বিবাহ হচ্ছে একটি আত্মিক,পারিবারিক,সামাজিক বন্ধন। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রী বৈধ উপায় তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করে থাকে। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বিবাহকে হালাল এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে হারাম করেছেন।
বিয়ে একটি সুন্নতি আমল।
সময় হলে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফরজ কাজ। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আল কোরআনে বিয়ে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রিজিকের পেরেশানি না করে বিবাহের জন্য উৎসাহিত করেছেন। যারা নিজেকে পবিত্র রাখার আশায় এবং চরিত্র ধরে রাখার জন্য বিবাহ করতে যাচ্ছেন কিন্তু বিয়ে করতে পারছেন না;তারা দ্রুত বিয়ে করার জন্য নিয়মিত কয়েকটি আমল করতে পারে। রাসূল (সা.) বলেছেন "নারীর চারটি দিক দেখে বিয়ে করা যায়।যথা: বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য , অর্থ - সম্পদ, এবং দ্বীনদার। আপনারা দ্বীনদার নারী দেখে বিয়ে করে সফল হয়ে যান। (বুখারী ও মুসলিম)
আমল গুলো হলোঃ
১. اَسْتَغْفِرُ الله – اَسْتَغْفِرُ الله
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ।
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন। (মিশকাত)
২ উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।
নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন। (বুখারি)
ইস্তেগফারঃ
সব সময় বেশি বেশি ইস্তেকফার পড়া। কেননা যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করে সেই ব্যক্তি মুস্তাজেবুদ দাওয়াত হয়ে যাওয়া , যার দাওয়াত কখনো আল্লাহ ফেরত দেননা।
বিয়ে করা কি ফরজ
সময়মতো বিয়ে করা ফরজ কাজ। আবার সুন্নত ও মনে করতে পারেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বিয়ে করেছেন তাই সুন্নাত।আর ফরজ হবে যদি আপনার চাহিদা হয় তখন। যেকোনো ধরনের অপরাধ এর মধ্যে লিপ্ত হয়ার ইচ্ছা হচ্ছে বা লিপ্ত হয়েছে , তাহলে আপনার জন্য বিয়ে ফরজ হয়েছে।
মূলত এখানে বিয়ে করার নির্ভর করেছে ব্যক্তির উপর কারো জন্য বিয়ে করা ফরজ আবার কারো জন্য সুন্নাত।
যার মধ্যে স্ত্রীর নানা বিধি হোক বা অধিকার দেওয়ার যোগ্যতা আছে, সে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেন।
আলকামাহ (রহ:) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ)-এর সঙ্গে মিনায় পৌঁছলাম। এ সময় ‘উসমান (ইবনু ‘আফ্ফান) (রাঃ) এসে তাঁর সাথে মিলিত হলেন। তখন তিনি তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলেন। ‘উসমান (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমরা কি আপনার সঙ্গে এমন একটি যুবতী মেয়ের বিয়ে দিব না, যে হয়ত আপনার অতীত কিছু স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিবে? রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ) বললেন, আপনি যদি এ কথা বলেন তবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেনঃ “হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে দাম্পত্য জীবনের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম সে যেন বিবাহ করে। কারণ তা (বিবাহ) দৃষ্টিকে নিচু করে এবং লজ্জাস্থানকে সুরক্ষিত করে। আর যে সক্ষম নয় তার সিয়াম পালন করা উচিত। কারণ তা তার জন্য যৌন কামনা দমনকারী।” (সহি মুসলিম: ৩২৮৯)
ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ে
‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ
"রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেনঃ হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বৈবাহিক জীবনের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ তা দৃষ্টিকে নিচু করে দেয় এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে। আর যে (ভরণপোষনে) সমর্থ নয়, তাকে অবশ্যই সওম পালন করতে হবে। কারণ তা তার যৌবন কামনা দমনকারী।"
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩২৯১.
হাদিসের মান: সহিহ।
উক্ত হাদিসের দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, আমাদের নিজের চরিত্র হেফাজত করার জন্য বিয়ে করা উচিত। বিবাহ বহির্ভূত কোন সম্পর্ক জীবন ও কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে না। নিষিদ্ধ ও হারাম কাজের আনন্দ স্বল্প সময়ের, কিন্তু পরিণাম হয় ভয়ানক। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি।
দেন মোহর কি
দেনমোহর হচ্ছে স্ত্রীর অধিকার। মুসলমানদের বিয়েতে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী যে অর্থ সম্পদ পেয়ে থাকে তাকে দেনমোহর বলে। স্ত্রী চাইলে দেনমোহর কিছু অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশ ছেড়ে দিতে পারে। দেনমোহর ছাড়া বিবাহ বৈধ হবে না।
আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ
"আবদুর রহমান (রাঃ) খেজুরের একটি আঁটি পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে (মোহরানা দিয়ে) এক মহিলাকে বিবাহ করেন।"
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৩৮৬.
বিয়ে করার নিয়ম
1) বিবাহ হচ্ছে গ্রহণযোগ্যভাবে বর এবং কনে উভয়কে নির্দিষ্ট করে নেওয়া।
(2) বর-কনে একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "স্বামী ছাড়া (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা) নারীকে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া বিয়ে করা যাবে না (অর্থাৎ তাকে স্পষ্টভাবে বলা যে সিদ্ধান্ত তার কাছ থেকে নেওয়া হবে)। একজন কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে করা যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! তার সম্মতি জানব কী করে? তিনি বললেন, (লজ্জায়) চুপ থাকাই তার সম্মতি।" (বুখারি, হাদিস নং:৪৭৪১)
(3) মেয়ের অভিভাবক বিবাহ চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য দায়ী থাকবেন। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা বিবাহের জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ জারি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত পুরুষ ও নারীদের বিয়ে করিয়ে দিন।"(সূরা নূর-২৪:৩২)
(4) বিবাহ চুক্তির সময় অবশ্যই সাক্ষী হতে হবে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "একজন অভিভাবক ও দুজন সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হতে পারে না"
(সহীহ জামে, হাদীস নং: ৭৫৫৮)
সাক্ষীরা হতে হবে দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী অথবা একজন পুরুষ (স্বাধীন) এবং দুইজন মহিলা সাক্ষী যারা কবুল বলা উপস্থিত থেকে শুনতে পায়।(আদ-দুররুল মুখতার-৩/৯; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)
বিয়ের জন্য যেসব গুণাবলী থাকা বাধ্যতামূলক:
১.. সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া।
২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
৩. দাসত্ব থেকে মুক্তি
৪. অভিভাবক কনের ধর্মীয় ভাই। তাই কোনো অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না
৫. পুরুষ হওয়া। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, "এক নারীকে অন্য নারীকে দিও না।" অথবা মহিলার নিজেকে বিয়ে করা উচিত নয়। ব্যভিচারিণী নিজেকে বিয়ে করে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: 1782; সহীহ জামে': 7298)
৭.বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের ‘কুফু’ বা সমতা ও অন্যান্য বিষয় দিক বিবেচনা করতে পারার যোগ্যতাবান হওয়া অভিভাবকদের ধারা নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং কাছের অভিভাবক থাকতে দূরের অভিভাবকের অভিভাবকত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। কাছের অভিভাবক না থাকলে দূরের অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে।
মন্তব্য
বর্তমান সমাজে বিবাহকে কঠিন, হারাম সম্পর্কে সহজ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্রমান্বয়ে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে। যুব সমাজ আজ ধ্বংসের দিকে।প্রতিটি বাবা-মার উচিত তার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের বিবাহ দেওয়া। রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ করবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url