এই গুণাবলীর অধিকারী হলে আপনি জান্নাতে যাবেন

যেসব গুণাবলি নিজের মধ্যে থাকলে একজন মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে আজকের আর্টিকেলে আমরা ঐ সব গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।

এই-গুণাবলীর-একটি-আপনার-মধ্যে-থাকলে-আপনি-জান্নাতে-যাবেন

এই তেরোটি গুণাবলির মধ্যে যেকোনো একটি গুণাবলী আমল করলে ইনশাআল্লাহ আপনি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন। 

যে গুণাবলীর একটি আপনার মধ্যে থাকলে আপনি জান্নাতি

কোমল হৃদয় 

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন," জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি যাদের অন্তর সমূহ হবে পাখির অন্তরে ন্যায়।

সহীহ মুসলিম-২৮৪০

দুর্বল অসহায় হওয়া

হারেসা ইবন ওহাব রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, "আমি কি তোমাদের জান্নাতি লোকদের গুণাবলীর কথা বলব না? সাহাবাগণ বললেন,"হ্যাঁ বলুন"। তিনি বললেন প্রত্যেক দুর্বল,লোক চোখে হেও কিন্তু সে যদি কোন বিষয়ে আল্লাহর নামে কসম করে তাহলে আল্লাহতালা তার কসম পূর্ণ করবেন। অতঃপর, তিনি বললেন আমি কি তোমাদের জাহান্নামী ব্যক্তিদের কথা বলবো না? সাহাবারা বললেন, "হ্যাঁ বলুন"। তিনি বললেন," প্রত্যেক ঝগড়াকারি, দুশ্চরিত্র ও অহংকারী ব্যক্তি"

সহীহ মুসলিম-২৮৫৩

নম্র ভদ্র ও গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি 

ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,"প্রত্যেক নরম দিল এবং মানুষের সাথে মিশুক লোকদের জন্য জাহান্নাম হারাম। যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম তারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে"

মুসনাদে আহমেদ-৩৯৩৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুসরণকারী 

আবু হুরাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,"আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে যাবে তবে ঐ সকল লোক ব্যতীত যারা অস্বীকার করে?সাহবারা জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার নাফরমানি করে সে অস্বীকার করে"

বুখারী-৭২৮০

দৈনিক অতিরিক্ত ১২ রাকাত সালাত আদায়কারী 

উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন"যে মুসলিম ব্যক্তি ফরজের অতিরিক্ত প্রতিদিন বারো রাখার সুন্নত সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।"

-সহীহ মুসলিম-৭২৮

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী ব্যক্তি 

আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত "এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল হে, আল্লাহর রাসূল আমাকে এমন কোন আমলে কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। আল্লার রাসুল বললেন"আল্লাহর ইবাদত করো এবং তার সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না। সালাত কায়েম কর,যাকাত আদায় কর, আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো। যখন ঐ লোক ফিরে যেতে লাগল তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন তাকে যা করতে বলা হলো সে যদি এর উপর আমল করে তাহলে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।"

মুসলিম-১৩

তাহাজ্জুত আদায়কারী, রোজা পালনকারী ও খাদ্য দানকারী 

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন," জান্নাতে এমন কিছু ঘর আছে যার ভেতর থেকে বাইরে সবকিছু দেখা যাবে, আবার বাইরে থেকে ভেতরে সবকিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল ইয়া রাসূলাল্লাহ ঐ ঘর কার জন্য? তিনি বললেন ,"ঐ ব্যক্তির জন্য যে ভালো ও নরম কথা বলে, অন্যকে আহার করায়,অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখে আর যখন লোকেরা আরামে নিদ্রারত থাকে তখন সে উঠে সালাত আদায় করে।" 

তিরমিজি ১৯৮৪

ন্যায় পরায়ন বাদশা 

ইয়াদ ইবন হিমার মাজাশেয়ি রাদিয়াল্লা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন,"তিন প্রকারের লোক জান্নাতে যাবে।

এক ন্যায় পরায়ন বাদশা, দুই ঐ ব্যক্তি যে প্রত্যেক আত্মীয়ের সাথে এবং প্রত্যেক মুসলমানের উপর দয়া করে। তিন ঐ ব্যক্তি যে লজ্জা স্থানকে সংরক্ষণ করে এবং বিনা প্রয়োজনে কারণে কোনো কিছু চায়না।

 সহীহ মুসলিম-২৮৬৫

আল্লাহু ও আল্লাহ রাসূলের প্রতি সন্তুষ্ট জ্ঞাপন

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,"যে ব্যক্তি বলে যে আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দিন হিসেবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নবী হিসেবে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে"

-আবু দাউদ-১৫২৯

দুই বা দুইয়ের অধিক কন্যাকে লালন পালন করা 

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,"যে ব্যক্তি তাদের দুজন কন্যাকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করে, কেয়ামতের দিন আমি  এবং ঐ ব্যক্তি একসাথে উপস্থিত হব এ কথা বলে তিনি তার দুই আঙ্গুল কে একত্রিত করে দেখালেন যে এভাবে।" সহীহ মুসলিম-২৬৩১

তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজ আদায় 

উকবা ইবনে আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আমাদের উপর দায়িত্ব ছিল উট চরাবার। যখন আমার ওপর দায়িত্ব আসলো তখন এক বিকেলে আমি  সে গুলো ছেড়ে আসলাম। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামকে দেখলাম যে তিনি মানুষের নিকট বসে কথা বলছেন। তখন আমি তার কথা যা অনুধাবন করতে পেরেছি তার মধ্যে ছিল"তোমাদের যে কেউ অজু করল আর সে তার অজু সুন্দর করে সম্পন্ন করে, তারপর দুই রাকাত তাহিয়াতুল ওযুর দুই রাকাত সালাত ভালোভাবে আদায় করল তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।

সহীহ মুসলিম-১৪৪

হাদিসে বর্ণিত পাঁচটি গুণ যে নারীর মধ্যে রয়েছে 

আবু হুরাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন"যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমজান মাসের রোজা রাখে, নিজের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে, স্বীয় স্বামীর অনুগত থাকে;কিয়ামতের দিন তাঁকে বলা হবে যে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি তুমি তা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো।"

ইবনে হিব্বান হাদিস-৬৭৩

মুত্তাকি এবং চরিত্রবান লোক 

আবু হুরাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো কোন আমলের কারণে সর্বাধিক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন তাকওয়া ও উত্তম চরিত্র।"

তিরমিজি

লেখক এর কিছু কথা: 

জীবন সংক্ষিপ্ত কিন্তু মৃত্যু পরবর্তী জীবন অনন্ত। এ সংক্ষিপ্ত জীবনে আমাদের দুনিয়ার প্রতি কত মোহ, মায়া, ভালোবাসা। অথচ, এটাই মহাসত্য যে আমরা এ দুনিয়ার একটি সংক্ষিপ্ত সফরে এসেছি। সব শেষে ফিরে যেতে হবে।। পরবর্তী সফর হবে অনন্তকালের। আসুন, আমরা কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী নিজের জীবন সাজাই, আমল করি। যাতে আল্লাহ আমাদের তার রহমতের উসিলায় জান্নাত দান করেন। উপরে আলোচিত ১৩ টি আমল আমরা করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url