গাজর খাওয়ার ১৪ টি উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা
গাজর একটি শীতকালীন সবজি। শীতকালে এই সবজি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য মৌসুমে এ সবজি পাওয়া যায়। গাজর সবজি হলেও কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে রান্না করা গাজরের চেয়ে কাঁচা গাজর বেশি পুষ্টিকর।
গাজরের পুষ্টিগুণ
সুস্থ দেহ,সুন্দর মন। শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য আমাদের সুস্থ থাকা খুবই জরুরী। আমাদের সুস্থ শরীর সুন্দর মনের জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় গাজর রাখতে হবে । ভিটামিন এ সমৃদ্ধ গাজরের রয়েছে ভিটামিন বি,ভিটামিন সি,ভিটামিন ই,বিটা ক্যারোটিন, পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম,শর্করা,গ্লুকোজ,প্রোটিন সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
১০০ গ্রাম কাঁচা গাজরে রয়েছে:
- ভিটামিন এ:৮৩৫ মাইক্রোগ্রাম।
- বিটা ক্যারোটিন: ৮২৮৫ মাইক্রোগ্রাম।
- শর্করা: ৯.৬ গ্রাম
- চিনি: ৪.৭ গ্রাম
- স্নেহ:০.২৪ গ্রাম
- প্রোটিন: ০.৯৩ গ্রাম
- ভিটামিন বি৬:০.১৩৮ গ্রাম
- ফোলেট: ১৯ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন সি: ৫.৯ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই: ০.৬৬ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম:৩৩ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: ১২ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম: ৩৫০ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম: ৬৯ মিলিগ্রাম
- ফ্লোরাইড: ৩.২ মাইক্রোগ্রাম
গাজরের উপকারিতা
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি
গাজরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। যা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া, ভিটামিন বিটা ক্যারোটিয়ান লিভারে ভিটামিন এতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আমরা যারা চোখের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছি এবং যারা রাতকানা রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য উত্তম খাবার হতে পারে গাজর। আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত গাজর খেতে হবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও বলিরেখা দূর করার জন্য আমাদের নিয়মিত গাজর খেতে হবে। গাজরে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, যা ত্বকের বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করে ত্বককে করে উজ্জল।
ত্বকের আদ্রতা রক্ষা
শীতকালে আমাদের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বকের শুষ্কতা দূর করে আদ্রতা বজায় রাখার জন্য আমাদের গাজর খেতে হবে। গাজর এ থাকা পটাশিয়াম ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে।ত্বককে রাখে সতেজ।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ
আমরা যারা উচ্চ রক্তচাপ এ ভুগছি তাদের নিয়মিত গাজর খেতে হবে। গাজরে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
আরো পড়ুন:গর্ভাবস্থায় কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা
ক্যান্সার প্রতিরোধক
ফ্যালকারিওনল ও ফ্যালকারিনডিওল নামক দুটি ক্যান্সার প্রতিরোধী যৌগ রয়েছে গাজরে। নিয়মিত গাজর খেলে প্রাকৃতিকভাবে দুটি যৌগ আমাদের শরীরের প্রবেশ করে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত গাজর খেলে প্রোটেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
লিভারের সুস্থতায় গাজর
গাজরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, যা লিভার কে সুস্থ রাখে, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। লিভারে থাকা হিমায়িত ফ্যাট হ্রাস করে। লিভারের প্রদাহ ,ফোলা, সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে গাজর। হেপাটাইটিস,সিরোসিস এর মত রোগের হাত থেকে মুক্তির জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে গাজর।
কোষ পুনরুদ্ধার
আমাদের শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে। গাজরের থাকা বিটা ক্যারোটিন এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষগুলোতে কাজ করে। আমাদের শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত এবং সজীব রাখার জন্য গাজর খাওয়া জরুরী।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
আমরা অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগি। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান হতে পারে গাজর। গাজরের ৮৮ ভাগ পানি। নিয়মিত গাজর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়,কোলন পরিষ্কার থাকে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
গাজর খেলে আমাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। বিশেষজ্ঞদের মতে,যারা নিয়মিত পাঁচ থেকে ছয়টি গাজর খাই তাদের স্টোকের ঝুঁকি যারা গাজর খাইনা তাদের থেকে কম। স্ট্রোকের যদি কমাতে আমাদের প্রাত্যহিক পাঁচ থেকে ছয়টি গাজর খেতে হবে।
দাঁত মজবুত করে
আমরা যদি আমাদের দাঁত কে শক্ত ও মজবুত করতে চাই তাহলে আমাদের খাদ্য তালিকায় গাজর যোগ করতে হবে।দাঁত শক্ত, মজবুত ও চকচকে রাখতে গাজরের কোন জুড়ি নেই। নিয়মিত গাজর খেলে আমাদের দাঁত হয় শক্ত এবং মজবুত। গাজরের থাকে মিনারেলস যা দাঁত কে শক্ত ও মজবুত করতে সহায়তা করে থাকে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর
আমরা অনেকেই মুখের দুর্গন্ধ সমস্যায় ভুগি। ফলে, সামনাসামনি কথা বলতে লজ্জা পায়। গাজর হচ্ছে একটি ক্ষারীয় ফল। গাজরে থাকা ক্ষার মুখে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টিতে বাধা দেই। যার ফলে, মুখ গহবর পরিষ্কার থাকে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। অতএব, মুখের দুর্গন্ধ সমস্যার সমাধানের জন্য নিয়মিত গাজর খেতে হবে।
হৃৎপিণ্ডের সুস্থতায়
আমাদের হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য গাজর খাওয়া জরুরী। গাজর এ থাকা কেরাটিন ক্যারোটিনয়েড হৃদপিন্ড সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে। নিয়মিত গাজর খেলে হার্ট অ্যাটাকে ঝুঁকি কমে যায়। আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সুস্থ রাখার জন্য গাজরের কোন বিকল্প নেই।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
গাজর এ থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে। আমরা যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছি। ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ডায়েট ফলো করছি, তাদের ডায়েট চার্ট এ অবশ্যই গাজর রাখতে হবে। আপনারা যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক, তারা ভাত ও রুটির পরিবর্তে পেট ভরে গাজর খেতে পারেন।
শিশুর বুদ্ধির বিকাশ
শিশুদের বুদ্ধির বিকাশের জন্য গাজর/ গাজর এর জুস খাওয়া তে হবে। গাজরে এ থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্রেনের ফাংশন ঠিক রাখে এবং শিশুর বুদ্ধির বিকাশের সহায়তা করে।
গাজর খাওয়ার অপকারিতা
গাজর হচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল বা সবজি। আমরা কাঁচা, সালাদ,তরকারি হিসেবে গাজর খেয়ে থাকি। গাজরের যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে তা আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। চলুন আমরা গাজরের কিছু অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি:
গাজরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। অতিরিক্ত পরিমাণে নিয়মিত গাজর খেলে শরীরে ভিটামিন এ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে শরীরের রঙ ফ্যাকাসে বা হলুদ হয়ে যায়।
গাজর রয়েছে গ্লুকোজ। যারা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গাজর খেতে হবে।তা না হলে গাজর খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণ গাজর খেলে পেটে ব্যথা, বমি সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে
পরামর্শ
ধন্যবাদ,প্রিয় ভাই/বোন আমার ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। নতুন নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের পাশেই থাকুন।আপনার জন্য দোয়া এবং ভালোবাসা রইলো। ❤️
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url