আজকের সেহরির শেষ সময় ২০২৩
সেহরি বা সেহেরি বা সাহরী (আরবি: سحور, প্রতিবর্ণী. সুহুর, অনুবাদ 'ঊষার পূর্বের খাবার'; সেহেরী হিসেবেও উচ্চারিত হয়ে থাকে) হল মুসলিমদের দ্বারা গৃহীত ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী নাশতা খাবার, যা রমযান মাসে অথবা যে কোন দিন সাওম পালনের উদ্দেশ্যে ফজরের নামাজ বা ঊষার পূর্বে গ্রহণ করা হয়।
এটি ইফতারের সমমানের একটি খাবার, যা সূর্যাস্তের পর রোজা ভাঙার জন্য খাওয়া হয। রোজা বা সাওম পালনের সময় সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার এই তিন বেলার প্রচলিত খাবারকে সাহরী ও ইফতার এই দুইসময়ের খাবারে সীমাবদ্ধ করে নেয়া হয়। পাশাপাশি এ সময়ে ইফতারের পর রাতেও খাবার গ্রহণ করা যায়। বুখারী শরীফের হাদিসে আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণিত আছে নবী বলেছেন “তোমরা সেহরী গ্রহণ কর কেননা তা বরকতপূর্ণ খাবার।”
সেহরির দোয়া
نَوَيْتُ اَنْ
اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ
فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন্ শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস্ সামিউল
আলিম।
অর্থ: হে
আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র মাহে রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম।
অতএব তুমি আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
সেহেরির ফজিলত
সেহেরি হল রোজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম অংশ। সাহরি মানে শেষ রাতের খাবার।
সাহরি হল রোজা রাখার জন্য ইসলামিক পরিভাষায় সুবহে সাদিকের পূর্বে গৃহীত খাবার।
সাহরি শব্দটি স্থানীয়ভাবে 'সেহরি' বা 'সেহরি' হিসাবে উচ্চারিত হয়।
সাহরি একটি
বরকতময় ও পুণ্যময় সুন্নত। তাকওয়া অর্জন ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য এর গুরুত্ব
অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সাহরি খাও, কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে। (বুখারি, হাদিস: ১৮০১)। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেছেন, "আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাবের রোজার মধ্যে পার্থক্য হল সাহরি খাওয়া এবং না
খাওয়া।" (মুসলিম, আলফিয়াত আল-হাদিস, পৃষ্ঠা: ১৩১)।
মোল্লা আলী
ক্বারী (রহঃ) বলেন, 'সাহরীর সময়
মধ্যরাত থেকে শুরু হয়।' (মিরকাত, মিশকাত)। ইমাম জামাখশারী (রহঃ) ও ফকীহ আবুল লাইছ
চামারকান্দী (রহঃ) বলেন, সাহরীর সময় রাতের
শেষ তৃতীয়াংশ। দেরিতে সাহরি খাওয়া সুন্নত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা
যাবে না,
যার আগে সাহরীর নিরাপদ সময়ের মধ্যে পান করতে হবে। রসূলে
করীম (সাঃ) বলেছেন, সাহরি খাও; যদি তা জল পান করাও হয়।' অন্য বর্ণনায় এসেছে, 'তোমরা সাহরি খাও; এমনকি যদি এক ব্যক্তি খাদ্য হয়.' (মুসলিম)। অন্য কথায়, সাহরীর সুন্নত যে কোন প্রকার এবং যে কোন পরিমাণ খাবার বা পানীয় দ্বারা পালন
করা হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে সাহরি বাদ দেওয়া সুন্নাতের পরিপন্থী।
সাহরি রোজা
রাখার জন্য সহায়ক, সাহরির সময় ঘুম
থেকে ওঠা রোজার প্রতি আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। বিশ্রামের ঘুম এড়িয়ে সাহরির সময়
বিছানা ছেড়ে যাওয়া সত্যিই ইবাদত ও আনুগত্যের কাজ। এতে রাতের শেষভাগে জেগে ওঠার
অভ্যাস গড়ে ওঠে এবং তাহাজ্জুত নামাজ পড়ার সৌভাগ্য হয়। সাহরীর সময় ঘুম থেকে
ওঠাও এক ধরনের মুজাহাদা বা সাধনা।
এ সময়
আল্লাহর রহমত নাযিলের সময়, অগণিত
আল্লাহপ্রেমিকদের দোয়া ও দোয়া কবুলের সময়, আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। যারা এই বরকতময় সময়ে ঘুম থেকে উঠে
আল্লাহর মহান দরবারে প্রার্থনা করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসায় বরকত দান করেন। এ ধরনের
আল্লাহপ্রেমিকদের লক্ষ্য করে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘তারা (বিশ্বাসীরা) রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা
প্রার্থনা করে। (সূরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ১৮)।
সাহরির
বিভিন্ন শুভ ও উপকারী দিক রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: সুন্নাহ অনুসরণ করা, ইসলামের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা, ইবাদতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করা এবং তাকওয়া অর্জন করা।
স্বাস্থ্য এবং মনের আরও প্রফুল্লতা অর্জন, ক্ষুধার কারণে সৃষ্ট লালসা নিরাময় করা। সাহরীর সময় দোয়া কবুল হয়। সাহরীর
সময় বেশি বেশি যিকির-আসকার ও তাহাজ্জুত ও দোয়া মোনাজাত।
কখনো কখনো
যদি অবস্থা এমন হয় যে, ফরজ গোসল ও সাহরি
খাওয়ার পর্যাপ্ত সময় নেই; অযু করার পর বা
হাত-মুখ ধোয়ার পর প্রথমে সাহরি খেতে হবে। তারপর গোসল করে ফজরের নামাজ পড়ুন। কারণ, সাহরি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ওয়াজিব নয়, সুন্নত; আর নামাযের জন্য
পবিত্রতা ফরজ। অযু ফরজ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে হবে, অযথা বেশিক্ষণ নাপাক থাকা ঠিক নয়; আর রমজানে রোজা রেখে বেশিক্ষণ নাপাক থাকা বাঞ্ছনীয় নয়, এটা মাকরূহ।
সাহরি
খাওয়া সম্ভব না হলেও রমজানের ফরজ রোজা অবশ্যই পালন করতে হবে। নিজে সাহরি খাওয়ার
পাশাপাশি প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, অভাবী ও অসহায় মানুষকে সাহরিতে সাহায্য করতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি পেট ভরে
খায় এবং তৃপ্ত হয় এবং তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত কাটায়, সে মুমিন নয়।' (তিরমিযী)।
সাওম বা রোজা হল মদ্যপান ও সহবাস, অল্প খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা। তাই সাহরির সময় এত বেশি খাওয়া ঠিক নয়, যা রোজার উদ্দেশ্যকে নষ্ট করে দেয়। মনে রাখতে হবে রমজান যেন উৎসবে পরিণত না হয়। ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। খাবারের মান ও পরিমাণ পরীক্ষা করা ভালো। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করুন। শরীর ও মন ভালো থাকলে ইবাদাত হবে আনন্দময়।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url