পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা থেকে বাঁচার কার্যকরী কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

তিব্র ব্যথার জন্য মেয়েদের কাছে পিরিয়ড বা মাসিক একটি আতঙ্কের নাম। পিরিয়ড চলাকালীন সময় একজন মেয়ের তলপেটে হালকা,মাঝারি,কখনো কখনো তীব্র অসহ্যকর ব্যথা দেখা দেয়। এছাড়াও, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব,শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হয়। মেজাজ থাকে প্রচন্ড খিটখিটে। একটু পর পর মুড সুইং করে।

পিরিয়ড-বা-মাসিকের-ব্যথা-থেকে-বাঁচার-কার্যকরী-কিছু-গুরুত্বপূর্ণ-টিপস

মাসিক বা পিরিয়ড কি?

হরমোনের প্রভাবে প্রতিমাসে একজন মেয়ের জরায়ু সংকোচিত হয়ে রক্তপাত হয় যাকে সাধারণত মাসিক,ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড বলে। পিরিয়ড শুরু হলে তলপেটে হালকা থেকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। অনেকের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে, ব্যথা দু'এক দিন পূর্ব থেকেই শুরু হয়। পিরিয়ডের স্থায়িত্বকাল থাকে তিন থেকে পাঁচ দিন। অনিয়মিত পিরিয়ড কয়েক মাস পর পর হয়। এক্ষেত্রে,ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।


পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর কার্যকরী টিপস

তলপেটে গরম সেক দেওয়া 

তলপেটে গরম সেক ব্যথা কমাতে খুব কার্যকরী একটি পদ্ধতি। গরম সেক দিলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাই, মাংসপেশি শিথিল হয় ফলে ব্যথা কমে যায়। এক্ষেত্রে, একটি তোয়ালে বা গামছা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে অথবা হট ওয়াটার এ গরম জল ভরে গামছা পেচিয়ে তলপেটে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কুসুম গরম জলে গোসল 

কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে ব্যথা থেকে একটু আরাম পাওয়া যায়। পিরিয়ড চলাকালীন সময় আপনি কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারেন।

ব্যথা যুক্ত স্থানে মালিশ

তলপেটের ব্যথাযুক্ত স্থানে আলতো করে হাত বুলিয়ে তেল  বা অলিভ অয়েল মালিশ করলে ব্যথার তীব্রতা কমে। 

আদা খাওয়ার মাধ্যমে 

ব্যথা কমানোর জন্য আদা খুবই কার্যকরী। গবেষণায় দেখা গেছে আদা খেলে ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে। বিশেষজ্ঞরা,কানাডিয়ান নারীদের পিরিয়ডের সময় আদা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ছিলেন।পিরিয়ডের ব্যথা থেকে বাঁচার জন্য আপনি আদা কুচি কুচি করে কেটে চিবিয়ে অথবা কুসুম গরম আদা জল করে খেতে পারেন।

ব্যায়াম 

পিরিয়ডের ব্যথা লাঘবের জন্য ব্যায়াম করতে হবে। তলপেটের ব্যথার জন্য অনেক সময় ব্যায়াম করা অসম্ভব বা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে, আপনাকে হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাচলা স্বাভাবিক রাখতে হবে। 

যে খাবারগুলো খেতে হবে 

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান

পিরিয়ড চলাকালীন সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। এ সময় রক্তক্ষরণের ফলে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। ডিহাইড্রেশন এর ফলে ব্যথা বৃদ্ধি পায়, মাথা ঘুরে। পানি শূন্যতা থেকে বাঁচার জন্য পিরিয়ড চলাকালীন সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়মিত পানি পান করতে হবে।


আয়রন জাতীয় খাবার 

আয়রন নারী শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।আয়রনের ঘাটতির ফলে মাথাব্যথা, মাথা ঝিমানো, শরীর ব্যথা সহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। পিরিয়ড বা মাসিক চলাকালীন সময় একজন নারীকে তাই বেশি বেশি আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে। মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, পুঁইশাক, ডাটা শাক, খেজুর, এ জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। কোন ভাবেই যেন আয়রনের ঘাটতি না হয় এদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

ফল খেতে হবে 

ডিহাইড্রেশন দূর করে এ জাতীয় ফল যেমন: আপেল,তরমুজ, শসা,খিরা খেতে হবে। এ সময় ভিটামিন সি জাতীয় ফল শরীরের জন্য খুবই দরকার। কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও পেয়ারা, আমলকি, তেতুল, বড়ই, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। পটাশিয়াম ও ভিটামিনের উৎস হিসেবে কলা খেতে পারেন। কলা মানসিক বিষন্নতা, মেজাজ খিটখিটে ভাব দূর করে।

শাকসবজি খেতে হবে 

পিরিয়ড চলাকালীন সময় প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। শাকসবজিতে রয়েছে, ভিটামিন বি, আয়রন ও ফাইবার। ফাইবার পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য  দূর করে। ভিটামিন বি ও আয়রন হজম শক্তি বৃদ্ধি করে শরীর রাখে সুস্থ ও স্বাভাবিক।

ওমেগা থ্রি 

পিরিয়ড চলাকালীন সময় ওমেগা থ্রি,ফ্যাটি এসিড জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ব্যথার কারণে তলপেট অনেক সময় ফুলে যায়। এই ফোলা ভাব কমানোর জন্য ওমেগা থ্রি  জাতীয় খাবার খুবই কার্যকরী।

ডার্ক চকলেট

পিরিয়ড চলাকালীন সময় ডার্ক চকলেট হতে পারে খুবই ভালো একটি খাবার। এই সময় শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের খুবই প্রয়োজন। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন চকলেট এ প্রচুর চিনি থাকে। হ্যাঁ,চকলেট এ অনেক চিনি থাকে কিন্তু ডার্ক চকলেট হচ্ছে চিনি মুক্ত। ডার্ক চকলেট হচ্ছে  ম্যাগনেসিয়াম এ ভরপুর। ম্যাগনেসিয়াম আপনার ব্যথা উপশমে সহায়তা করবে।

আদা

ব্যথা উপশমের জন্য আদা কুচি করে খেতে পারেন। আদা ব্যথা হ্রাস করার জন্য খুবই কার্যকরী যা বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণায় প্রমাণিত।

যে খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা..

  • কফি পান এড়িয়ে চলতে হবে। কফি হচ্ছে একটি ক্যাফেইন  জাতীয় পানীয়। ক্যাফেইন যুক্ত খাবার ব্যথা বৃদ্ধির কারণ এবং অতিরিক্ত কফি পান করলে শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়।
  • সফট ড্রিংকস সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। সফট ড্রিংকস এ প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ ও ক্যাফেইন থাকে যা ব্যথার মাত্রা বৃদ্ধি করে।
  • পিরিয়ড কালীন সময় একজন মেয়ের শরীর অনেক দুর্বল থাকে। এই দুর্বল শরীরে উচ্চ ফ্যাট যুক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যা হয়। সুতরাং, এই সময় বার্গার, পিজ্জা,পাস্তা ইত্যাদি খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
  • দুগ্ধজাত খাবার খেলে হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। পিরিয়ড চলাকালীন সময় দুগ্ধজাত খাবার না খাওয়াই উত্তম।
  • ভাজাপোড়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া হতে পারে। এই বিশেষ মুহূর্তে এসব খাবার সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করতে হবে।
  • কাঁচা লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। 
  • পিরিয়ড চলাকালীন সময় লাল মাংস না খেয়ে মুরগি মাংস,মাছ খেতে পারেন।

ব্যথা উপশমে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম। 

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যায়াম করা খুবই জরুরী। কিন্তু, তলপেটে ব্যথার জন্য অনেক এর কাছে ব্যায়াম করা খুবই কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে, শ্বাস- প্রশ্বাসের ব্যায়াম হতে পারে উত্তম সমাধান। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে ব্যাথার তীব্রতা কমে। শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামের জন্য করনীয়:

সর্বপ্রথম, আপনাকে দেওয়ালে বা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসতে হবে। এরপর নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে পেট ফুলিয়ে কিছুক্ষণ পর তা মুখ দিয়ে বের করতে হবে। এভাবে পাঁচ থেকে দশ মিনিট শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে অনেক ভালো অনুভব করবেন।

যা অবশ্যই পালনীয়

  • ভারী কাজ করা যাবে না। রেস্টে থাকতে হবে। তবে স্বাভাবিক কাজগুলো করতে কোন বাধা নাই। 
  • অবশ্যই ,স্যানেটারী প্যাড ব্যবহার করতে হবে।
  • স্যানেটারী প্যাডের পরিবর্তে কাপড় ব্যবহার করলে তা হতে হবে নরম, শুকনো,পরিষ্কার এবং জীবনমুক্ত।
  • বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার ও পানি পান করতে হবে।


প্রিয় মানুষটির যত্ন নিন 

পিরিয়ড বা মাসিক চলাকালীন সময় একটি মেয়ের জন্য অনেক কষ্টকর‌। তলপেটে তীব্র ব্যথা, শরীরে ব্যথা, মাথা ব্যথা সহ নানা সমস্যায় ভুগে। মেজাজ থাকে প্রচন্ড খিটখিট। শারীরিক এ অবস্থার মধ্যেও আপনার প্রিয় মানুষটি আপনার জন্য রান্না করে, কাপড় কাঁচে, সংসারের নানা কাজ করে। আপনার- আমার উচিত আমাদের প্রিয় মানুষটির এ সময় একটু বিশেষ যত্ন নেওয়া। সংসারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা, পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, সুন্দর ব্যবহার করা। এতো টুকু তো তারা আমাদের কাছে থেকে ডিজার্ভ করে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url