আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হওয়ার ৭টি লক্ষণ

আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা এবং তিনি আমাদের তাকদিরের নির্ধারক। তিনি আমাদের শাস্তি দেন, তিনি আমাদের পুরস্কৃত করেন। তিনি সকল কল্যাণ অকল্যাণের মালিক।এই-সাতটি-লক্ষণ-দেখে-বুঝুন-আল্লাহ-আপনাকে-পুরস্কৃত-করতে-চাচ্ছে

আপনি কি কখনো এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন; জীবন যেন বারবার আপনার ধৈর্যশক্তি পরীক্ষা করছে। হয়তো এমন একটি সময় পার করছেন, যখন সবকিছু কঠিন মনে হচ্ছে। ব্যক্তিগত চাপ, আবেগের সংগ্রাম বা এমন একটি অবস্থা যেখানে আপনি নিজেকে আটকে পড়া অনুভব করেছেন। এসবের মধ্যে হতাশা আশা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, আল্লাহ আল কোরআনে বলেছেন"আল্লাহ কখনো কোন প্রাণকে তার সামর্থ্য বেশি বোঝা দেন না"সূরা বাকার: ২৮৬। 

হয়তো আল্লাহ আপনার জন্য এমন কিছু প্রস্তুত করছেন, যা আপনার জীবনকে একেবারে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলবে। একবার ভাবুন যদি আপনার সব সংগ্রাম আল্লাহর কোন বড় পরিকল্পনার একটি অংশ হয়।। আজকে আমরা আলোচনা করব এমন সাতটি লক্ষণ যা ইঙ্গিত করে আল্লাহ আপনার জন্য নীরবে বড় কিছু তৈরি করছেন। আপনি যদি নিজেকে হতাশ এবং অনিশ্চিত অবস্থায় খুঁজে পান তবে আজকের আলোচনাটি হতে পারে সেই আলো যা আপনাকে এগিয়ে যাওয়া শক্তি দিবে।।

সৌভাগ্যের সাতটি লক্ষণ

ধৈর্যের পরীক্ষা 

অনেক সময় এমন হয় যে আমাদের একটার পর একটা বিপদ আসতে থাকে। আমাদের মনে হয় সবকিছু আমাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কিন্তু এর পিছনেও একটা গভীর পরিকল্পনা আছ।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"যখন আল্লাহ তার বান্দার মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে দুনিয়াতে পরীক্ষা দেন"[সহি বুখারী]। 

হযরত বেলাল (রাঃ) এর কথা চিন্তা করুন, তিনি ইসলাম ধর্ম কবুল করার পর নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি, উত্তপ্ত মরুভূমির বুকে, তাঁর বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে হাত-পা বেঁধে সূর্যের দিকে মুখ করে সারাদিন রাখা হয়েছিল। তবুও তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেননি। একটুও ধৈর্য হারাননি। আল্লাহ তাঁর ধৈর্যে সন্তুষ্টি হয়ে পুরস্কার স্বরূপ ইসলামের প্রথম মোয়াজ্জিমের মর্যাদা দিয়েছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে তাঁর পায়ের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। আপনার জীবনে হয়তো খারাপ সময় চলছে। তার মানে এই না, আপনাকে ভেঙে ফেলার জন্য। বরং, আপনাকে ভবিষ্যতে পুরস্কার প্রদানের জন্য মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ সুবহানুতায়ালা প্রস্তুত করছেন। 

অপ্রয়োজনীয় জিনিস ছেড়ে দেওয়া 

আল্লাহ যখন আপনাকে কোন বড় সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করছেন তখন আপনি এমন কিছু জিনিস থেকে দূরে সরে যাবেন যা আপনার কোন উপকারে আসছে না। হতে পারে সেটা সম্পর্ক, কোন অভ্যাস, আপনার প্রিয় কোন বস্তু বা মানুষ। কষ্টকর হলেও এগুলো ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে আপনাকে নতুন সফলতার দিকে নিয়ে যাবে। আল্লাহ বলেছেন"হয়তো তুমি কোন কিছুকে অপছন্দ কর অথচ তা তোমার জন্য কল্যাণকর আর হয়তো তুমি কোন কিছুকে ভালোবাসো অথচ তা তোমার জন্য অকল্যাণকর। [সূরা বাকারা: ২১৬]।

আপনার জীবনে হয়তো এভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যা আপনার কাছে অধিক প্রিয় তা ছেড়ে যাওয়া কঠিন হতে পারে। কিন্তু, যখন আপনার প্রিয় জিনিসগুলো আপনার জীবন থেকে সরে যায় তখন তো একটা ভালো ইঙ্গিত বহন করে তা হচ্ছে আল্লাহ আপনার জন্য পুরস্কারের মঞ্চ তৈরি করছেন।

ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি 

আপনি যদি মনে করেন জীবনের কঠিন মুহূর্তে আপনার ধৈর্য অধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে তাহলে মনে করবেন আল্লাহ আপনাকে একটি বড় কোন পরিকল্পনার জন্য প্রস্তুত করছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"যখন কোন মুসলমান কষ্ট ক্লান্তি বা রোগে আক্রান্ত হয় তখন আল্লাহ তার গুনা মাফ করেন"।

এর মাধ্যমে বোঝা যায় ধৈর্য এবং কষ্টের মাধ্যম গুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামক। পাশাপাশি এটি বড় কল্যাণের পূর্বাভাস। হযরত আইয়ুব আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী পড়লে দেখতে পাই যে, জীবনের কঠিন সময় তিনি ধৈর্য শক্তির মাধ্যমে আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকলেও তিনি আল্লাহর উপর সর্বদা অবিচল ছিলেন। কখনো বিন্দুমাত্র ধৈর্য হারাননি। হযরত আইয়ুব আলাইহি ওয়াসাল্লাম  দীর্ঘ ১৮ বছর শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি একসময় অনেক ধনী এবং প্রভাবশালী ছিলেন। কিন্তু, আল্লাহ তাকে পরীক্ষা করার জন্য তার সমস্ত ধন সম্পদ এবং স্বাস্থ্য কেড়ে নেন।হঠাৎ যখন তার পুরো শরীর এ পোকা দেখা দেয়। মাংসগুলো প্রকার খাবারে পরিণত হয়েছিল, তিনি তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন কিন্তু তবুও তিনি আল্লাহর উপর বিশ্বাস হারান নি। ধৈর্য এবং ঈমানের মাধ্যমে তিনি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সর্বশেষে আল্লাহ, তাকে সবকিছু ফিরিয়ে দেন অধিক বরকত সহকারে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম, কঠিন সময় আসলেও আল্লাহ আমাদের ভালো কিছুই দেন। হয়তো আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা ও শেষ হতে চলেছে।।

প্রতারিত হওয়া

জীবনে আমরা অনেক সময় একের পর এক ব্যর্থতার সম্মুখীন হই। হতে পারে সেটা চাকরি জীবনে, ব্যক্তিগত জীবনে অথবা নিজেদের লক্ষ্য পূরণে। এমন সময় মনে হয় যে কোন কিছু ঠিকমতো হচ্ছে না। কিন্তু মনে রাখবেন এটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য পরীক্ষা হতে পারে। যেমন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের কথা চিন্তা করুন। তার ভাইয়েরা তাকে প্রতারিত করে মরুভূমির বুকে গভীর কূপ এ ফেলে দিয়েছিল। যা ছিল চরম দুঃখ ও কষ্টের হৃদয়বিদারক একটি মুহূর্ত। কিন্তু আল্লাহ সে প্রতারণা কে বড় সফলতা হিসেবে পরিণত করেছিলেন। ইউসুফ আলাইহিস ওয়াসাল্লাম শেষ পর্যন্ত মিশরের মন্ত্রী হয়েছিলেন। আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছিলেন তাঁর ধৈর্য ও আল্লাহর উপর বিশ্বাসে অবিচল থাকায়। আমাদের জীবনে ব্যর্থতা ও আল্লাহর পরিকল্পনা অংশ হতে পারে। যা হয়তো আমাদের কোন বড় সাফল্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

কিছু মানুষের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া 

আল্লাহ যখন আপনাকে বড় কোন লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায় তখন দেখবেন কিছু মানুষের আপনার দূরত্ব বেড়ে যাবে। হয়তো সেসব ব্যক্তি আপনার জীবনের জন্য তখন আর গুরুত্বপূর্ণ না অথবা তারা আপনার লক্ষ্য পূরণের অন্তরায়। এটা হতাশা জনক মনে হতে পারে। কিন্তু এটা মনে রাখুন, আল্লাহ আপনাকে নতুন ইতিবাচক সম্পর্কে জন্য প্রস্তুত করছেন। যা আপনার জীবনকে আর সমৃদ্ধ করবে। হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে দেখতে পাই যে, তিনি যখন আল্লাহর নির্দেশ মেনে তাহলে পথে চলতে থাকেন। তখন তার নিজের পিতার সাথেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তার পিতা মূর্তি পূজা করতেন এবং মূর্তি তৈরি করে তা বিক্রয় করতেন।যা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ছিল। আল্লাহ তাঁকে নতুন পথে, ধার্মিক ও সঠিক মানুষের সাথে গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। যদিও তার জন্য একটি কষ্টকর ছিল। কিন্তু,এটি থেকে আল্লাহর পথে প্রিয় হতে সাহায্য করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"মানুষের ধর্ম তার বন্ধুর ধর্মের উপর নির্ভর করে"(সুনানে আবু দাউদ)।

এর মাধ্যমে এটা বোঝা যায় যে আমরা তাদের সাথে চলাফেরা করি,আড্ডা দেয়, সময় কাটায় তাদের আচার-আচরণ ও চরিত্রের দ্বারা আমরা প্রভাবিত হই। সুতরাং ভালো এবং ধার্মিক বন্ধু খুঁজে নেওয়া এবং তাদের সহবতে থাকে আমাদের দায়িত্ব। যদি দেখতে পান যে, কিছু সম্পর্ক ঠিক ভাবে সামনে এগোচ্ছে না, শিথিল হয়ে যাচ্ছে তাহলে হতাশ হবেন না।ভেবে নিবেন যে,আপনাকে নিয়ে এটি আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ।

সহায়ক মানুষদের পাশে পাওয়া

আল্লাহ কখনো কখনো এমন মানুষের আপনার জীবনে পাঠান। যারা আপনার উন্নতি এবং সাফল্যের পথে সহায়ক হিসেবে দাঁড়ায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু উদাহরণ হিসেবে দেখতে পাই। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহযোগী ছিলেন। প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে যেমন হিজরতের মুহূর্তে গুহায় আশ্রয় নেওয়ার সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর পাশে ছিলেন। যদি আপনি এমন মানুষকে পাশে পান যারা আপনাকে উৎসাহিত করেন, ইতিবাচকভাবে প্রবাহিত করেন। তাহলে ভেবে নিবেন, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামক। এ মানুষগুলো আল্লাহর মেহেরবানীর নিদর্শন হিসেবে আপনার জীবনে আসে। তারা আপনার জীবনে এমন শক্তির সমর্থন নিয়ে আসে যা আপনাকে আল্লাহর পথে চলতে এবং আরো উন্নতি করতে সাহায্য করবে। 

অতীতকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া 

সবচেয়ে বড় চিহ্ন হচ্ছে যখন আপনি অতীতের সাফল্য ব্যর্থতা কষ্ট হতাশা ছেড়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করেন। আল্লাহ বলেন"তোমরা দুর্বল হয়ো না,দুঃখ করো না, তোমরা হবে বিজয়ী যদি তোমরা ঈমানদার হও"  [সূরা আল ইমরানঃ ১৩:]

অতীতের দুঃখ হতাশা কষ্ট পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রচেষ্টা হতে পারে আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় পরিবর্তনের চিহ্ন হতে পারে। 

উপরে উল্লেখিত লক্ষণ গুলো যদি আপনার মধ্যে থাকে বা দেখা দেয় তাহলে বুঝবেন মহান রাব্বুল আলামিন আপনাকে বড় সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করছেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url