স্বামী-স্ত্রী সহবাস বা মিলনের পূর্বের দোয়া
আল্লাহ , বিয়ের মাধ্যমে নর-নারীর যৌন সম্পর্ক কে হালাল করেছেন। যখন স্বামী স্ত্রী একত্রে মিলিত হয় তখন আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। কিন্তু, শয়তান খুশি হয় না। সহবাসের পূর্বে দোয়া পাঠ করলে শয়তান কুনজর দিতে পারে না। আজকের আর্টিকেলটিতে সহবাসের দোয়া ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানব।
وَأَنكِحُوا الأَيامى مِنكُم وَالصّالِحينَ مِن عِبادِكُم وَإِمائِكُم إِن يَكونوا فُقَراءَ يُغنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضلِهِ وَاللَّهُ واسِعٌ عَليمٌ
অর্থ:"আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।"
সহবাসের দোয়া বাংলা উচ্চারণ সহ
الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা অজান্নিবিশ শায়ত্বনা মা রাযাকতানা।
অর্থঃ "আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি। হে আল্লাহ! তুমি শয়তানকে আমাদের নিকট থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে (সন্তান) দান করবে তার থেকেও শয়তানকে দুরে রাখ।"
সহবাসের দোয়ার ফজিলত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, "যখন তোমাদের কেউ আপন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন উক্ত দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয়। এ মিলনে যদি তাদের ভাগ্যে কোনো সন্তান আসে, সে সন্তানকে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারবে নাজখ
[বুখারি, হাদিস : ৬৩৮৮]
হজরত আলী (রা:) আনহু বলেন"সে ব্যক্তি (স্বামী ও স্ত্রী) সহবাসের ইচ্ছা করে এবং তার নিয়ত যদি এই হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে নিজেকে দূরে এবং আমার মন ঠিক রাখবো আর জন্ম নেবে নেককার ও সৎ সন্তান। এই নিয়তে (স্ত্রীর সাথে সহবাস) মিলন করলে সওয়ার হওয়ার সাথে সাথে নেক উদ্দেশ্যে পূরণও হবে।"
দোয়া পড়তে ভুলে গেলে কি বাচ্চার উপর শয়তানের প্রভাব পড়বে?
উক্ত দোয়াতে বলা হয়েছে, বাচ্চাকে শয়তান থেকে রক্ষা করা হবে, শয়তানের অনুগত শিশুর ক্ষতি করতে পারবে না। এখন আপনি যদি দোয়া পড়তে ভুলে যান তাহলে বাচ্চার উপর শয়তানের প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়।
আবার কেউ বলেছেন, শয়তান তাকে পরাস্ত করতে পারবে না। অথবা শয়তান তাকে কুফরির মাধ্যমে গোমরাহ করতে পারবে না।
কাজি আয়াজ (রহ.) বলেছেন, ‘তার ক্ষতি করতে পারবে না’ এর অর্থ কেউ বলেছেন- শয়তান তাকে পরাস্ত করতে পারবে না। কেউ বলেছেন, জন্মের সময় ও অন্যান্য সন্তানের বিপরীতে— শয়তান তাকে খোঁচা দেবে না।
তিনি আরও বলেন, তবে সব ধরনের ক্ষতি, শয়তানি ওয়াসওয়াসা ও পথভ্রষ্টতা থেকে সে সুরক্ষা পাবে— এ অর্থ কেউ করেন নি।
(ইমাম নববি (রহ.) ‘সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যগ্রন্থে’ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
দিনের বেলা কি সহবাস করা জায়েজ
আল্লাহ বিয়ের মাধ্যমে যৌন সম্পর্ককে হালাল করেছেন। বিবাহিত নর-নারী তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করে থাকে সহবাসের মাধ্যমে। স্বামী ও স্ত্রী যখন ঘনিষ্ঠ সময় কাটায় তখন আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। স্বামী ও স্ত্রী সম্পর্ক যেহেতু হালাল সেহেতু তারা দিনের যেকোনো সময় মিলিত হতে পারে। হাদিস বা কুরআনে নির্দিষ্ট কোন সময়ের বাধা ধরা নিয়ম নেই বা নিষেধ নেই যে ঐ সময় মিলিত হওয়া যাবে না। তবে, রোজা থাকা অবস্থায় দিনে সহবাস করা যাবে না এটা হারাম ।তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। স্বামী-স্ত্রী যদি হজ বা উমরাহ পালনকারী হন তবে ইহরাম অবস্থায় সহবাস হারাম। এছাড়া,স্ত্রীর হায়েয চলাকালীন সহবাস নিষিদ্ধ।
সহবাসের পর যা খাবেন
সহবাসের পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানি পান করার ফলে ডি হাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। সহবাসের পর শরীরে দুর্বলতা অনুভূত হয়। এই দুর্বলতা ও শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য সহবাসের পর খেজুর, চিনা বাদাম,কাঠবাদাম,কাজুবাদাম,আখরোট,দই,দুধ, ডার্ক চকলেট, আপেল, আঙ্গুর,কলা ইত্যাদি খেতে পারেন। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, আয়রন,প্রোটিন যা আপনার শরীরের দুর্বলতা দূর ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে যৌন আকাঙ্ক্ষা ধরে রাখবে।
লেখকের কিছু কথা:
শয়তান সর্বদা চায়, আমাদের গোমরা করতে। তার প্রভাব আমাদের উপর বিস্তার করতে। আমাদের সন্তান যেন শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পায়, নেককার হয় এই নিয়তে আমরা সহবাসের পূর্বে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো দোয়াটি পাঠ করব, ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে এবং এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের পাশেই থাকুন।
ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url