অযু করার সঠিক নিয়ম - অযুর ফরজ ও সুন্নাত
প্রতিদিন আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় অযু করতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই অজুর সঠিক নিয়ম জানি না। এমনকি ওযুর নিয়ত,নিয়ম কানুন গুলো আমাদের ভালোভাবে জানা নাই। তাই আজকে আমরা সঠিক নিয়ম নিয়ত ও নিয়ম কানুন গুলো ভালোভাবে জেনে নেব। একটা মানুষের পবিত্রতা অর্জনের জন্য অযুর প্রয়োজন হয়। এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য অজু করতে হয়। অজুর সঠিক নিয়ম নিয়ত নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
অযুর নিয়ত
নাওয়াইতু আন আতাওয়াজ্জা লিরাফয়িল হাদাসি ওয়া ইস্তিবাহাতা লিছছালাতি ওয়া তাক্বারুরুবান ইলাল্লাহি তায়ালা।
- এভাবে নিয়ত করার পর ডান ও বাম হাতের কবজি পর্যন্ত যথাক্রমে তিনবার ধুতে হবে।
- তারপর গড়গড়ার সাথে তিনবার কুলি করতে হবে।
- এরপর ডান হাত দ্বারা নাকে পানি দিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে ভিতরের অংশ পর্যন্ত তিনবার পানি পৌঁছাতে হবে।
- অত:পর সম্পুর্ণ মুখ মণ্ডল অর্থাৎ কপালের উপরিভাগের চুল উঠার স্থান থেকে থুতনীর নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অপর কানের লতি পর্যন্ত ভাল ভাবে তিনবার ধুতে হবে।
লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মুখ মণ্ডলের একচুল পরিমাণ অংশও যেন শুকনো না থাকে।
- অতঃপর দুই হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। এরপর উভয় হাতের কনিষ্ঠা, অনামিকা ও মধ্যমা এ তিনটি আঙুল কানে ঢুকিয়ে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে কানের পৃষ্টদেশ মাসেহ করতে হবে এবং কনিষ্ঠা অনামিকা ও মধ্যমা এ তিনটি আঙুলের পৃষ্ঠদেশ দিয়ে গরদান মাসেহ করতে হবে।
- এরপর ডান পায়ের প্রথমে তিনবার টাখনুসহ (ছোট গিরাসহ) ধুতে হবে এরপর বাম পা’ও তিনবার ধুতে হবে।
অযুর ৪টি ফরজ
০১. সম্পূর্ণ মুখ মণ্ডল ভালভাবে ধোয়া। অর্থাৎ কপালের উপরিভাগের চুল গজানোর স্থান থেকে থুতনীর নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ভালভাবে ধোয়া।
০২. কনুইসহ দুহাত ভালভাবে ধোয়া।
০৩. মাথার চার ভাগের এক ভাগ, মাসেহ করা।
০৪. দুপায়ের ছোট গিরাসহ ধোয়া
অযুর সুন্নাতসমূহ
০১. নিয়ত করা।
০২. বিসমিল্লাহ বলে ওযু আরম্ভ করা।
০৩. হাতের আঙুলগুলো খিলাল করা।
০৪. উভয় হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া।
০৫. মিসওয়াক করা।
০৬. তিনবার কুলি করা।
০৭. তিনবার নাকে পানি দেয়া।
০৮. সম্পূর্ণ মুখ-মণ্ডল তিনবার ধোয়া।
০৯. উভয় হাত কনুইসহ তিনবার ধোয়া।
১০. সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
১১. উভয় কান একবার মাসেহ করা।
১২. টাখনু পর্যন্ত উভয় পা তিনবার ধোয়া।
১৩. পায়ের আঙুলগুলো খিলাল করা।
১৪. এক অঙ্গ শুকানোর আগেই অন্য অঙ্গ ধোয়া।
১৫. ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওযুর কাজগুলো সম্পুর্ণ করা।
অযু ভঙ্গের কারণসমূহ
০১. শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত, পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে।
০২. যে কোন অবস্থায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে।
০৩. প্রস্রাব বা পায়খানার রাস্তা হতে কোন কিছু বের হলে।
০৪. মুখ ভরে বমি, রক্ত পিন্ড, খাদ্য বা পানি বের হলে। (অল্প অল্প করে কয়েকবার বের হলেও ওযু ভেঙে যাবে)
০৫. মুখ থেকে রক্ত বের হলে তার পরিমাণ যদি থুথুর সমান বা বেশি হয়, তাহলে ওযু ভাঙবে।
০৬. জ্ঞান হারালে।
০৭. পাগল বা মাতাল হলে।
০৮. নামাযের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসলে।
০৯. পায়ুপথ দিয়ে ক্রিমি বের হলে।
অযুর মাকরুহসমূহ
০১. ওযু শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ না বলা।
০২. নাপাক স্থানে বসে ওযু করা।
০৩. পায়খানা প্রস্রাবের বেগ নিয়ে ওযু করা।
০৪. নিয়ত না করা।
০৫. কুলি করার সময় গড়গড়া না করা।
০৬. কুলি করা ও নাকে পানি বিনা কারণে বাম হাত দিয়ে দেয়া।
০৭. কোন অঙ্গ তিনবারের কম বা বেশি ধোয়া।
০৮. একাধিকবার মাথা মাসেহ করা।
০৯. ওযু করার পর মেসওয়াক করা।
১০.বেশি পানি খরচ করা।
১১. ওযুর কোন সুন্নাত পরিত্যাগ করা।
১২. নিয়ম অনুযায়ী ওযু না করা।
১৩. ওযু করার সময় কথা বার্তা বলা।
১৪. ওযুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোতে এমন জোরে পানি নিক্ষেপ করা যাতে নিজের বা অন্যের শরীরে লাগে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url