গর্ভাবস্থায় কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা

শীতকালীন ফল কমলালেবু হলেও বর্তমানে বারো মাস এই ফল পাওয়া যায়। টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত রসালো এ ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীর রাখে সুস্থ, সতেজ এবং প্রফুল্ল।


একজন গর্ভবতী মা তাঁর খাদ্য তালিকায় কি কমলালেবু রাখতে পারবেন??


একজন গর্ভবতী মা অনেক সময় ভাবনায় পড়ে যান যে তিনি তাঁর খাদ্য তালিকায় কমলালেবু রাখতে পারবেন কিনা; গর্ভাবস্থায় কমলালেবু খাওয়া আসলেই কি ঠিক হবে। তাছাড়া আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, গর্ভবতী মায়ের কমলালেবু খাওয়া উচিত না। অনেক অনেক গর্ভবতী নারী তাঁর গর্ভবস্থায় কমলালেবু  খেতে চান না প্রচলিত কথার ভিত্তিতে। কিন্তু, বাস্তবে এ কথার কোন ভিত্তি নেই। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা একজন গর্ভবতী মা কে নিয়মিত কমলালেবু খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গর্ভবতী মা ও শিশুর সুস্থতায় কমলালেবুর কোন জুড়ি নেই। কমলা লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা একজন গর্ভবতী নারীর শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

গর্ভাবস্থায় কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা...

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: 

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলালেবুতে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি। ছাড়া ও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একজন গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি দুর্বল হয় তাহলে বিভিন্ন রকম রোগে আক্রান্ত হয়। যা গর্ভবতী মা এবং অনাগত শিশুর জন্য ক্ষতিকর। কমলালেবু মা ও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যেসব, গর্ভবতী মা এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল তাদের উচিত নিয়মিত কমলালেবু খাওয়া। কমলালেবু তে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মা ও শিশুকে সুস্থ রাখে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গর্ভবতী মাকে নিয়মিত কমলালেবু খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।


বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণ: 

একজন গর্ভবতী মা তার গর্ভাবস্থায় দিনে বেশ কয়েক বার বমি করেন এবং সব সময় তার বমি বমি অনুভব হয়। কোন খাবার খেতে পারেন না।এই বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে কমলালেবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে একজন গর্ভবতী মা হিসেবে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন কমলালেবু।

আরো পড়ুন:কমলালেবু খাওয়ার ১১ টি উপকারিতা এবং অপকারিতা


রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: 

কমলালেবু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে থাকে। যেসব গর্ভবতী মা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের উচিত হবে প্রতিদিন একটি করে কমলালেবু খাওয়া। কমলালেবু তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে মা ও শিশুকে রাখে সুস্থ। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত কমলা খেতে হবে। 

রক্তস্বল্পতা সমস্যার সমাধান: যেসব গর্ভবতী মা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের নিয়মিত কমলালেবু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কমলালেবুতে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানবদেহে রক্তস্বল্পতা দূর করে। একজন নারী যখন গর্ভবতী হয়ে থাকেন তখন তার বিশেষ যত্ন নিতে হয়। রক্তস্বল্পতার মত সমস্যা থাকলে তা গর্ভবতী মা ও অনাগত শিশুর জন্য শুভ কিছু বয়ে নিয়ে আসে না। এজন্য রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত গর্ভবতী মাকে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি কমলালেবু খাওয়ানো উচিত। 

হৃদপিণ্ড ভালো রাখে: 

হৃদপিন্ডের সুস্থতার জন্য কমলালেবু খাওয়ার বিকল্প নেই। একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন একটি করে কমলালেবু রাখতে হবে। মা ও শিশুর হৃদপিণ্ডকে সুস্থ,স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে কমলালেবু। গর্ভবতী মায়ের শারীরিক সুস্থতার  উপর নির্ভর করে শিশুর সুস্থতা। সুতরাং, গর্ভবতী মায়ের হার্টের যত্ন নিতে হবে। হার্টের সুস্থতায় গর্ভবতী মা কে নিয়মিত কমলালেবু খাওয়াতে হবে।

অনিদ্রা জনিত সমস্যা 

অনেক গর্ভবতী মা অনিদ্রা জনিত সমস্যায় ভুগছেন। অনিদ্রা  একজন গর্ভবতী মায়ের মানসিক  স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একজন গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম প্রয়োজন। অনিদ্রা শিশুর স্বাস্থ্যের ওপরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যেসব গর্ভবতী মা এই অনিদ্রা জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের এই সমস্যার সমাধান হতে পারে কমলালেবু। নিয়মিত কমলালেবু খেলে অনিদ্রা দূর হবে।

মূত্রকচ্ছতা সমস্যার সমাধান

একজন গর্ভবতী মা  তার গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব করেন। হঠাৎ যদি প্রস্রাব এর সমস্যা হয় বা খুবই কম পরিমাণে হয় তাহলে তার গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। কিডনিতে চাপ সৃষ্টি হয়। অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। মূত্রকচ্ছতা সমস্যা দূরীকরণে আপনার খাদ্য তালিকা রাখতে পারেন কমলালেবু। কমলালেবু গর্ভবতী মায়ের মূত্রকচ্ছতা দূর করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য:

যেসব গর্ভবতী মা কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যায় ভুগছেন তাদের সমস্যার সমাধান হতে পারে কমলালেবু। নিয়মিত কমলা লেবু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পরিপাকতন্ত্র থাকে সক্রিয় এবং সতেজ। গর্ভবতী মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জাদুকরি সমাধান হতে পারে এই কমলা লেবু। 

অনাগত শিশুর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে

কমলালেবু রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও বিভিন্ন ধরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অনাগত শিশু ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। অনাগত শিশুর ত্বক সুন্দর এবং উজ্জ্বল রাখার জন্য একজন গর্ভবতী মা কে প্রতিদিন কমলালেবু খেতে হবে।

কমলালেবু খাওয়ার সময়..

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল কমলালেবু হলেও সব সময় এটি খাওয়ার উপযুক্ত না। তা না হলে ঘটতে পারে বিপত্তি। কমলালেবু তে থাকে সাইট্রিক এসিড। সকালে খালি পেটে খেলে অথবা রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। একজন গর্ভবতী মা সকালে খাবার পরে অথবা দিনের অন্যান্য সময় কমলা লেবু খেতে পারবে। রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই কমলালেবু খাওয়া যাবে না।

মন্তব্য:

একজন নারীর গর্ভকালীন সময় হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা অনুভূতি,সেরা মুহূর্ত এবং সবচেয়ে কষ্টকর সময়। একটা শরীরের মধ্যে আরেকটা শরীর তৈরি হয়; গর্ভবতী মা ঠিকমতো খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না, ব্যথায় জর্জরিত থাকে। তাই এ সময় গর্ভবতী মায়ের আমাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। পুষ্টিকর শাকসবজি,ফলমূল খাওয়ানো উচিত। খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার কমলালেবু রাখার পাশাপাশি বেদনা, আপেল, আঙ্গুর,বিটরুট, কলা খাওয়াতে হবে।

প্রিয় ভাই/বোন আমার, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। দোয়া এবং ভালোবাসা রইলো আপনার জন্য। ❤️

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url