বিদায় হজের ভাষণ ও তার তাৎপর্য

সূর্যের আলো যেমন পৃথিবীকে আলোকিত করে ঠিক তেমনি বিদায় হজের ভাষণ আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ। শান্তিময় পৃথিবী ও মানব হৃদয় বিনির্মাণে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ হচ্ছে বিদায় হজের ভাষণ। এতে কোন সন্দেহ নেই!

বিদায়-হজের-ভাষণ-ও-তার-তাৎপর্য

বিদায় হজের ভাষণ কি?

বিদায় হজের ভাষণ সমগ্র ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী। বিদায় হজে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তিন দিন ভাষণ প্রদান করেছিলেন।৯ই জিলহজ আরাফাতের ময়দানে,১০ এ জিলহজ কুরবানীর দিনে মিনায়, ১২ই জিলহজ মিনায়। এই তিন দিনের সম্মিলিত বাণীকে  বিদায় হজের ভাষণ বলা হয়ে থাকে। ইসলামের ইতিহাসে এই ভাষণকে হাজ্জাতুল বিদা বা বিদায় হজ্ব নামে পরিচিত। এছাড়া এ ভাষণকে হযরতুল বালাগ, হযরতুল তামাম বা পূর্ণতার হজ্জ বলা হয়ে থাকে। যা শুধু মুসলিম সমাজের জন্য নয়, পৃথিবীর সকল মানুষদের জন্য হেদায়েতের এক প্রদীপ শিখা। ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ অনুযায়ী মুসলিমদের করণীয় সম্পর্কে চূড়ান্ত দিক নির্দেশনা দেওয়া ছিল। তবে মূল ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন আরাফাত দিনে। আরাফার মরুপ্রান্তরে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে দ্বিপ্রহরের খানিক পরে, অশ্রুসিক্ত ভক্তদের উদ্দীপ্ত প্রেরণায় ও অধীর আগ্রহের প্রহর শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ভাষণ দেন, সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আগত বিগত সব ভাষনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব মর্যাদায় ভূষিত। বিশ্ব মানবতার এমন কোন দিক নেই যা এ ভাষণের মধ্যে ছিল না। মূলত বিদায় হজের ভাষণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর 23 বছরের নবুয়তের প্রজ্ঞা এবং নির্যাস।

মহিমান্বিত বিদায় হজের ভাষণ

📢 "হে মানব মন্ডলী! "তোমরা হৃদয়ের কর্ণে ও মনোযোগ সহকারে আমার বক্তব্য শ্রবণ কর। আমি জানিনা আগামী বছর এই সময়ে, এই স্থানে,এই নগরীতে সম্ভবত তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ আর হবে কিনা।"

📢 "হে মানব সকল! সাবধান সকল প্রকার জাহিলাতকে আমার দু পায়ের নিচে পিষ্ঠ করে যাচ্ছি। নিরপরাধ মানুষের রক্তপাত চিরতরে হারাম ঘোষিত হল। প্রথমে আমি আমার বংশের পক্ষ থেকে রুবিয়া বিন হারেজ বিন আব্দুল মুত্তালিবের রক্তের দাবী প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। সে বনি লাইস গোত্রের দুধ পান করেছে, হুজাইল তাকে হত্যা করেছে।"

📢 "জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুদকে চিরদিনের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। আমি আজ আমার চাচা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এর যাবতীয় সুদের দাবি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।" 

📢 "হে লোক সকল! বল আজ কোন দিন? সকলে বলল,"আজ মহান আরাফাত দিন।আজ হজের বড়দিন।" সাবধান আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহর যেমন পবিত্র তোমাদের জান-মাল, ইজ্জত,মান সম্মান কিয়ামত পর্যন্ত এমনই পবিত্র। তোমাদের একের জন্য অপরের রক্ত, তার মাল-সম্পদ, তার ইজ্জত-সম্মান, আজকের দিনের মত এই হারাম মাসের মত হারাম অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম। তোমাদের কাছে একজনের গচ্ছিত সম্পদ এ সম্মানিত নগরীর মত পবিত্র আমানত। সাবধান মানুষের আমানত প্রকৃত মালিকের নিকট পৌঁছে দেবে।"

📢"হে মানুষ! ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। তোমরা কেউ দুর্বলের উপর অবিচার করো না।"

📢 "হে মানব সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা ও আল্লাহ একজন। তোমাদের পিতা ও একজন। তোমরা সবাই আদম থেকে আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। তোমাদের সকলের পিতা হযরত আদম। আল্লাহ তায়ালা বলেন " হে মানবজাতি তোমাদের আমি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। এবং তোমাদেরকে সমাজ যোগ করতে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পারো।" অতএব শুনে রাখো মানুষের মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। অন্ধকার যুগের সব কৌলিন্য প্রথা বিলুপ্ত করা হলো। শুধু কাবা ঘরের তত্ত্বাবধান ও হাজীদের পানি পান করানো ছাড়া। আরবের উপর অনারবের এবং অনারবের ওপর আরবদের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সাদার উপর কালো আর কালোর উপর সাধারণ মর্যাদা নেই। তাকওয়া শুধু পার্থক্য নির্ণয় করবে। তোমাদের মাঝে যারা সর্বাধিক মুত্তাকী, খোদাভীরু তারাই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান।"

আরো পড়ুনঃ
আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হওয়ার ৭টি লক্ষণ
শবে মিরাজ ২০২৫ কবে

📢 "হে লোক সকল! পুরুষদের কে নারী জাতের উপর নেতৃত্বে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহ তালাকে স্মরণ করো। নারীদের উপর যখন পুরুষদের অধিকার রয়েছে তেমনি পুরুষদের উপর রয়েছে নারীদের অধিকার। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর জমিনে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে তাদেরকে হালাল করেছ । স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে তারা যেন নিজ স্বামী ছাড়া পর পুরুষের সঙ্গে ভোগে লিপ্ত না হয়। যদি তারা তা করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের তাদের প্রতি কঠোরতা করার অনুমতি দিয়েছেন। এমন তো অবস্থায় তোমরা তাদের শয্যা পৃথক করে দেবে। এবং মৃদু প্রহার করবে। তাতে তারা বিরত হলে নিয়মমাফিক তাদের ভরণপোষণের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে তারা তোমাদের সাহায্যকারীণী।"

📢 "হে উপস্থিত! মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।আর তারা সকলে মিলে এক অখণ্ড মুসলিম ভাতৃত্ব সমাজ। এক ভাইয়ের ধন সম্পদ তার অনুমতি ব্যতিরেকে ভক্ষণ করবে না। তবে যদি কেউ স্বেচ্ছায় কাউকে কিছু দেয় তাহলে সেটা স্বতন্ত্র ব্যাপার। আমার পর তোমরা কুফরীতে ফিরে যেও না। পরস্পর খুনাখুনি করো না। তোমরা একে অপরের উপর জুলুম করবে না।"

📢 "হে মানুষেরা! শয়তান আজ নিরাশ হয়ে পড়েছে। বড় বড় বিষয়ে এসে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে সমর্থ্য হবে না।তবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা সতর্ক থাকবে ও তার অনুসারী হবে না।"

📢 "তোমরা আল্লাহর বন্দেগী করবে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করবে।রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে।যাকাত আদায় করবে। তবেই তোমরা জান্নাত লাভ করবে।"

📢 "সাবধান! তোমাদের গুলাম ও অধীনস্থদের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর।তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খেতে দেবে।তোমরা যা পরবে তাদেরকেও সেভাবে পরতে দেবে। শ্রমিকের শরীরে ঘাম শুকানোর আগে তার মজুরি পরিশোধ করবে।"

📢 "হে মানুষ! বিশ্বাসী সেই ব্যক্তি যার হাতও মুখ থেকে অন্যের সম্মান ধন ও প্রাণ নিরাপদ। সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্য তাই পছন্দ করে।"

📢 "হে মানুষ! তোমরা ঈর্ষা ও হিংসা বিদেশ থেকে দূরে থাকবে। ঈশ্বর হিংসা মানুষের সকল সৎ গুন কে ধ্বংস করে।" 

📢 "হে লোক সকল! আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহতালার পয়গম পৌঁছে দিয়েছি? লোকেরা বললো "হ্যাঁ"তিনি বললেন "আমার বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে সেদিন তোমরা কি সাক্ষ্য দিবে??"সকলে এক বাক্যে বললেন"আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আপনি আমাদের নিকট রিসালাতের দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছেন,উম্মতকে সকল বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, সমস্ত গোমরাহীর আবরণ ছিন্ন করে দিয়েছেন এবং ওহীর আমানত পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন" অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর শাহাদাত আঙ্গুলী আকাশে তুলে তিনবার বললেন"হে আল্লাহ তাআলা আপনি সাক্ষী থাকুন! আপনি সাক্ষী থাকুন!আপনি সাক্ষী থাকুন!"

📢 "হে মানুষেরা! আল্লাহতালা প্রত্যেক উত্তরাধিকারীদের অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার থেকে কম বেশি করবে না উত্তরাধিকারের জন্য কোন অছিয়ত প্রযোজ্য নয়। সাবধান, অন্যদের জন্য এক-তৃতীয়াংশের অধিক অছিয়ত করা বৈধ নয়।"

📢 "সন্তান যার বিছানায় জন্মগ্রহণ করবে সে তারই হবে। ব্যভিচারের শাস্তি হচ্ছে প্রস্তরের আঘাত। যে সন্তান আপন পিতা ব্যতীত অন্য পিতা এবং যে দাস নিজের মালিক ব্যতীত অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে তাদের উপর আল্লাহতালা, ফেরেস্তা কুল এবং সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ এবং তার কোন ফরজ ও নফল ইবাদত কবুল হবে না।"

📢 হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা দুনিয়ার মানুষের বোঝা নিজেদের উপর চাপিয়ে যেন কিয়ামতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত না করো। কেননা, আমি আল্লাহর আযাবের মোকাবিলায় তোমাদের কোন উপকারে আসতে পারবো না। তোমাদের দেখেই লোকেরা আমল করে থাকবে। মনে রেখো, সকলকে একদিন আল্লাহ তায়ালা নিকট হাজির হতে হবে। সেদিন তিনি প্রতিটি কর্মের হিসাব গ্রহণ করবেন।"

📢 "তোমরা আমার পরে গোমরাহীতে লিপ্ত হবে না‌ পরস্পর হানাহানিতে মেতে উঠবে না। আমি আখেরি নবী ।আমার পরে আর কোন নবী আসবেনা। আমার সাথে ওহির পরিসমাপ্তি হতে যাচ্ছে।" 

📢 "হে মানুষেরা! আমি নিঃসন্দেহে একজন মানুষ। আমাকেও আল্লাহতালার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে।"

📢 "আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি! যতদিন তোমরা এই দুটি বস্তু আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন তোমরা নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট হবে না। এক আল্লাহর কিতাব ও অপরটি আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ।"

📢 "হে মানব মন্ডলী! তোমরা আমির বা নেতার বাণীতে আনুগত্য কর এবং তার কথা শ্রবণ করো। যদিও তিনি হন হাফসী কৃতদাস। যতদিন পর্যন্ত তিনি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবেন ততদিন অবশ্যই তাঁর কথা শুনবে, তাঁর নির্দেশ মানবে ও তাঁর প্রতি আনুগত্য করবে। আর যখন তিনি আল্লাহর কিতাবের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করবে, তখন থেকে তার কথাও শুনবে না এবং তার আনুগত্য করা যাবে না।" 

📢 "সাবধান! তোমরা দিনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে। জেনে রেখো তোমাদের পূর্ববর্তীগণ এ বাড়াবাড়ির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। অর্থাৎ, কোন অমুসলিমকে জোর জবরদস্তি করে ইসলাম শিক্ষা দেওয়া যাবে না। তবে একজন মুসলমানকে অবশ্যই পরিপূর্ণ ইসলামী জিন্দেগি অবলম্বন করে জীবন যাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে, সুবিধাবাদের কোন সুযোগ নেই। 

📢 "হে মানুষ! প্রত্যেকেই শেষ বিচারের দিনে সকল কাজের হিসাব দিতে হবে। অতএব,সাবধান হও।"

📢 "হে মানুষ! শুনে রাখ অপরাধের দায়িত্ব কেবল অপরাধীর উপর বর্তায়। পিতা তার পুত্রের জন্য পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয়।"

📢 "হে মানুষ! জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদদের রক্তের চেয়েও মূল্যবান। জ্ঞান অর্জনে প্রত্যেক নন নারীর জন্য ফরজ।কারণ,জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথ দেখায়।জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে তোমরা সুদূর চীন পর্যন্ত যাও।"

📢 "মনে রেখো! আমি তোমাদের সকলের আগে হাউজে কাউসার এ পৌঁছে যাব। আর আমি অন্য সকল উম্মতের মধ্যে তোমাদের আধিক্য নিয়ে গর্ব করবো। অতএব,তোমরা আমার চেহারা কে কালিমা লিপ্ত করোনা।"

📢 "মনে রেখো! আমি অনেক কে সেদিন মুক্ত করবো এবং অনেকে সেদিন আমার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তখন আমি বলব 'হে আমার প্রতিপালক এরা তো আমার সাথী'। তিনি বলবেন,"তুমি জানোনা তোমার পরে এরা কত বিদাত সৃষ্টি করেছিল" তখন রাসূলুল্লাহ বলবেন, "দূর হও, দূর হও! যে ব্যক্তি আমার পরে আমার দ্বীন কে পরিবর্তন করেছে।"

📢 তিনি আবার বললেন "আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর  দ্বীন পৌঁছে দিয়েছি?"সকলে বললেন," নিশ্চয়ই"। অতঃপর রাসুলুল্লাহ নিজ শাহাদাত আঙ্গুল আকাশে তুলে আবার বললেন,"হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন, আপনি সাক্ষী থাকুন,আপনি সাক্ষী থাকুন।"

📢 "হে উপস্থিতগন! অনুপস্থিতদের নিকট আমারে পয়গাম পৌঁছে দেবে। হয়তো তাদের মধ্যে কেউ এ নসিহতের উপর তোমাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে আমল করবে।"

📢 "তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক..... বিদায়!!😭😭

বিদায় হজের তাৎপর্য:-

ইসলাম ধর্ম যে ধাপে ধাপে পূর্ণতা পেয়েছিল তার ওই চূড়ান্ত ঘোষণা ছিল নবী করীম (সাঃ) এর বিদায় হজের ভাষণ। বিদায় হজের ভাষণ প্রদানের সময় সূরা মায়েদার তিন নম্বর আয়াত নাযিল হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন কে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতকে পূর্ণ করলাম। তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে কবুল ও মঞ্জুর করলাম।"বিদায় হজের ভাষণে ইসলাম ধর্মের মুল বাণী বর্ণিত হয়েছিল। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সাফল্য ধরে রাখতে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা ও উপদেশ দিয়েছিলেন। এই ঐতিহাসিক ভাষণ মানব সমাজের করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট বার্তা  ছিল। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, তাঁর সার্বভৌমত্ব ও স্বীকৃতি, মানবজাতির ঐক্য আধ্যাত্মিক ভ্রাতৃত্ব সামাজিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সাম্য ইত্যাদি সমাজ বিনির্মাণে সব বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে এ ভাষণের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ভাষণে তাকওয়া ও দায়িত্ব নিষ্ঠার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছিল। পাপাচারের বিরুদ্ধে ছিল কঠোর হুঁশিয়ারি। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম, অন্যায় ভাবে মানুষের রক্তপাত বন্ধ, সুদের ভয়াবহতা, ব্যভিচারের পরিণতি, বর্ণবৈষম্যের ভয়াবহতা, স্বজন প্রীতির কুপ্রভাব, জাহেলী যুগের চিন্তাধারা পরিবর্তন করার ব্যাপারে মুসলিমদের জোরালো নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। এই ভাষণে রাসূল বলেন, ইসলাম নারীদের অধিকার সংরক্ষণ করেছেন, মা মেয়ে ও স্ত্রী হিসেবে পরিপূর্ণ সম্মান দিয়েছে, তাদের শিক্ষা ও উত্তরাধিকারের অধিকার দিয়েছে। ইবাদতের প্রতিদানের স্বরূপ পুরুষদের সমান সুযোগ দিয়েছে । নবী করিম (সাঃ) বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, হাদিস ও কোরআনকে তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আল কুরআন এবং হাদিস আমাদের জীবনের প্রয়োজনীয় সকল রকম দিকনির্দেশনা প্রদান করে। 

শেষ কিছু কথা:

বিদায় হজের ভাষণ আমাদের অন্তরে ধারণ করতে হবে লালন করতে হবে এবং তা পালন করতে হবে। বিদায় হজের ভাষণের বার্তা আমাদের পৌঁছে দিতে হবে ঘরে ঘরে। তাহলেই অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। আমাদের জীবনকে ঢেলে সাজাতে হবে বিদায় হজের ভাষণের আদর্শে। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে কবুল করুক, আমাদেরকে হেদায়েত দান করুক, আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url