শাবান মাসের ফজিলত - শাবান মাসের রোজা

প্রিয় পাঠক, আপনি কি শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন, তাহলে এই আর্টিকেল আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলটিতে শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাই শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে  শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

পেজ সূচিপত্র - শাবান মাসের ফজিলত

শাবান নামের অর্থ কি

শাবান মাসের ফজিলত

শাবান মাসের দোয়া

শাবান মাসে রোজা কয়টি

শাবান মাসে রোজা রাখার নিয়ম

শাবান মাসে গুরুত্ব  ও তাৎপর্য 

শাবান মাসের ইবাদত

শাবান নামের অর্থ কি

শাবান শা'ব শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এর অর্থ হলো বের হওয়াশাখা-প্রশাখা হওয়াপ্রকাশ হওয়াবিদীর্ণ হওয়া। যেহেতু এ মাসে বিপুল কল্যাণ প্রকাশিত হয়মানুষের রিজিক উৎপাদন ও বণ্টিত হয় এবং তকদিরের ফয়সালাগুলোও বণ্টন করে দেওয়া হয়তাই এ মাসের নাম শাবান রাখা হয়েছে। হিজরি ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস শাবান। আরবি নামের উৎপত্তি অবশ্য ভয়ঙ্কর ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে। বলা হয়ে থাকেনবী (সাঃ) এর ৫ম পূর্বপুরুষ এই নামটি ব্যবহার করতেন।


এই বিষয়টি তৎকালীন পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতিফলন ঘটায়। যেমন। উদাহরনস্বরূপরমজান মাসের নামটি এসেছে 'রামদাশব্দ থেকে যার অর্থ 'তীব্র তাপ'। গ্রীষ্মের তীব্র গরমের কারণে রমজান বা রমজান নামকরণ করা হয়েছে।শাবান সুবিধা সৃষ্টির ব্যাপারেও ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। শাবান শব্দটি আরবি ধতুআবান থেকে এসেছে। এর অর্থ ভাগ করা বা আলাদা করা। এই পংক্তির অর্থ শাবানের নামে আরোপ করা যেতে পারে।

শাবান মাসের ফজিলত     

শাবান মাস সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু জানার রয়েছে। শাবান মাস টি হলো নফল রোজার জন্য শ্রেষ্ঠ একটি মাস, এই শাবান মাসে নবী (সাঃ) এই মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন, সহি বুখারিতে  আসছেন আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলেছেন আমি নবী (সাঃ) কে গোটা মাসে  ৩০ দিন রোজা রেখেছেন এই রমজান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে দেখিনি, অর্থাৎ গোটা মাস রোজা রেখেছেন রমজান মাসে, আর শাবানের চাইতে বেশি নফল রোজা  অন্য কোন মাসে রাখতে দেখিনাই। 

নবী সাঃ শাবান মাসে  নফল সিয়াম রাখার ২ টি কারন  উল্লেখ করেছেন, সেই ২ টি কারন হলো


নবীজি সাঃ বলেন শাবান মাসটি এমন একটি মাস যে মাসে মানুষ গাফেল থাকে উদাসীন থাকে অবহেলা করে কাটিয়ে দেয়। গুরুত্ব দেয় না শাবান মাসে।  কারণ সাবানের আগের মাসটি হলো রজব মাস যেটি সম্মানিত চারটি মাসের একটি হওয়ার কারণে ওই মাসটিতে মানুষ   কেয়ার নেয় আমলের ব্যাপারে ইবাদতের ব্যাপারে। আবার সাবানের পরবর্তী মাসটি রমজান মাস এই মাসটি হলো সকল মাসের সেরা মাস এই মাসে সব মুমিন কম বেসি  নেক আমলের বেপারে  যত্নশীল থাকে  নবীজি সাঃ বলছেন  শাবান মাসটি মাঝখানে পড়ে গেছে 


অর্থাৎ পরের মাসটি  শ্রেষ্ঠ মাস রমজান আর আগের মাসটি সম্মানিত চারটি মাসের একটি রজক আর এই মাসটি তে  মানুষ এক ধরনের অবহেলাই কাটিয়ে দেয়, এইজন্য নবী সাঃ  বলেন আমি সেজন্য  শাবান মাসে নফল রোজা বেশি করে রাখি। কারণ যে আমলটি কেউ করে না যার ব্যাপারে সবাই অবহেলা করে ওই আমলটি করার গুরুত্ব একটু বেশি।


একজন মানুষ যাকে সবাই সালাম দেয় হুজুর, চেয়ারম্যান, মেম্বার, এদের দেখলে সবাই সালাম দেয়, এই লোকদের সালাম দিলে  সওয়াব হবে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু একজন লোক গরিব মানুষ তাকে দেখলে কেউ সালাম দেয় না এই লোকটিকে যদি আপনি সালাম দেন,  এই নিয়তে এই উদ্দেশ্যে যে এই লোকটিকে কেউ সালাম দেয় না এই লোকটিকে আমি সালাম দিব আমি সালাম  প্রতিষ্ঠিত করব এইখানে সালাতকে আমি প্রচারিত করব  তাহলে ইনশাল্লাহ আপনি অতিরিক্ত সওয়াব পাবেন ।


ঠিক তেমনিভাবে রজবের রমজানে সবাই নেক আমল করে আলহামদুলিল্লাহ সেই দিক থেকে অই শ্রেষ্ঠ  সম্মানিত মর্যাদা  মাস সে বিভিন্ন জিনিস। ওইগুলোর সাথে কোন তুলনা নাই কিন্তু এই মাস টিতে  সবাই গাফেল থাকে সেই জন্য এই মাসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখার চেষ্টা করতেন কারণ সবাই যখন গাফিলতি করে অবহেলা করে তখন তিনি গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহতালার নৈকট অর্জন করার চেষ্টা করতেন।


২. হজরত উসামা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে শাবান মাসে বেশি রোজা রাখার কারন জিজ্ঞাসা করলাম । রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন মানুষরা রজব ও রমজান এই দুই মাসের গুরুত্ব বেশি দেয় এবং রোজা রাখে কিন্তু মধ্যবর্তী মাসটিকে অপেক্ষা করে চলে অথচ এই মাসেই বান্দার আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়। আর আমার কামনা হলো আমি রোজা থাকা অবস্থায় আমার আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করি। আর এই কারনেই আমি শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখি। ( আবু দাউদ)

শাবান মাসের দোয়া

১.রজব ও শাবান মাসব্যাপী রাসুল (সা.) বেশি বেশি বরকতময় দোয়া করতেন। রমজান মাসে ইবাদত করার সুযোগ ভিক্ষা চাইতেন। রাসুল (সা.) যে দোয়া বেশি বেশি পড়তেন।


সেই দোয়াটি হলো-

اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান


অর্থ: হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫৯)


আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমরা যেন শাবান ও রমজানের সর্বোত্তম ইবাদত করতে পারি। এবং দুনিয়া-আখিরাতে আমাদের সব রকম সাফল্য দিনআমিন।


২.রজব মাস হলো বীজ রোপনের মাস। আর শাবান মাস হলো ওই বীজে সেচ দেয়ার মাস। তারপর রমজান মাস হলো বীজ রোপন ও সেচ দেয়ার পর পরিপূর্ণ ফসল ওঠানোর মাস।


প্রিয় নবি (সা.) বরকতময় মাস রমজান পেতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি একাধিক দোয়া করতেন। তাহলো-

- اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ


অর্থ: হে আল্লাহ আপনি আমাদের জন্য শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। অর্থাৎ রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করুন।

শাবান মাসের রোজা কয়টি

আপনারা অবশ্যই শাবান মাসের রোজা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য, কেনো না আজকের আর্টিকেলে শাবান মাসের রোজার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

শাবান মাসের রোজা ৩ টি । কিন্তু ৩ টির বেশি রোজা রাখতে  পারবেন। যত বেশি নফল এবাদাত করবেন তত বেশি সাওয়াব পাবেন। মুহাম্মদ (সা.) প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তিনদিন তিনটি নফল রোজা রাখতেন এবং উৎসাহিত করেছেন।

শাবান মাসে রোজা রাখার নিয়ম

শাবানের রোজার নিয়মে কয়টি শাবানের রোজা অন্তর্ভুক্ত? একজন মুমিন হিসাবে, আপনার উচিত সাপ্তাহিক ও মাসিক সুন্নাত আমলের রোজা পালনের মাধ্যমে শাবান মাস জুড়ে সহজ সুন্নত অনুশীলন করা। বেশি বেশি দোয়া করুন রমজান পেতে । সুন্নাতি কর্মকর্তা হিসেবে এই আশায় রোজা রাখতে চাইলে প্রিয় নবীর (সা.) নির্দেশ মোতাবেক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হতে পারে। সেই হিসাবে, ১০ -১১ দিন রোজা রাখার সুযোগ রয়েছে।


তাহলো সাপ্তাহিক রোজা ৭ দিন

মার্চ : ১৭(বৃহস্পতিবার), ২১ (সোমবার), ২৪ (বৃহস্পতিবার)। শাবান হল শবে বরাত পালনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রোজা। এছাড়াও আমরা শাবান মাসের ৩ দিন রোজা রাখতে পারি।

শাবান মাসে গুরুত্ব  ও তাৎপর্য 

শাবান মাসে শবে বরাত নামে বিশেষ একটি রাত রয়েছে, যে রাতে বান্দার সারা বছরের আমল আল্লাহর  দরবারে পেশ করা হয় এবং আগামী এক বছরের জন্য বান্দার হায়াত মউত রিজিক দৌলত ইত্যাদির নতুন বেবস্থা দেওয়া হয়। এই  কারণে শাবান মাসকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।  হাদিস শরীফে নবী করিম (সা.) বলেছেন যখন শাবান মাসে মধ্য রাত ইবাদাত করে, আল্লাহ তায়ালা বান্দাহদের দিকে মনোযোগ দেন এবং মুমিন বান্দাদের ক্ষমা করে দেন, আর হিংসা কারীদের তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেন যতক্ষণ না তারা তাওবা করে সুপথে ফিরে আসে। 


হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির মানুষদের প্রতি দৃষ্টি দেন এবং সবাইকে ক্ষমা করে দেন, তবে তারা ব্যতীত যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে এবং অপরকে ক্ষতি সাধনের বাসনা করে।(ইবনে হিব্বান)।

শাবান মাসের ইবাদত

হযরত মহাম্মদ (সা.) সাবান মাসে সর্বাধিক নফল রোজা রাখতেন। তিনি অন্য কোনও মাসে এই পরিমাণ রোজা পর্যবেক্ষণ করেননি। আয়েশা (রা.) দ্বারা বর্ণিত, তিনি বলেছিলেন, "নবী (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি অন্য কোন মাসে রোজা রাখতেন না। তিনি পুরো সাবান মাসে রোজা করতেন এবং বলেছিলেন," আপনার  যতটা সামর্থ্য ততটুকু রোজা করুন কিন্তু ইবাদাত  বন্ধ করবেন না।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক উপরে সকল তথ্য কুরআন হাদিসের আলকে বর্ণিত হয়েছে। যদি আপনার কাছে ভালো লাগে, তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ের করতে পারেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url