ইসকন একটি হিন্দুত্ববাদী উগ্র সংগঠন
আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইস্কন সম্পর্কে জানব। আপনি যদি ইসকন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
বর্তমান বাংলাদেশ সহ বিশ্বে আলোচিত সমালোচিত একটি সংগঠন হচ্ছে ইসকন। ইসকনের প্রধান আদর্শ হলো কৃষ্ণভক্তি বা মানব মনের আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করা। কিন্তু, সংগঠনটির ধর্মীয় শিক্ষার আড়ালে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি ইসকন একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংস্থা বা এনজিও হিসেবে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে বিদেশি সংস্থার ধর্মীয় প্রচার নিষিদ্ধ হলেও ইসকন সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে ধর্ম প্রচারের নামে দেশের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে যা প্রমাণিত।
ইসকনের প্রতিষ্ঠা, গঠন ও আদর্শ
১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইসকন প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসকন নিউইয়র্ক এ প্রতিষ্ঠিত হলেও এর সদর দপ্তর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার মায়াপুরে অবস্থিত। ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা অভয় চরণাবিন্দ ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। তিনি সংগঠন টির নাম দিয়েছিলেন 'International Society For Krishna Consciousness' যার সংক্ষিপ্ত রূপ ইসকন।International Society For Krishna Consciousness' কে বাংলায় বলা হয় 'আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ'। স্বামী প্রভুপাদ বিশ্বব্যাপী হিন্দু ধর্মের প্রভু শ্রীকৃষ্ণের ভাবমূর্তি প্রচার-প্রসারের জন্য ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন।ইসকন হরে কৃষ্ণ আন্দোলন নামেও ব্যাপক পরিচিত। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণ কে বিষ্ণু বা মহাদেবের অবতার ভাবা হয়। ইসকন হচ্ছে গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতাবলম্বীদের একটি হিন্দু ধর্ম প্রতিষ্ঠান। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতাবলম্বী বলতে গৌড়ীয় অঞ্চলে মহাদেবের উপাসকদের মধ্যে প্রচলিত হিন্দু ধর্মের একটি রীতি। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের সাথে শ্রীমৎ ভগবত গীতা ও পূরণের সংমিশ্রণে এর মূলভাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইস্কনরা ভক্তিযোগের অনুশীলন করে। ভক্তিযোগ হল ব্যক্তিগত দেবতাকে ভালোবাসার আধ্যাত্মিক পথ । ইসকন যেহেতু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি প্রকাশ বা উপজীব্য কে কেন্দ্র করে। সুতরাং, তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করা এবং কৃষ্ণ নাম জপ করা।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশে ৮৫০ এর বেশি ইসকন মন্দির রয়েছে। কৃষ্ণভক্তির উপাসনা ও শিক্ষাদানের জন্য ইসকন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের ছড়িয়ে থাকা ভক্তদের জন্য মন্দির নির্মাণ করে যাচ্ছে। এছাড়াও ইসকন বিভিন্ন সমাজ সেবা, জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে। ফুড ফর লাইফ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে দুস্থ, অসহায়দের খাদ্য প্রদান করে থাকে।
সর্ষের মধ্যে ভূত
সংগঠনটি আদর্শ ও উদ্দেশ্য সুন্দর হলেও সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসকনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অনুদানের অসৎ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ইসকনের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণ, নারী ও শিশু যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। তার থেকেও বড় ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, এরা হিন্দু ধর্ম প্রচারের নামের আড়ালে হিন্দুত্ববাদী উগ্রতা ছড়াচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাই ইসকন খেলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্ম vs হিন্দুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি
হিন্দু ধর্ম হচ্ছে প্রাচীন ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক জীবন দর্শন যার ভিত্তি হাজার বছর পুরনো। হিন্দু ধর্মে অনেক দেব দেবীর প্রার্থনা করা হলেও এটা একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্ম যেখানে বিভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।পক্ষান্তরে, হিন্দুত্ববাদ একটি রাজনৈতিক মতবাদ। হিন্দুত্ববাদ হচ্ছে হিন্দু ধর্মের নামে একটি জাতীয়তাবাদী ও রাজনৈতিক আদর্শ। যেখানে হিন্দু ব্যতীত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীতে বিশেষ করে মুসলিমদের শত্রু হিসেবে প্রতিপন্ন করা হয় ।
ইসকনের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রভুপাদ ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা। তিনি গৌড়ের বা বাংলার অঞ্চলের কৃষ্ণভক্তির আধ্যাত্মিক শিক্ষা পাশ্চাত্যে প্রচারে লক্ষ্যে ইসকন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে ইসকন তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। বর্তমানে ইসকন মূলত ভারতের উত্তরপ্রদেশের হিন্দুয়ানি মতবাদ প্রকাশ করে । ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদীদের কেন্দ্র হচ্ছে এই উত্তর প্রদেশ। উত্তর প্রদেশ পুরো ভারতবর্ষের হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণ হিসেবে কাজ করে। ইসকনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে কৃষ্ণভক্তি কে কেন্দ্র করে। ইসকনের মূল স্লোগান হচ্ছে হরে কৃষ্ণ। অথচ বর্তমানে তারা হরে কৃষ্ণ স্লোগানের পরিবর্তে জয় শ্রী রাম স্লোগান ব্যবহার করে থাকে । ভারতের কট্টরপন্থী, হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের স্লোগান হচ্ছে জয় শ্রীরাম। উগ্রবাদীরা এ জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে দাঙ্গা,হাঙ্গামা করে, মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালায়, মসজিদ ভাঙ্গে এমনকি মুসলিমদের জোর করে এ স্লোগানটি বলতে বাধ্য করে। ইসকন মূলত হিন্দু ধর্মের আধ্যাত্মিকতা প্রচারে সীমাবদ্ধ থাকলে কোন সমস্যা ছিল না অথচ তারা গোপনে গোপনে হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থী রাজনীতি আদর্শ প্রচার করে সূক্ষ্মভাবে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইসকন বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশে ইসকন
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম ইসকন মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল জেলা ইসকনের মন্দির রয়েছে। শুধু তাই নয়, ইসকনরা সনাতন হিন্দু মন্দির গুলো দখল করে তাদের উগ্রবাদী আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত করছে। বাংলাদেশের সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দ অতীতে ইসকন এর কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশী হিন্দুদের সতর্ক করেছেন। ইসকন বাংলাদেশের সনাতন হিন্দু ধর্মের জন্য আতঙ্ক । সংগঠনটি যেখানে যাই সেখানে সনাতন হিন্দু ধর্মের মন্দিরগুলো দখল করে। ঢাকার স্বামীবাগে ইসকন মন্দিরটি পূর্বের সনাতনী হিন্দু মন্দির ছিল। চট্টগ্রামের পুরাতন এবং ঐতিহ্যবাহী হিন্দু প্রতিষ্ঠান 'প্রবর্তক সংঘের' নেতৃবৃন্দ ইসকন কে উগ্রবাদী প্রকৃতপক্ষে ধর্ম বিরোধী এবং পেশি ক্ষমতা প্রদর্শনকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। প্রবর্তক সংঘ তাদের মন্দিরে পূজারী নিয়োগ দিতে চাইলে ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস পূজার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তদবির করেন। তিনি পূজারীর দায়িত্ব নিয়ে নিয়মিত পূজা অর্চনা মনোযোগ না দিয়ে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন। যখন প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি বাতিল করতে যায় তখন তারা সংগঠনটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে চালাতে থাকে এমনকি ইসকন তাদের মন্দিরে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের লালন করে মন্দিরের জায়গার মূল মালিকদের উপর সশস্ত্র হামলা পর্যন্ত করিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ইসকন কে জঙ্গী সংগঠন বলায় 'প্রবর্তক সংঘের' সম্পাদক তিনকরি চক্রবর্তী সহ বেশ কয়েকজন হিন্দু নেতাদের বিরুদ্ধে ইস্কন ডিজিটাল আইনে মামলা করে। ২০০৯ সালের ঠাকুরগাঁও এর শ্রীশ্রী রসিক রায় জি মন্দিরের দখল নেওয়ার সময় ইসকনের সন্ত্রাসীরা ফুলবাবু নামে এক সনাতনী হিন্দুকে হত্যা করে। এর বাইরেও ইসকন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বহু এলাকার সনাতন হিন্দুদের উপর নির্যাতনের রেকর্ড রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইসকন হচ্ছে সনাতন হিন্দুদের শত্রু।
ইসকন আসলে কি চাই
ইসকনের প্রতিষ্ঠাকালী নেতৃবৃন্দ এবং বর্তমান নেতৃবৃন্দ এক নয়। ইসকন সরাসরি ভারতে উগ্রবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক শাখা বিজেপি যোগাযোগ রক্ষা করে পরিচালিত হয়। ভারতে যেহেতু মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর উগ্রবাদী হিন্দুরা নির্যাতন করে। একইভাবে বাংলাদেশে একই ঘটনা ঘটানোর জন্য ইসকন মুসলিম বিরোধী বিভিন্ন কাঁধে ইন্ধন জুগাই। যাতে বাংলাদেশের মুসলিমরা সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ক্ষেপে যায়। এরে অংশ হিসেবে ইসকন স্বামীবাগে এক মসজিদের তারাবির নামাজ বন্ধ করে দেয়। ২০১৬ সালের সিলেটে ইসকনের মন্দির থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে মুসল্লির উপর গুলি বর্ষন করা হয়। এছাড়া, ইসকনের বিরুদ্ধে পোস্ট দেওয়ায় সিলেটের মসজিদের এক ইমামকে হত্যা করে ইস্কন সন্ত্রাসীরা। বাংলাদেশে বড় ধরনের দাঙ্গা লাগাতে পারলে ভারতীয় রাজনৈতিক দল বিজেপির মুসলিম এবং বাংলাদেশ বিরোধী বয়ান প্রচারে সুবিধা হবে। ইসকন ভারতের এজেন্ডা হয়ে বাংলাদেশের ঠিক সেই কাজটি করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ধারণা ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশের বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর প্রচেষ্টা করছে ইসকন। এজন্য তারা নিজেদের মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে দায় চাপিয়ে দিতে পারে এবং বর্তমানে সেটা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ও মহা অপপ্রচার প্রচার করতে থাকে। তোরা ফেসবুক মিডিয়ায় প্রচার করতে থাকে যে তাদের ওপর প্রচণ্ড নির্যাতন হচ্ছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে। সারা দেশে এমনভাবে গুজব ছড়িয়েছে যে এ থেকে বোঝা যায় এটা ছিল তাদের পূর্বপরিকল্পনা।। অথচ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়ার কোন প্রমাণই মিলেনি। কিন্তু, ভারতীয় মিডিয়া, ঢাক ঢোল পিটিয়ে তিলকে তরমুজ বানিয়ে তা প্রচার করতে থাকে। তাদের সংবাদের হেডলাইন ছিল এমন"নির্বিচারে খুন করা হচ্ছে হিন্দুদের"। আসলেই কি তাই হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গুলো বাংলাদেশে এমন সিচুয়েশন তৈরি করতে চাচ্ছে যাতে বিশ্বকে দেখাতে পারে বাংলাদেশ হিন্দুদের জন্য নিরাপদ নয়, তারা নির্যাতিত, খুন গুমের শিকার। ইসকন এবং ভারতীয় মিডিয়া সেই লক্ষ্যেই তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে।
লেখকের কিছু কথা:
ইসকন হচ্ছে একটি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপ তারই প্রমাণ দেয়। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইসকন কে বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি নিষিদ্ধ করা হবে ততই তা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। সকল ইসকনরা হিন্দু হলেও সকল হিন্দুরা কিন্তু ইসকন সদস্য না। ইসকন হচ্ছে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। সুতরাং, ইসকন দিয়ে হিন্দু ধর্মকে বিচার করা যাবে না। কোন হিন্দু ভাই বোনদের উপর কোন ঘটনা প্রেক্ষিতে আক্রমণ করা যাবে না। এই বাংলাদেশ সবার। সুতরাং সবাই মিলে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।বাংলাদেশের ইসকনের কোন প্রয়োজন নেই। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের হিন্দুরা এমনিতেই কৃষ্ণভক্ত। দেশকে বাঁচাতে হলে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনিক ইসকন কে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। তাছাড়া, আমাদের ভবিষ্যতে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে।
তথ্যসূত্র:ki kano kivabe YouTube channcel, নিউজ পেপার।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url