কমলালেবু খাওয়ার ১১ টি উপকারিতা এবং অপকারিতা

টক-মিষ্টি স্বাদ যুক্ত রসালো কমলালেবু আমাদের অতি প্রিয় একটি ফল। কমবেশি আমরা সকলেই কমলালেবু খেতে খুবই পছন্দ করি। শীত মৌসুমে আমাদের প্রিয় ফলের তালিকায় থাকে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলালেবু। এই আর্টিকেলটি পাঠের মাধ্যমে আমরা কমলালেবুর উপকারিতা,অপকারিতা, খাওয়ার পরিমাণ এবং নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে জানতে পারব, ইনশাআল্লাহ।




কমলালেবুর বহুমুখী উপকারিতা 

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলালেবু তে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি,ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,ফাইবার ফলিক এসিড যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমরা খুব সহজেই সর্দি কাশি ও নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। শীতকালে আমরা বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হই। এর কারণ হচ্ছে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি মাঝারি আকারের কমলা লেবু রাখা উচিত।


২. ত্বকের সৌন্দর্য : আমাদের ত্বক যদি সুন্দর, লাবণ্যময় ও সজীব হয় তাহলে আমাদের হৃদয় থাকে প্রশান্ত। কমলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বককে  রাখে সজীব ও প্রাণবন্ত। সুতরাং আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সজীবতা বৃদ্ধির জন্য কমলালেবুর কোন জুড়ি নেই।

৩. বয়সের ছাপ দূর করে: বয়সের ছাপ দূর করতে কমলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কমলালেবু তে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের বলিরেখা দূর করে আপনাকে রাখে চির তরুণ/ তরুণী। নিজেকে তরুণ/তরুণী রাখতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলালেবু আমাদের নিয়মিত খেতে হবে।
৩. হার্ট ভালো রাখে: আমাদের হার্ট সুস্থ রাখতে কমলালেবুর খুবই কার্যকরী।কমলা লেবুতে থাকে পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হার্টের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে। অতএব,আমাদের  হার্টকে সুস্থ রাখার  জন্য কমলালেবু খেতে হবে।
৪. ক্যান্সার প্রতিরোধক: কমলা লেবু ক্যান্সার প্রতিষেধক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কমলালেবু তে রয়েছে আলফা ও বিটা নামক ক্যারোটিন যা ক্যান্সার প্রতিরোধক। মুখ, ত্বক,স্তন, পাকস্থলী, ফুসফুস সব রকম ক্যান্সারের জন্য কার্যকরী। ক্যান্সারের হাত থেকে আমাদের বাঁচার জন্য নিয়মিত কমলালেবু খাওয়া উচিত।
৫. তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে: শীতকালে পানি ঠান্ডা হওয়ায় আমরা পানি খাওয়ার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেই। ফলে শরীরে দেখা দেয় পানি শূন্যতা। কমলালেবু এ সমস্যার অন্যতম প্রধান সমাধান। কমলালেবু শরীরে তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে;পানি শূন্যতা দূর করে শরীরকে রাখে সুস্থ। শরীরে পানি শূন্যতা হলে আমরা নানা রকম শারীরিক জটিলতায় ভুগি। টক-মিষ্টি স্বাদ যুক্ত রসালো কমলালেবু এই সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করে।
৬. ওজন কমাতে সাহায্য করে: আপনারা যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তারা ওজন কমানোর ডায়েটে প্রতিদিন কমলালেবু রাখতে পারেন। কমলালেবু তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম যা শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে শরীরে এনার্জি সঞ্চয় করে। শরীরে এনার্জি সঞ্চয় থাকার ফলে আমাদের ক্ষুধা কম লাগে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ওজন কমানোর ডায়েটের প্রতিদিন একটি কমলালেবু  অবশ্যই রাখতে হবে।

৭. ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে: বিভিন্ন এক্সিডেন্ট এর কারণে আমাদের শরীরের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কমলালেবু শরীরে  কোলাজেন উৎপন্ন করে যা খুব দ্রুত শরীরের ক্ষত নিরাময় এ সাহায্য করে। খুব দ্রুত শরীরের ক্ষত নিরাময়ের জন্য আমাদের কমলালেবু খেতে হবে। আমাদের সমাজে এক ধরনের কুসংস্কার চালু আছে যে শরীরে ক্ষত থাকলে বা শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে কমলালেবু খাওয়া ঠিক না। এই মতবাদ একদম ভিত্তিহীন। এ সময় ক্ষত শুকানোর জন্য কমলালেবু খাওয়া অতীব জরুরী।
৮. বিষন্নতা দূর করে: কথায় আছে, সুস্থ দেহ, সুন্দর মন। মন যদি সুন্দর থাকে তাহলে দেহ সুস্থ থাকবে। আমরা আমাদের প্রাত্যহিক কাজ আনন্দ উৎসাহ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারব। কিন্তু,আমাদের মন যদি থাকে বিষন্ন তাহলে পড়াশোনা, কাজ-কর্মে মন বসবে না। সব সময় উদাসীন অনুভব হবে। কমলালেবু এর মধ্যে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের বিষন্নতা দূর করে মনকে রাখে সতেজ ও প্রফুল্ল।
৯. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি: কমলালেবু তে রয়েছে ফ্লেভনয়েডস নামক উপাদান যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য নিয়মিত কমলা লেবু খাওয়া উচিত।
১০. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: কমলা লেবুতে রয়েছে ভিটামিন এ যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যুবক থেকে বৃদ্ধ আমরা সকলেই এখন কমবেশি চোখের নানা রকম সমস্যায় ভুগি। চোখের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে আমাদের কমলালেবু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
১১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: কমলালেবু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কমলালেবু রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করে থাকে। কমলালেবুর খোসার গুড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।


আরো পড়ুন:গর্ভাবস্থায় কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা।

কমলালেবু খাওয়ার অপকারিতা-

আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যার উপকারিতা রয়েছে, তার অপকারিতা ও রয়েছে। কমলালেবু এর ব্যতিক্রম নয়। কমলালেবু খেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যদিও, এই অপকারিতা গুলো উপকারিতা থেকে পরিমাণে খুবই নগণ্য। 

  • কমলালেবু তে রয়েছে ফাইবার। অতিরিক্ত কমলালেবুর খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, বমি হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। 
  •  কমলা লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা বুকে জ্বালা পোড়া সৃষ্টি করে। 
  •  অতিরিক্ত পরিমাণ এ কমলালেবু খেলে অনিদ্রা জনিত সমস্যা দেখা দেয়। 
  •  কমলা লেবুতে রয়েছে পটাশিয়াম। সুতরাং,যাদের শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কমলালেবু খাওয়া যাবেনা।
  •  দিনে পাঁচটির বেশি কমলা লেবু খেলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।


রাতে কমলা লেবু খাওয়া কি ক্ষতিকর??

কমলালেবু  সহজলভ্য ও আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি ফল।কমলালেবু ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি,ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল আমরা একটি দিনের বিভিন্ন সময়ে খেয়ে থাকি। আমরা অনেকে রাতে ঘুমানোর আগে কমলালেবু খায়। কিন্তু রাতে ঘুমানোর আগে কমলালেবু খাওয়া একদম ঠিক না। কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় রাতে কমলালেবু খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। অতএব, আমাদের রাতে কমলালেবু খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে।


খালি পেটে কমলালেবু খেলে যা হয়...

কমলালেবু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ রসালো, সুগন্ধ যুক্ত ফল হওয়ায় আমাদের অতি পছন্দের একটি ফল। এই ফলের গুনাগুনের জন্য আমরা সব সময় এ ফল খেতে পছন্দ করি। আমরা অনেকেই ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কমলালেবু খেয়ে থাকি। কিন্তু, খালি পেটে কমলালেবু খাওয়া একদম অনুচিত। কমলা লেবুতে থেকে সাইট্রিক এসিড। খালি পেটে খাওয়ার ফলে তা পেটে অম্লের সৃষ্টি করে এবং পেট ব্যথা হয়। লাভের চেয়ে বরং ক্ষতিই হয়। যেহেতু কমলালেবু সাইট্রিক এসিড জাতীয় ফল সেহেতু আমাদের কখনোই খালি পেটে কমলালেবু খাওয়া ঠিক না। তা না হলে আমাদের পেটের প্রদাহ জনিত সমস্যা হতে পারে। 

দিনে কয়টি কমলা লেবু খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত??

শীতকাল কমলা লেবুর মৌসুম হয় বাজারে কমলালেবুর দোকান থেকে অনেক বেশি এবং আমাদের চাহিদার তুঙ্গে থাকে। ভিটামিন সমৃদ্ধ হয় এবং বাজারে প্রচুর জোগান থাকায় এই মৌসুমে আমরা প্রচুর পরিমাণে কমলালেবু খেয়ে থাকি।

কিন্তু, আমাদের কি এত পরিমানে কমলালেবু খাওয়া উচিত?? যদি না হয়ে থাকে তাহলে প্রশ্ন আসবে আমাদের প্রাত্যহিক কয়টি করে কমলা খাওয়া উচিত??

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন দুই থেকে তিনটির বেশি কমলালেবু খাওয়া ঠিক না। বেশি বেশি কমলালেবু  খেলে বেশি বেশি পুষ্টি পাব এ ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। পরিমাণে অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়ায় শরীরের জন্য ভালো না। পরিমাণে বেশি কমলা লেবু খেলে পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি সহ বিভিন্ন রকম শারীরিক জটিলতা দেখা যায়। 

আর্টিকেল রাইটার এর মন্তব্য:

আর্টিকেলটি পাঠের মাধ্যমে আমরা কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে ন্যূনতম পরিমাণে হলেও জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি বলে আমি আশা করছি। টক-মিষ্টি স্বাদ যুক্ত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলালেবু আমাদের অতি প্রিয় একটি ফল। শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কমলালেবুর কোন বিকল্প নেই। আমাদের প্রাত্যহিক খাবার তালিকায় একটি/দুটি করে কমলা লেবু রাখা উচিত। কিন্তু, আমার প্রিয় ভাই ও বোনদের কাছে অনুরোধ থাকবে, খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে কমলা লেবু  না খাওয়ার জন্য।

আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় ভাই/বোন। আপনার জন্য দোয়া এবং ভালোবাসা রইলো। ❤️

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url