বদনজরের প্রভাব এবং বদ নজর থেকে বাঁচার আমল

আজকের আর্টিকেলে আমরা বদ নজর, বদ নজরের লক্ষণ, বদ নজর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়, বদ নজর লেগে গেলে করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে জানব,ইনশাআল্লাহ।

বদনজরের-প্রভাব-এবং-বদ-নজর-থেকে-বাঁচার-আমল

মানুষ সামাজিক জীব। একটি সমাজে আমরা বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে বসবাস করি। আমাদের সুখ, উন্নতি, সুন্দর চেহারা, সুন্দর স্বাস্থ্য, পারিবারিক সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ইত্যাদি অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ঈর্ষান্বিত দৃষ্টিতে যখন কোন ব্যক্তির দিকে তাকায় তখন সে দৃষ্টি খারাপ প্রভাব প্রভাব ব্যক্তির জীবনে গভীর ভাবে খারাপ প্রভাব ফেলে যা বদ নজর বা কুদৃষ্টি বলে থাকি আমরা। আবার কারো সুস্বাস্থ্য, সম্পর্ক, উন্নতি ইত্যাদি নিয়ে প্রশংসা সূচক শব্দ ব্যবহার করলেও বদ নজর লাগতে পারে যদি না আল্লাহর প্রশংসা করা হয়। যদি কোন রহমতের প্রশংসা করা হয় আল্লাহর নাম ব্যতি রেখে তাহলে সেখানে শয়তান প্রভাব বিস্তার করে। বদ নজর এর প্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহ। এমনকি তা আমাদের মৃত্যুও ঘটাতে পারে।এজন্য আমাদের খারাপ দৃষ্টি বা বদ নজর থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ নজর থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে সতর্ক করেছেন।

বদ নজর কি সত্য?

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

🗞️ নবী কারীম মোহাম্মদ(সা:) বলেছেন, "বদ নজর লাগা সত্য।"

[বুখারী: ৫৭৪০; মুসলিম:২১৯৩]

‎🗞️ আবূ উমামা ইবনু সহল ইব্নু হুনাইফ (র) থেকে বর্ণিতঃ(জুহফার নিকটবর্তী) খাব্বার নামক স্থানে আমার পিতা আবূ সহল (ইব্নু হানীফ) গোসল করার মনস্থ করে জুব্বা খুলে ফেললেন। আমির ইব্নু রবীয়া দেখতেছিলেন। আমার পিতা সহল সুন্দর ও সুদর্শন লোক ছিলেন। আমির বললেন, আজকের মতো আর কোনদিন আমি এত সুন্দর মানুষ দেখিনি, এমন কি এত সুন্দর দেহ বিশিষ্ট কোন যুবতীও দেখিনি। (আমিরের এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই) তৎক্ষণাৎ সহলের গায়ে জ্বর এল এবং জ্বরের বেগ ভীষণ হল। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বলল, সহলের জ্বর এসেছে এবং সে আপনার সাথে যেতে পারবে না। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহলের কাছে এলেন, সহল আমিরের সেই কথা নকল করে শোনালেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 

"কোন মুসলমান নিজের ভাইকে কেন হত্যা করে ? অতঃপর আমিরকে বললেন, তুমি (বারাকাল্লাহ) বললে না কেন? বদ নজর (কুদৃষ্টি) সত্য। সহলের জন্য ওযূ কর, তাকেও ওযুর পানি দাও।" আমির সহলের জন্য ওযূ করলেন এবং ওযুর পানি তাকে দিলেন। অতঃপর সহল ভাল হয়ে গেলেন এবং রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে গেলেন, আর তাঁর কোন অসুবিধা তখন ছিল না। [বুখারী ৫৭৪০, মুসলিম ২১৮৭,মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১৬৮৮]

🗞️ হুমাইদ ইবনু কাইস মক্কী (র) থেকে বর্ণিতঃ

জা‘ফর ইব্নু আবী তালিব (রা)-এর দুইটি ছেলেকে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে আসা হল। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আয়া (মহিলা খাদেম)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, এই ছেলেরা এত জীর্ণ শীর্ণ (দুর্বল) কেন ? আয়া উত্তর দিল, ইয়া রসূলাল্লাহ! তাদের উপর খুব তাড়াতাড়ি (খুব সহজেই) বদ নজর লেগে যায়। আর তাদেরকে কোন রকম ঝাড়ফুঁক করাইনি। কারণ হয়ত বা আপনি উহা পছন্দ করেন না। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এদের জন্য ঝাড়ফুঁকের ব্যবস্থা কর। কেননা যদি কোন বস্তু তকদীরের (কপালের লেখার) অগ্রে কোন কর্ম সম্পন্ন করতে পারত, তবে উহা বদ নজর । [১] 

[সহীহ, তিরমিযী ২০৫৯, ইবনু মাজাহ ৩৫১০, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সিলসিলা সহীহা ১২৫২] এবং ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]

বদনজরের-প্রভাব-এবং-বদ-নজর-থেকে-বাঁচার-আমল
বদ নজর‌ লাগার লক্ষণ সমূহ 

  • আয় রোজগার এ বরকত কমে যাওয়া ।
  • প্রতিটা কাজে - কর্মে ভুল হওয়া।
  • কাজে-কর্মে মনোযোগ না আসা।
  • স্বপ্নে মৃত মানুষকে দেখা।
  • শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।
  • চুল উঠে যাওয়া।
  • বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
  • অসুস্থ হলে চিকিৎসার মাধ্যমে জ্বর সর্দির মত অসুখ ভালো না হওয়া।
  • সব সময় ঘুম ঘুম ভাব।
  • জ্বর জ্বর ভাব লেগে থাকে।
  • একটু পর পর হাই উঠা। 
  • ওজন ক্রমাগত কমতে থাকা।
  • চেহারা নুর নষ্ট হয়ে যাওয়া। 
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
  • সবসময় অস্থিরতা কাজ করে ।
  • বুকের মধ্যে ধড়ফড় করে।
  • খাবারে অরুচি দেখা দেয়।
  • পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় ।
  • মাথা ব্যথা হয়, মাথায় ঝিমঝিম করে। 
  • অনিদ্রা হওয়া।
  • কোন কারণ ছাড়ায় কান্নাকাটি করা।
  • সম্পর্কে ভাঙ্গন দেখা দেওয়া।
  • পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হওয়া ।

বদ নজর থেকে বাঁচার আমল

সাহাবি আবু সাঈদ (রা.) বলেন,"রাসুল (সা.) মুআউওজাতাইন অর্থাৎ সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল না হওয়া পর্যন্ত জিন ও বদনজর থেকে পানাহ চাইতেন। পরে দুটি সুরা নাজিল হওয়ার পর এই দুটিকেই গ্রহণ করেন, তা ছাড়া অন্য সব ছেড়ে দেন।"[তিরমিজি, হাদিস : ২০৫৮]

আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে নবী (সা.) প্রতি রাতেই যখন শয্যায় আশ্রয় নিতেন তখন তাঁর দুই অঞ্জলি একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন। সে সময় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল-ফালাক এবং কুল আউজু বিরাব্বিন-নাস পাঠ করতেন। তারপর উভয় হাতে যথাসম্ভব দেহে মাসেহ করতেন; মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের দিক থেকে তিনি তা শুরু করতেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আপন বিছানায় আসতেন, তখন তিনি তাঁর উভয় হাতের তালুতে সুরা ইখলাস ও মুআউওজাতাইন অর্থাৎ সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। তারপর উভয় তালু দ্বারা আপন চেহারা ও দুই হাত শরীরের যত দূর পৌঁছায় তত দূর পর্যন্ত মাসাহ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, এরপর রাসুল (সা.) যখন অসুস্থ হন তখন তিনি আমাকে অনুরূপ করার নির্দেশ দিতেন। ইউনুস (রহ.) বলেন, আমি ইবনে শিহাব (রহ.)-কে, যখন তিনি তাঁর বিছানায় শুতে যেতেন, তখন অনুরূপ করতে দেখেছি। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৪৮)


বদ নজর লাগলে যে দোয়া পড়বো

بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ،كَ.  مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِي

উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইউজিকা মিন শাররি কুললি নাফসিন আউ আইনিন হাসিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা বিসমিল্লাহি আরকিকা’,

অর্থ: আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সে সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি।

 [মুসলিম ৫৫১২]।

উক্ত আয়াতটি পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারবার ফুঁ দিলে ইনশাআল্লাহ বদ নজর কেটে যাবে।

এছাড়া, *সূরা ফাতিহা,*আয়াতুল কুরসি,*সূরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত, *তিন কুল (সূরা ইখলাস সূরা ফালাক সূরা নাস)) পড়ে ঝাড়ফুঁক করলেই ইনশাআল্লাহ বদ নজর কেটে যাবে।

লেখকের কথা:

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "বদনজর সত্য"। সুতরাং,আমাদের অবশ্যই বদ নজর থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমল করতে হবে। সূরা নাস, সুরা,ফালাক, সূরা ইখলাস, আয়তুল কুরসী ইত্যাদি আমল নিয়মিত করতে হবে। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি বদনজর, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে পানাহ যেতে হবে। অনেকে আমরা বদ নজর কে বিশ্বাস করতে চাই না। বদ নজর কে বিশ্বাস না করলে আমাদের ঈমান থাকবে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যাহা বলেছেন তাহাই সত্য সত্য সত্য। এখানে অবিশ্বাসের কোনো সুযোগ নেই। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বদ নজর থেকে রক্ষা করুন,আমীন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url