জান্নাতে যাওয়ার সহজ ২৫ টি রাস্তা
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করার 25 টি সহজ রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছেন। চলুন আজকে আমরা জান্নাতে যাওয়ার সহজ ২৫ টি রাস্তা সম্পর্কে জেনে নেই।
জান্নাতে যাওয়ার সরল পথ
১. দান করা
হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুল সাঃ বলেছেন"যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করে, এর দরুণ তাকে জান্নাতে দেওয়া হবে"
২. দরিদ্রকে ঋণ পরিশোধে সময় দেওয়া
হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন"এক ব্যক্তি মৃত্যুতে পতিত হওয়ার পর জান্নাতে প্রবেশ করল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো তুমি কি আমল করেছো? উত্তরে লোকটি বলল, আমি মানুষের সাথে কেনাবেচা করতাম ।বিপদগ্রস্ত দরিদ্রকে ঋণ পরিশোধে সময় দিতাম এবং কিছু টাকা পয়সা মাফ করে দিতাম ।ফলে আল্লাহ তা'আলা আমাকে মাফ করে দিয়েছেন।"
৩. লজ্জাস্থান ও জবানের হেফাজত:
"যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ এবং দুই উরুর মধ্যস্থিত অঙ্গের হেফাজত করবে। আল্লাহর রাসূল তার জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন।"
-বুখারী।
৪. সালাতের কাতারে ফাঁকা স্থান পূরণ:
আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন "যে ব্যক্তি নামাজের কাতারের ফাঁকা স্থান পূর্ণ করবে আল্লাহ তাআলা তার সম্মান বাড়িয়ে দিবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করবেন।"
-তাবারানি।
৫. মসজিদ নির্মাণ
ওসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছেন"যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ তৈরি করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি অনুরূপ ঘর তৈরি করবেন"-বুখারী ও মুসলিম
৬. আযানের জবাব
দিনরাত পাঁচবার মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব দেওয়া জান্নাতে প্রবেশের আরও একটি উপায়।[মুসলিম]
৭. তাকওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন"হে আবু সাঈদ যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দিন এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে গ্রহণ করবে, তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে"
-মুসলিম
৮. রোজা করা
সাহল ইবন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাঃ বলেন"জান্নাতের ভেতর রায়ান নামক একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এখান দিয়ে রোজাদার ব্যক্তি প্রবেশ করবেন। তারা প্রবেশ করার কথা দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারপর আর কেউ ঢুকতে পারবে না।"
-বুখারী ও মুসলিম।
৯. সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়া
সালাত হলো দিনের খুঁটি। আল্লাহ আমাদের উপর দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। আল্লাহর নিকট প্রিয় ইবাদত হলো তার ফরজ কাজসমূহ। যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ফরজ তার সময় আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
-আবু দাউদ
১০. বারো রাকাত সুন্নত সালাত আদায় করা:
উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন"যে মুসলিম ব্যক্তি ফরজের অতিরিক্ত প্রতিদিন বারো রাখার সুন্নত সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।
এই হাদিসে যে বারো রাকাত সুন্নাতের কথা বলা হয়েছে। তাহলে যোহরের পূর্বে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পর দুই রাকাত এবং ফজরের পূর্বে দুই রাকাত।
১১. অজুর পর দুই রাকাত সুন্নত আদায়
যে ব্যক্তির সুন্দর করে উপস্থিত মন নিয়ে এবং একাগ্রচিত্তে দুই রাকাতে সালাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
- মুসলিম
১২. জিহাদ করা
আবু হুরাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে আল্লাহর রাসূল বলেছেন"আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, যে ব্যক্তি শুধু মাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং তার কথাকে সত্য বলে প্রমাণিত করা উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, এবং শহীদ হয় অথবা আল্লাহ তাকে জিহাদের সাওয়াব ও গনিমত লাভে ধন্য করে গাজী হিসেবে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন"
-বুখারী ও মুসলিম।
১৩. ইসলামের উত্তম দিকগুলো প্রচার করা
আব্দুল্লাহ ইবন সালাম থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেন"হে মানব সকল, সালামের প্রসার করো। খাদ্য দান কর ।আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। লোকেরা ঘুমিয়ে গেলে রাতে নফল সালাত আদায় কর।তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"
-তিরমিজি
১৪. ফজর ও মাগরিব এর নামাজ মসজিদে আদায়
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা মসজিদে যায়, তাঁর জন্য আল্লাহ জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করবেন"
-বুখারী ও মুসলিম।
১৫. সালাতের পর জিকির পাঠ
রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বললেন"আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেব যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তী দেশ সমকক্ষ হবে, এবং তোমাদের পরবর্তীদের চেয়ে অগ্রগামী হবে। আর তোমাদের যে উত্তম কেউ হবে না সে ব্যক্তি ছাড়া যে তোমাদের মতই এ কাজগুলো করবে। তারা বললেন হে আল্লাহর রাসুল আমাদেরকে শিক্ষা দিন। রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু ওয়াসাল্লাম বললেন সালাতের পর 33 বার সুবহানাল্লাহ, 33 বার আলহামদুলিল্লাহ এবং 34 বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে।"
-মুসলিম।
১৬. হুজুর পর কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ
উকবাহ এবং আমের থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন"তোমাদের কেউ সুন্দর করে ওযু করার পর যদি বলে "আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু,ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলূহু'"তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে।"
১৭. যে দোয়া জান্নাতের ভান্ডার
আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন"আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভান্ডার সময়ের একটি ভাণ্ডার সম্পর্কে অবহিত করব? আমি বললাম, "হ্যাঁ,রাসুল"তিনি বলেন বল"লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ"অর্থাৎ আল্লাহর আশ্রয় ও শক্তি ছাড়া আর কারো কোনো ক্ষমতা নেই।"
-বুখারী ও মুসলিম
১৮. জান্নাত লাভের জন্য দোয়া করা
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত"আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়। জান্নাত তখন বলে"হে আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করান"পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে। জাহান্নাম বলে"হে আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে দুদকের আগুন থেকে মুক্তি দিন"
-তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ
১৯. গুনাহ মাফের প্রধান দোয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগফেরাত কামনার দোয়াকে সাইদুল ইস্তেগফার বা গুনাহ মাফ করার প্রধান দোয়া বলে অভিহিত করেছেন এবং জান্নাতে প্রবেশের কারণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে দিনে এ দোয়া পাঠ করে, সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বে যদি তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে রাতে পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বে মারা যায় সে জান্নাতবাসী হবে।"
-বুখারী।
২০. শির্ক হতে বিরত থাকা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন"যে ব্যক্তি এ কথা সাক্ষ্য দিবেন যে, এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরিক নেই, মোহাম্মদ সালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, আর জান্নাত সত্য জাহান্নাম সত্য।'
আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন আর তাঁর আমল যাই হোক না কেন।"
-বুখারী ও মুসলিম।
২১. আসমাউল হুসনা:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"আল্লাহর ৯৯ টি নাম আছে। যে ব্যক্তি নাম গুলো গণনা করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে"
-বুখারী ও মুসলিম।
২২. কোরআনের হাফেজ হওয়া:
আব্দুল্লাহ এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"কুরআনের সঙ্গীকে বলা হবে, কোরআন পাঠ কর এবং মর্যাদার উচ্চ শিখরে আরোহণ করো। আর তেলাওয়াত করতে থাকো। যেমন দুনিয়াতে তেলাওয়াত করেছিলে; কেননা তোমার মর্যাদা হল কোরআনের শেষ আয়াত পর্যন্ত যা তুমি পাঠ করবে"।
২৩. জ্ঞান অর্জন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত"রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হয় এর বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন"
-মুসলিম
২৪. আল্লাহতালার জিকির
আব্দুল্লাহ ইবন মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"মেরাজের রাতে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন"তোমার উম্মতকে আমার সালাম জানিও এবং তাদেরকে সংবাদ দাও যে জান্নাতের মাটি সুন্দর,পানি মিষ্টি আর জান্নাতের সমতল এবং বৃক্ষরাজি হল সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার।
-তিরমিজি
২৫. উমরা পালন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"এক ওমরা থেকে আরেক ওমরা মধ্যবর্তী সকল গুনাহের জন্য কাফফারা শুরু। আর কোন হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।"
-বোখারী।
উপরের আলোচিত আমল গুলো আমরা বেশি বেশি পালন করব, প্রচার করব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুক উক্ত আমলগুলো পালন করার এবং আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের সবাইকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুক,আমিন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url