তরঙ্গ। সকল মুসলমান মিলে এক দেহ। আর
দুজন মুসলমানের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হওয়া বস্তুত ওই দেহের দুটো অঙ্গ রোগাক্রান্ত
হওয়া, যার চিকিৎসা না করলে, মীমাংসার
স্নিগ্ধ দাওয়া সেবন নাকরলে গোটা দেহের শক্তি-সৌন্দর্য কমে যেতে পারে।
সুতরাং নিজ দেহের
শক্তি-সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখতেই বিবাদরতদের সমঝোতায় আনার চেষ্টা করা কর্তব্য।
মুসলমানদের পরস্পরের এ সম্পর্ক হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
سلمون كرجل واحد، إن اشتكى عينه، اشتكى كله، وإن اشتكى، راشه اشتگی کله
‘মুসলিম সকলে মিলে একটি সত্তার
মত, যার চোখে ব্যথা হলে গোটা দেহের কষ্ট হয়। মাথা ব্যথা
হলে গোটা দেহের ব্যথা হয়।' -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮৬
মীমাংসা হল দু'জনের মধ্যকার মনান্তর দূর করা, বিবাদরতদের
মধ্যে শান্তি স্থাপন করা। কত পরিবার ভাঙার উপক্রম ছিল। কিন্তু মীমাংসাকারী তার
মূল্যবান উপদেশ দ্বারা তাকে অটুট রেখেছে। কত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যেত দুই বন্ধুর
মধ্যে, দুই আত্মীয়ের মধ্যে, দুই
প্রতিবেশীর মধ্যে...যদি না মীমাংসাকারী তাতে জোড়া লাগিয়ে দিত।
কত অর্থ-রক্ত নিরাপদ ও
সংরক্ষিত থেকেছে কেবল মীমাংসাকারীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টায়। সুতরাং
ঐ ব্যক্তি বড় সৌভাগ্যবান যে বিবাদরতদের মর্মবেদনা উপলব্ধি করে এবং তাদের মধ্যে
মীমাংসা করে দেয়। নবীজী বলেন,
ألا أخبركم بأفضل من درجة الصيام والصلاة والصدقة، قالوا: بلى، قال: صلاح ذات البين، فإن فساد ذات البين هي.الحالقة
'আমি কি তোমাদেরকে রোযা, নামায ও সদকার মর্তবা থেকেও উত্তম বিষয় সম্পর্কে বলব না? সাহাবীগণ আরয করলেন, আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, 'বিবাদরতদের মধ্যে মীমাংসা করা। আর জেনে রেখ, পরস্পর বিবাদই মানুষের দ্বীন মুড়িয়ে দেয়'। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫০৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯১৯
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা
ইরশাদ করেন, (তরজমা) তাদের বহু গোপন
পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে যে সদকা বা সৎকাজ কিংবা মানুষের মধ্যে মীমাংসার
আদেশ করে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তা করবে আমি তাকে মহা প্রতিদান দেব।
-সূরা নিসা (৪) ১১৪
মীমাংসার আদেশকারীর মহা প্রতিদান হলো
মীমাংসাকারীর কী প্রতিদান
হবে তা সহজেই অনুমেয়। বিবাদরতদের প্রতি সহানুভূতি ও মীমাংসার ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই
ছিল সৎ লোকদের গুণ ও বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম আদর্শ।
কলহ-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ আর খুনখারাবি ছিল আরবদের স্বভাবজাত বিষয়। তুচ্ছ থেকে
তুচ্ছ বিষয় বছর, চলমান হত এবং বংশপরম্পরায় সংরক্ষিতও
নিয়ে ভয়াবহ সহিংসতা ও
হানাহানি চলত বছরের পরহত। সেই জাতিকে তিনি ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব, শান্তি ও সম্প্রীতির যে উচ্চস্তরে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা বিস্ময়কর ও
নজিরবিহীন। এ সম্ভব হয়েছে কেবল তাঁর আলোকিত তালীম আর সহৃদয় ও প্রজ্ঞাপূর্ণ
তারবিয়াতের কারণেই।
কলহ-বিবাদের খবর শুনলে তিনি
গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হতেন, মীমাংসার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন।
একবার আমর ইবনে আউফ গোত্রের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। খবর পৌঁছলে তিনি (জনৈক সাহাবীকে)
বললেন, 'আমাকে সেখানে নিয়ে চল, আমি
তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেব।' -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৩
আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাদরাদ
রা.-এর কাছে কা'ব ইবনে মালেক রা.-এর কিছু পাওনা
ছিল। পরিশোধ তলব করলে মসজিদে উভয়ের আওয়াজ উঁচু হয়ে যায়, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কামরা থেকে শোনেন। কামরার
পর্দা উঠিয়ে তিনি কা'ব রা. কে অর্ধেক ঋণ মাফ করে দিতে
ইশারা করেন। তিনি রাজি হলে ঋণগ্রহীতাকে বাকি অর্ধেক পরিশোধ করার নির্দেশ দেন।
সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭১০ এ দুটো ঘটনার রূপ ভিন্ন হলেও এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, মীমাংসার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ বা অনুরোধ করতে হয়নি, স্বেচ্ছায় মীমাংসা করে দিয়েছেন। আসলে তিনি তো ছিলেন আদ্যোপান্ত বিশ্ববাসীর জন্য রহমত, তাদের সর্বাঙ্গীণকল্যাণকামনায় ব্যাকুল। সেই নবী কি উম্মতের বিবাদকালে নিরুদ্বেগ ও নিরুদ্যোগ থাকতে পারেন? এই রহমত ও কল্যাণকামনা প্রতিটি মানুষের মধ্যে জাগ্রত হোক। প্রতিটি মানুষ হোক ঈমানী ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url