সফল হওয়ার আটটি জাপানি কৌশল

আমরা জীবনে অনেক পরিকল্পনা করি। কিন্তু, প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোন পরিকল্পনা বাস্তব করতে পারি না। বারবার পরিকল্পনার বাইরে চলে যায়। কাজ করতে চাই কিন্তু কমফোর্ট জন ছাড়তে পারি না। আমাদের মধ্যে সবসময় অলসতা কাজ করে। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। 

জীবনে-নিশ্চিত-সফল-হওয়ার-আটটি-জাপানি-টিপস

আজকে আমরা অলসতা কাটিয়ে জীবনে সফল হওয়ার জন্য জাপানি আটটি কৌশল শিখব। যা আমাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে এবং সফল হতে সাহায্য করবে।

জীবনে সফল হওয়ার ৮টি জাপানি কৌশল

কাইজেন 

কাইজেন একটি জাপানি শব্দ।

Kai mean change.
Zen mean good.

Change For Good অর্থাৎ কাইজেন মানে ভালোর জন্য পরিবর্তনছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে ভালো কিছু অর্জন করা কে কাইজেন বলে। আমাদের জীবনের সাফল্য অর্জনের জন্য আমাদের কাজ এবং সময়কে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করতে হবে। তাহলে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। ধরুন, আপনি একটি নতুন প্রজেক্ট এর পরিকল্পনা করেছেন কিন্তু সময়ের অভাবে তা করতে পারছেন না। আপনি প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা ১০ থেকে ১৫ মিনিট কমিয়ে দিন, তাহলে সপ্তাহে এক থেকে দুই ঘন্টা বাড়তি সময় পাবেন।। এ সময়ে আপনি আপনার প্রজেক্টের কাজ শুরু করতে পারেন।
প্রতিদিন আপনি ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠতে পারেন। এরপর ওয়ার্ক আউট সেশন করতে পারেন। এ ওয়ার্ক আউট সেশন আপনাকে প্রফুল্ল এবং এনার্জিটিক  রাখবে।
আবার,আপনার ডায়েটে পরিবর্তন আনতে হলে প্রতিদিন একটু একটু করে পরিবর্তন করুন।
পড়াশোনা দীর্ঘ সময় করার জন্য প্রতিদিন একটু একটু করে সময় বৃদ্ধি করুন।
প্রতিদিন একটি করে সিগারেট কম খেয়ে আপনার ধূমপানের অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেন। আপনি কাইজেন কৌশল ব্যবহার করে আপনার জীবনের যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। সব সময় ইতিবাচক থাকুন, নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, কখনো হতাশ হবেন না। ইনশাআল্লাহ,আপনিও পারবেন।

ইকিগাই

ইকিগাই অর্থ: Purpose to live.. জাপানের ওকিনাওয়া নামে একটি দ্বীপ আছে। সেখানকার মানুষ ১০০ বছর এর বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে তারা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কর্মঠ থাকে, কখনো অবসর নেয় না। এর ফলে তারা অসুস্থ হয় না বরং সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর জীবন যাপন করে। কারণ,তার একটা কৌশল অবলম্বন করে। তা হচ্ছে ইকিগাই। আসুন আমরা জানার চেষ্টা করি, ইকিগাই কেন এত জনপ্রিয়। পড়াশোনা শেষ হলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের চারপাশের মানুষ আমাদের নানা রকম পরামর্শ দেয়। কেউ বলে তুমি যে কাজে মজা পাও, উপভোগ করো, তুমি সে কাজটাই করো। অন্য আরেকজন পরামর্শ দেয়, যে কাজ করলে বেশি অর্থ উপার্জন করা যাবে তোমার সেই কাজটিই করা উচিত। এখন অন্যের পরামর্শ শুনে, আমরা যদি কাজে লেগে পড়ি তাহলে জীবনের নেমে আসে চরম দুর্দশা, ভারসাম্য রক্ষা করা যায় না। কারণ, একেক জন একেক রকম পরামর্শ দিবে ফলে খিচুড়ি রান্না হয়ে যাবে।

ইকিগাই আপনার জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। জাপানি এই কৌশল থেকে বোঝা যায় পৃথিবীতে চারটি কাজের ধরন আছে। আপনি যে কাজ ভালো পারেন তা শিখে যদি উপার্জন করতে পারেন তাহলে সেটাই আপনার ফ্যাশন। আপনার পছন্দের কাজ যখন আপনার প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে তখন সেটা মিশন। আবার একই কাজ যখন পৃথিবীর জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে তখন এটাই আপনার প্রফেশন। যেমন ধরুন, নেইমার জুনিয়র ফুটবল খেলা পছন্দ করেন। ফুটবলকে তার আবেগের জায়গায় বসিয়েছেন এরপর তিনি ফুটবল থেকেই অর্থ উপার্জন করা শুরু করেছেন। এবং এটাই তার প্রফেশন হয়ে উঠেছে। নেইমারের খেলা দেখে সবাই বিনোদন পাই যা ছিল দুনিয়ার প্রয়োজন। এভাবেই ফুটবল তার পেশা হয়ে ওঠে। আপনি পৃথিবীর সকল মানুষদের লক্ষ্য করে দেখবেন তারা সকলেই ইকিগায় অনুসরণ করে সফল হয়েছেন। আপনিও আপনার জীবনে ইকিগায় অনুসরণ করে সফল হতে পারেন। 

পোমোডর

 প্রোমোডর একটি জাপানি শব্দ এর অর্থ টমেটো সস।

এই কৌশলটি আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি করবে। এ কৌশলটি অবলম্বন করে আপনি যে কোন কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারবেন। প্রোমোড টেকনিক কি আসুন জেনে নি। প্রোমোড  টেকনিকটি আবিষ্কার করেছেন Developer Francesco Cirillo. ফ্রান্সিসকো তার কলেজ জীবনে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়েছিল। এসাইনমেন্ট শেষ করতে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল। এরপর তিনি এই কৌশলটি আবিষ্কার করেন এবং এরপর থেকে তাকে আর কষ্ট করতে হয়নি। এই কৌশলটি অনুসরণ করে আমরা আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলতে পারি। তিনি তার কাজগুলোকে অনেক ছোট ছোট ভাগে ভাগ করেছিল। ২৫ মিনিট করে প্রতিটা সেশন এ সময় দিতেন। একটা সেশন শেষ হলে ৫ মিনিট বিরতি নিতেন। এভাবে চারটি সেশন শেষ হলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট একটি লম্বা বিরতি নিত। এতে কাজ হয় অতি দ্রুত এবং ক্লান্তিহীন। প্রোমোডরো কৌশলটি শুধু জাপানে না বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। আমাদের মস্তিষ্ক মাউন্ট এভারেস্ট পরিমাণ কাজ করতে পারে। কিন্তু, আপনি যখন সব কাজকে একসাথে চিন্তা ভাবনা করেন বা সব কাজ একসাথে করতে চাইবেন তখন আমাদের ব্রেন নেতিবাচক চিন্তা করা শুরু করে আর পরবর্তীতে কাজটি করাই হয়ে ওঠে না।কিন্তু আমরা যখন কাজকে ছোট ছোট সেশনে ভাগ করব তখন আমাদের ব্রেন চিন্তা করা শুরু করবে, আমরা রিলাক্সে কাজ শেষ করতে পারবো। ২৫ মিনিটের কাজ ভাগ করে নিলে খুব সহজে ঐ কাজটি ২৫ মিনিটে শেষ করতে পারবো।সুতরাং আমরা একটানা চার পাঁচ ঘন্টার না কাজ করে ২৫ মিনিট করে প্রতিটি সেশন এ ভাগ করে করতে পারি। এতে আমাদের ফোকাস ধরে রাখা আমাদের জন্য সহজ হবে। বর্তমান সময়ে মনোযোগ ধরে রাখার সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে আমাদের স্মার্টফোন। কিছুক্ষণ পর পর সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন চেক করার কথা আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। প্রোমোডার ও কৌশলের মাধ্যমে মোবাইল চেক করার বদ অভ্যাসটি আমরা খুব সহজে পরিবর্তন করতে পারি। ব্রেক না নিয়ে কাজ করলে আমরা যে ফলাফল পাব, ব্রেক নিয়ে কাজ করলে আমরা তার কয়েক গুণ বেশি ফল পাব।

কাইকাকু

কাইকাকু একটি জাপানি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে Radial Change. অর্থাৎ আমূল পরিবর্তন। কাইকাকু বুঝতে হলে তার আগে কাইজেন এবং কাই কাকুর পার্থক্য বুঝতে হবে। কাইজেন হচ্ছে কোন একটি বড় লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাজগুলোকে ছোট ছোট পরিবর্তন করা। আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মৌলিক কিছু পরিবর্তন করা। কাইকাকু এই মৌলিক পরিবর্তন সম্পর্কে বলে। যার মাধ্যমে আপনি কোন সময় কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। শিল্প এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে এ কৌশলটি বহু পূর্ব থেকে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। বিশেষ করে জাপানি কোম্পানিতে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টয়োটা এই কাইকুকা অনুসরণ করে সফল হয়েছে। আমাদের মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে পারে যে মানুষের মস্তিষ্ক পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না বা চাই না, তাহলে এই রেডিয়াল চেঞ্জ ব্রেন কিভাবে সেট করে। এ প্রশ্নের উত্তর পাবেন ফাইভ ওয়ে টেকনিকে। বড় কোন পরিবর্তনের আগে আপনার মনকে মিনিমাম পাঁচবার প্রশ্ন করা উচিত আপনি কেন এই পরিবর্তন করতে চান। এভাবে আপনি আপনার সমস্যার শিকড় খুঁজে পেতে পারেন। শেষে আপনি সেলফ মোটিভেটেড কোন উত্তর পাবেন যার মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্ক পরিবর্তন সম্পর্কে ইতিবাচক হয়ে উঠবে। যাতে আপনার পরিবর্তন করার সহজ হবে। 

তাত্ত্বিক বিষয়ে তো আমরা জানলাম। আসুন দেখি কিভাবে বাস্তবে প্রয়োগ করা যায়। আপনি পড়াশোনা করতে বসলে মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না। মনোযোগ শুধু বাইরের জগতে ঘোরাফেরা করে। ফোন ,টেলিভিশন, ফেসবুক মেসেঞ্জার ইত্যাদি ইউজ করেন। তখন আপনার মনকে পাঁচটি প্রশ্ন করুন।
কেন আমি পড়াশোনা করতে পারি না?
 এর উত্তরে পাবেন আপনার মনোযোগ মোবাইল ফোনে থাকার জন্য পড়াশোনা করতে পারেন না
দ্বিতীয়ত, মোবাইলে কেন মনোযোগ যাচ্ছে?
এর উত্তর পাবেন কিছুক্ষণ পরপর মোবাইলের নোটিফিকেশনের কারণে মনোযোগ মোবাইলে চলে যাচ্ছে।
তৃতীয়ত, কেন আমি নোটিফিকেশন চেক করি?
উত্তর সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে কিনা, পোস্টে লাইক, কমেন্ট করেছে কিনা তা চেক করতে।
চতুর্থ, কেন পড়ার সময় আমার সামনে মোবাইল ছিল?
এর উত্তর আসবে, ২৪ ঘন্টা ফোন সাথে রাখার অভ্যাস। 

এবার আপনি তাহলে শিকড়ে পৌঁছাতে পারলেন তো? পড়াশোনায় মনোযোগ ছুটে যাওয়ার কারণ হচ্ছে মোবাইল পাশে রাখাআপনাকে এবার পরিবর্তন আনতেই হবে। যখন আপনি গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ করবেন তখন মোবাইল ফোন পাশে রাখা যাবে না। মোবাইল ফোন যে পাশে রাখা জরুরি হয় তাহলে ফ্লাইট মোড অথবা ডাটা কানেকশন অফ করে রাখবেন। যার কারনে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় মনোযোগ অন্য কোথাও যাবে না। এভাবেই এই কৌশলটি প্রয়োগ করে যে কোন সমস্যার শিকড় বের করতে পারবেন এবং সমস্যা সমাধান খুঁজে বের করতে পারবেন। ফলে, আপনার জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারবেন।

জীবনে-নিশ্চিত-সফল-হওয়ার-আটটি-জাপানি-টিপস

SSS

প্রথম,S হলো Seiri (সংগঠিত করা)
দ্বিতীয়,S হলো Seiton(পরিপাটি)
তৃতীয়,S হলো Seiso (পরিচ্ছন্নতা)

যেটা এমন একটি কৌশল যা আপনার জীবনে প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এবং যেকোনো ধরনের অপচয় কমাতে পারে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল, হেলথ কেয়ার, এডুকেশন সকল ক্ষেত্রে এই কৌশলটি ব্যবহার করে বড় কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারবেন আপনিও। এই কৌশলটি বিভিন্ন সেক্টরে এবং ব্যক্তিগত জীবনেও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ কৌশল ব্যবহার করে আপনি আপনার জীবনের দৈনন্দিন কাজগুলো আরো বেশি সহজ করে তুলতে পারেন। ধরুন,আপনার ঘরটি অগোছালো আছে, সেখানে থাকতে অবশ্যই আপনার ভালো লাগবে না। আপনার অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে পাবেন না। এ সময়ের অপচয় আপনার মূল কাছ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখবে। তাতে আপনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়বেনSSS কৌশলটি আপনার মূল্যবান সময় এবং শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করবে। SSS মানেই হচ্ছে প্রথমত সাজানো, দ্বিতীয়তঃ: ক্রমানুসারে সাজানো, তৃতীয়ত:পরিচ্ছন্ন রাখা। সবার আগে আপনার কাজের ডেক্স পরিষ্কার রাখতে হবে, তারপর আপনার জিনিসগুলো এমন ভাবে সাজাতে হবে যাতে খোঁজার জন্য সময়ের অপচয় না হয়। আপনি আপনার জিনিসগুলোকে রুটিন অনুযায়ী সাজিয়ে নিন। হতে পারে সেটা আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস চশমা, ঘড়ি,চাবি জুতা। সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনের সময় সহজে পাওয়া যায়। আপনাকে সবসময় আপনার হাতের কাছের জিনিস গুলোকে চকচকে রাখতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আপনার মনে পজিটিভিটি নিয়ে আসে। যা আপনাকে কাজ করতে মোটিভেট করবে। যদি আপনার পড়ার টেবিলে বইগুলো এরকম হলে থাকে তাহলে অবশ্যই পড়াই মনোযোগ আসবে না। আবার প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে না থাকলেও কাজের স্পিড নষ্ট হবে। সবকিছু পরিষ্কার এবং সাজানো থাকলে দু'ঘণ্টার কাজ এক ঘন্টায় করা সম্ভব। 

দি রুল অফ থ্রি 

এই কৌশলটি আপনাকে সময়ের কাজ সময় করতে সাহায্য করবে। আপনাকে ট্র্যাক-এ রাখতে সাহায্য করবে। অনেক সময় আমরা উৎসাহ নিয়ে কাজ শুরু করি, কিন্তু কিছু সময় পর ট্র্যাক হারিয়ে ফেল। আমাদের জীবনে প্রতিদিন অনেক অনেক কাজ আসে কিন্তু মস্তিষ্কের সহজ কাজটি করতে আগে অনুপ্রাণিত করে। যার কারণে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ফেলে রেখে সহজ কাজটাই আগে শুরু করি। ধরুন, আপনাকে এসাইনমেন্ট লিখতে হবে। মস্তিষ্ক আপনাকে বলবে, চল একটু মুভি দেখি,একটু নাটক দেখি, একটু বন্ধুদের সাথে অনলাইনে চ্যাট করি। এভাবে মস্তিষ্ক আপনার সহজ কাজগুলো আগে করতে প্রেসার দিবে। আপনিও সেটা করতে থাকবেন। দিনশেষে আপনি অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে না পেরে বলবেন দিনটা কত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে গেল। অথচ আপনি যদি চাইতেন তাহলে বাকি কাজগুলো না করে এসাইনমেইন্টটা আরামে লিখতে পারতেন। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যই রুলস থ্রি তৈরি করা হয়েছে। এই কৌশলে ভিত্তিতে, প্রতিদিন সকালে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নোট করুন। সকালে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পর বাকি কাজগুলো দিনের শেষে করুন। এর ফলে কখনো ক্লান্তিবোধ করবেন না। আর আপনার কাজগুলোও সময় মত হয়ে যাবে।

দি যেন অফ মাইন্ডফুলনেস

এটা এমন একটা কৌশল যা কয়েক বছর ধরে আলোচিত হয়েছে। অনেকে মনে করেন এটা হচ্ছে আধ্যাত্মিকতা। তবে জীবনে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই কৌশলটি আমাদের জীবনে সব দিক থেকে সাহায্য করবে। হতে পারে সেটা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা অথবা জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো। অলসতা কাটিয়ে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো মাইন্ডফুলনেসের মঞ্জিল। বর্তমান মুহূর্তের মধ্যে না থেকে, অতীত এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকানো। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো কেন আমাদের সমস্যা হচ্ছে। অথবা কেন আমরা কাজে বিলম্ব করেছি। একবার বুঝতে পারলে, কাইজেন এবং কাইকাকু প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। কাইকাকু এবং কাইজেন কোন কাজেই আসবে না যদি না আপনার মাইন্ডফুলনেস ঠিক থাকে। মাইন্ডফুলনেস বা মননশীলতার অনুশীলন আমাদের মস্তিষ্কের উন্নতি করে। মস্তিষ্কের Temporoparietal and Cerebellar অঞ্চল জাগ্রত হয় যার ফলে আমাদের স্মৃতি,সহানুভূতি,যুক্তিবাদী চিন্তার মত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে। 

আমরা কিভাবে এটি করব? 

প্রতিদিন ১০ মিনিট সময় বের করতে হবে। এক জায়গায় বসে থেকে নিজেকে অনুভব করতে হবে। এবার আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস কে অনুভব করুন। আপনার যত চিন্তা আসুক না কেন আপনি এর বিচার করবেন না। চিন্তার ভেতর না ঢুকে তাদেরকে প্রবাহিত হতে সুযোগ দিন। মনে করুন, আপনি রাস্তায় আছেন। আপনার আশপাশ দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে। আপনি গাড়ি পিছনে দৌড়াবেন না। আপনি কেবল গাড়ির দিকে তাকালেন। আপনার চিন্তা গুলো কে ঠিক একই ভাবে দেখবেন। কিছুদিন পর দেখবেন আপনি একজন ব্যতিক্রম মানুষ হয়ে উঠেছেন। আপনার মধ্যে একটি অন্যরকম শক্তি কাজ করবে। যা অন্যদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পুরো বিশ্বের অল্প কিছু মানুষ এই মাইন্ডফুলনেস চর্চা করে।

সুকুনিন স্পিট

জাপানের একটি বিষয় লক্ষ্য করে দেখবেন, আজকে তারা কখনো ছোট করে দেখে না। তারা সকল ধরনের কাজ করে। কাজ যেরকমই হোক না কেন তারা সেই কাজে দক্ষতা অর্জন করতে চায়। তারা দেশের জন্য নিজের দক্ষতার প্রয়োগ ঘটায়। তারা কাজের প্রতি খুবই প্রফেশনাল, এবং নিষ্ঠার সাথে কাজগুলো করে থাকে। এই কারণে জাপানিরা প্রতিটা ক্ষেত্রে সফল হয়। তারা প্রতিটা কাজ এত ডেডিকেশন দিয়ে করে যে বিশ্ব তাদের স্যালুট করে। আপনিও যে কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকুন না কেন, সে কাজটি নিষ্ঠা এবং ডেডিকেশনের সাথে করতে হবে। কাজের মধ্যে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি আধ্যাত্মিকতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ ও বিবেচনা করুন। আপনি যখন আপনার কাজ কে সম্মান করবেন, কাজকে আপন করে দিবেন। তখন কাজ আপনাকে সম্মান করবে এবং আপনাকে সফল করে তুলবে।

আমাদের জীবনে সফলতার প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে অলসতা এবং পরিকল্পনাহীন কাজ। আমাদের জীবনে জাপানি এই আটটি কৌশল অনুসরণ এবং বাস্তবায়ন করতে পারলে ইনশাআল্লাহ আমরা জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সফল হব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url