নেগেটিভ চিন্তা দূর করার উপায়

আজকে আমরা নেগেটিভ চিন্তা ক্ষতিকর দিক, নেগেটিভ চিন্তা উৎস এবং এ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

নেগেটিভ-চিন্তা-দূর-করার-উপায়


আমরা সারাদিনের মধ্যে কখনো হাঁটি, কখনো বসে কাজ করি ,কখনো বা আবার শুয়ে বসে বিশ্রাম নিই, ঘুমিয়ে থাকি। তবে,আমরা যে অবস্থাতেই সময় কাটাই না কেন আমাদের মস্তিষ্ক কিন্তু, কখনোই থেমে থাকে না। সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে নানা রকম চিন্তা, পজেটিভ চিন্তা, নেগেটিভ চিন্তা। এসব চিন্তায় সবগুলো কি আমাদের প্রয়োজনীয়? স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে ক্রমাগত নেগেটিভ চিন্তা যেমন মস্তিষ্কের ক্ষতি করে, তেমনই দুর্বল করে দেয় আমাদের মানসিকতাও। প্রভাব ফেলে স্বাস্থ্যেও। ক্রমাগত নেগেটিভ চিন্তা যেমন বিরক্তির কারণ হতে পারে তেমনই তা ধীরে ধীরে ঠেলে দিতে পারে অবসাদের দিকে। ফলে,জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের চারপাশে পজিটিভ বিষয় থেকে নেগেটিভ চিন্তা বা নেগেটিভ বিষয় অনেক বেশি। যে কারণে প্রতিটি স্তরে আমরা এ ধরনের চিন্তাধারা তাড়িত হই। যা আমাদেরকে একটি স্বাভাবিক পজিটিভ জীবন যাপন করা থেকে দূরে ঠেলে দেয়। জীবনের দাঁড়িপাল্লায় নেগেটিভ বিষয়ের ভারে নিয়ে পড়ি।

নেগেটিভ চিন্তায় বেশি আসে কেন

সারাদিনে মনে যত চিন্তা আছে তার মধ্যে বেশিরভাগ চিন্তা নেগেটিভ বা নেতিবাচক হয়।তার কারণ আমরা সবাই অল্প বিস্তর আত্মবিশ্বাস হীনতায় আক্রান্ত। সুতরাং, ভয় দুঃখ দুশ্চিন্তা এবং নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খাবে বেশি মাত্রায়, এটাই স্বাভাবিক। এটা খুব সাধারণ ব্যাপার। বাস্তবে, আমাদের মনের মধ্যে পজিটিভ চিন্তাও আসে। কিন্তু,সেটা কি বারবার আসছে নাকি কম করে আসতেছে সেটা আমরা কখনো লক্ষ্য করি না।। অথচ, নেগেটিভ চিন্তা যে বারবার আসছে সেটা আমাদের ঠিকই নজরে আসে। কারণ, মনের নেগেটিভিটি আরো নেগেটিভ চিন্তা কে টানছে। ক্রমাগত টেনে চলেছে। আগেকার দিনের লোকে বলতো মনের মধ্যে 'কু ডাকছে'। এর বিপরীতে 'মনে সু ডাকছে' এমন কোন শব্দ আমরা কখনো অভিধানে খুঁজে পায় না। এমন তো নয় যে,মনে কোন ভালো চিন্তা আসে না। আমার উন্নতি হবে, আমি ভালো হব, আমি সফল হব এরকম ইতিবাচক চিন্তাও তো আসে। তবুও,আমরা ইতিবাচক চিন্তা থেকে নীতি বাচক চিন্তাকে বেশি প্রাধান্য দিই। এটা পুরোটাই মস্তিষ্কের খেলা। আমরা আসলে এমন এক মধ্যবিত্ত মানসিকতার মধ্যে বেড়ে উঠেছি যেখানে সুখ থেকে দুঃখ অনেক বেশি। সব সময় একটা নিরাপত্তাহীনতা আমাদের ব্যক্তিত্বের সাথে মিলেমিশে গেছে। আমাদের জীবনে একটা সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে একশটা ব্যর্থতার কাহিনী। জীবনে পজেটিভ ঘটনার চেয়ে নেগেটিভ ঘটনার মাত্রা অনেক বেশি। এরকম অবস্থা আমাদের সকলেরই। কারন,আমরা সকলেই প্রায় একই সংস্কৃতি মধ্যে বড় হয়েছি। আমাদের প্রত্যেকের মোটামুটি একটা মধ্যবিত্ত মানসিকতা রয়েছে। আমরা সবারই ডিএনএ এর কোডিং টা যেন এভাবে লেখা।

নেগেটিভ চিন্তা কোথা থেকে আসে? 

চিন্তা যখন ব্রেইন থেকে আসছে তখনও ওষুধটা ব্রেইনে দিতে হবে। উপায় হলো ব্রেইনকে বোকা বানানো। আমাদের ব্রেইন দুটো ভাগে বিভক্ত। ইনার মাইন্ড এবং আউটার মাইন্ড। ইনার মাইন্ড খুব চালাক। সত্যি কথা বলতে আমাদের থেকেও আমাদের ইনারা মাইন্ড আরো বেশি স্মৃতিধর এবং চালাক। ইনার মাইন্ড আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রেকর্ড করে রাখে। এই যে তথ্যগুলো রেকর্ড করে রাখে,সেগুলোকে যদি একটা ভিডিও আকারে প্রকাশ করা হয় তাহলে সেই ভিডিওটা দেখতে সময় লাগবে প্রায় ৬০০ বছর। এই দিকে আমাদের গড় আয়ু হলো মাত্র ৭০- ৮০ বছর। এখানে আরেকটা কথা পরিষ্কার করে বলে দেওয়া দরকার যে ,আইনস্টাইনের ব্রেইন ১০০% কাজ করত আর আমাদের ব্রেইন ১০% কাজ করে। এটা কিন্তু একটা ভুল ও ভিত্তিহীন ধারণা। আমাদের সবার মস্তিষ্ক ১০০% কাজ করে। যার ব্রেনের একশো পার্সেন্ট কাজ করে না সে হয়তো এবনরমাল বা স্পেশাল সাইড বা প্যারালাইজড অথবা অ্যালজাইমার আক্রান্ত। যাইহোক,এই ইনার মাইন্ড এত চালাক চতুর হওয়া সত্বেও আউটার মাইন্ড কে সে নিয়ন্ত্রক বলে মনে করে। আউটার মাইন্ড যদি কোন কথা বারবার মাইন্ড কে বলে তাহলে ইনার মাইন্ড আউটার মাইন্ডের কথা শুনতে বাধ্য এবং সে তার অসম্ভব শক্তিতে এরকম পরিবেশ তৈরি করতে থাকে। আউটার মাইন্ড দ্বারা যদি ডাহা মিথ্যা কথা বারবার ইনার মাইন্ড কে বলা হয় তাহলে সে সেটা সত্যি ভাবতে শুরু করে। সেই চিন্তাটা কে বাস্তবে পরিণত করার প্রচেষ্টা করতে থাকে। ইনার মাইন্ডের কিছু অলৌকিক ক্ষমতা আছে। যেমন:টেলিপ্যাথি, থার্ড আই পাওয়ার বা আকর্ষণ করার শক্তি ইত্যাদি। ইনার মাইন্ড আউটার মাইন্ড বসের আদেশ পালন করার জন্য এগুলো কাজে লাগানো শুরু করে। প্রিয় পাঠক, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা যেহেতু ইনার মাইন্ড থেকে আসে‌; সুতরাং,আমাদের কাজ হবে মনে মনে সব সময় এটা চিন্তা করা যে মনের মধ্যে যে কোন চিন্তা আসছে সেটা  আমাদের মনের ভুল। আসলে সবকিছু শুভ হবে, ভালো হবে। বারবার এরকম পজিটিভ চিন্তা করতে করতে ইনার মাইন্ডকে নেগেটিভ চিন্তা করাটাই ভুলিয়ে দিতে হবে। এবার মাইন্ডের শক্তি অসম্ভব। সে যদি এরকম বিশ্বাস করে যে সব কিছু শুভ হবে তাহলে জেলখানাতে বসেও আপনি রাজার মতো জীবন যাপন করবেন। আসলে আমাদের গোটা জীবনটাই আমাদের চিন্তাভাবনার ফলাফল ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি যদি ব্যর্থ হই,আমি যদি গরীব হই,আমি যদি ক্ষমতাহীন হই তাহলে সেটা আমার চিন্তা ভাবনা কারণেই আমি হয়ে গেছি। ক্রমাগত জোর করে মনকে পজিটিভ চিন্তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে, আমাদের চিন্তা ভাবনাকে যদি পজিটিভ করতে পারে তাহলে আমরা যেমন জীবন চাইছি সেটাই পাব। আসলে মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে। যদিও মানুষ ভবিষ্যতের যে খারাপ ঘটনা চিন্তা করে থাকে বাস্তবে তারা 90 ভাগ ঘটে না। অথবা, ভিন্ন কিছু ঘটে থাকে যে আল্লাহপাক তার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছে। এই দিকে আজকের পৃথিবীতে মানুষ এই উদ্বিগ্নতাকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর মানুষ কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে। সে ব্যবসার নাম ইন্সুরেন্স বা বিমা ব্যবসা। মূল কথা নেগেটিভিটি যেহেতু একটি সমস্যা তাই নিশ্চয়ই এর একটা সমাধানও আছে। কেননা যেখানে সমস্যা সেখানে সমাধানও থাকতে বাধ্য। তাই আমাদের এবার নেগেটিভ চিন্তাভাবনা থেকে বেরোনোর উপায় খুঁজতে হবে। 

আরো পড়ুন: নিজেকে সুখী রাখার উপায়; গৌতম বুদ্ধের শিক্ষণীয় গল্প

নেগেটিভ চিন্তা থেকে বের হওয়া 

ভবিষ্যৎ নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা পরিহার করতে হবে। ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আল্লাহর সাহায্য আসবে।

পবিত্র কুরআনের আল্লাহতালা বলেছেন"আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে, অতএব এর জন্য তাড়াহুড়া করো না। ওরা তো সব শরীর সাব্যস্ত করছে সে সব থেকে তিনি পবিত্র ও বহু ঊর্ধ্বে"[সূরা নাহল:০১] শুধু শুধু ভবিষ্যৎ নিয়ে নেগেটিভ চিন্তা না করে ভালো কিছুর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে ।কারণ, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেই কখনো তা বিফলে যায় না।

আল্লাহতালাহ কুরআনুল কারীমে বলেছেন"অতএব আমি তার আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। এভাবেই আমি বিশ্বাসীদের কে মুক্তি দিয়ে থাকি" [সূরা আম্বিয়া: ৮৮]

পবিত্র কুরআনে আরো উল্লেখ রয়েছে, "যে আল্লাহকে ভয় করে ,আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন"[সূরা তালাক: ৪]

প্রিয় পাঠক, মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে অভয় দিলেও আমরা যেহেতু মানুষ তাই বাস্তব জীবনে আমরা বারবার শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যায়। নেগেটিভ চিন্তা করতে থাকি। ফলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের চিরন্তন সত্য বাণী আমাদের সাহস যোগাতে পারে না। আমাদেরকে নেগেটিভ মাইন্ড সেটআপ থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারে না। বরং আমাদের প্রয়োজন হয় আরো একটি স্পেসিফিক ট্রিটমেন্ট, একেবারে টু দি পয়েন্ট চিকিৎসা।

নেগেটিভ চিন্তা দূর করার বিশেষজ্ঞ সমাধান 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন নেগেটিভ চিন্তা যতই আসুক না কেন সুস্থ থাকার স্বার্থে নিজের ভাবনা চিন্তার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেই হবে। সতর্ক থাকুন। নেগেটিভ চিন্তা, নেগেটিভ মানুষ এবং নেগেটিভ ঘটনা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। যখন নেগেটিভ চিন্তা মাথায় ভিড় করে তখনই মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিন। রাগ,দুঃখ,হিংসার, চিন্তার বদলের চেষ্টা করুন ভালোবাসা,খুশি,সমৃদ্ধি,সুস্বাস্থ্য ও সম্পদের চিন্তা করতে। এমন চিন্তা যা আমাদের মনকে শান্ত করবে, অনুপ্রাণিত করবে।

নেগেটিভ আলোচনা থেকে কৌশলে দূরে থাকুন: 

কৌশলে নেগেটিভ মানুষদের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েন। একজন নেগেটিভ মানুষ যে কিনা সারাক্ষণ অভিযোগ করে, অন্যের বিষয় সমালোচনা করে, সবকিছুতে সমস্যা খুঁজে বের করে, আলাপচারিতার মাঝখানে তাকে জিজ্ঞেস করুন: সে কিভাবে তার সমস্যাটি সমাধান করবে বা কি করে এই অবস্থা থেকে উন্নতি করা যায়। এ প্রশ্নটি আপনাকে সাহায্য করবে কথার মোড় ঘুরিয়ে ফেলতে। কেননা, সমাধানের কথা জিজ্ঞেস করতেই মানুষটি হয়তো চুপ হয়ে চিন্তা করবে না হয় আলোচনার বিষয়টি অন্যদিকে নিয়ে যাবে। ঠিক এভাবে প্রশ্ন করে ব্যাপারটি থামান বা সমাধানের ব্যবস্থা করুন। অর্থাৎ, ঐ পরিস্থিতি হতে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই হবে আপনার করণীয়।

অসংলগ্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ না করা 

খেয়াল করে দেখবেন যে নেগেটিভ মানুষদের আলোচনা টপিক সর্বদা কেমন যেন অসংলগ্ন ও অনির্দিষ্ট হয়। অন্যদের সমর্থন নিয়ে তারা নিজেদের নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা ও আলোচনায় অন্যদেরকেও জড়িয়ে নিতে চাই।। এমন সব আলোচনায় অংশগ্রহণ না করে বুদ্ধিমানের কাজ। ধরুন,এমনই কেউ একজন আপনার অফিসের কোন একটা নিয়ম নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি রকমের সমালোচনা করছে। অথচ, বাকিরা কিন্তু সেই নিয়মের সাথে ঠিক ঐ খাপ খেয়ে নিয়ে ভালোই দিনাতিপাত করছে। এই নেগেটিভ বিষয় হতে দূরে থাকতে একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে আপনার কর্তব্য হবে সেই আলোচনায় কোন মন্তব্য না করা,সেই আলোচনায় অংশগ্রহণ না করা।

আপনার সুখে থাকা আপনার নিজের হাতে 

সফল মানুষদের মনোভাবটা অনেকটা এরূপ-নিজেদের কোন কাজ নিয়ে যদি তারা খুব সন্তুষ্ট ও সুখে থাকেন তখনই তারা অন্য কারো মন্তব্যের একদম পরোয়া করেন না। একটু ভাবুন তো? আপনি কি কখনো পারবেন নেগেটিভ কোন মানুষের মানসিকতা সম্পন্ন পরিবর্তন আনতে? যদি উত্তর না হয় তাহলে জেনে রাখুন- তাদের এরূপ মানসিকতার জন্যই কিন্তু তাদের মন্তব্যগুলো হয় অপ্রীতিকর মাঝে মাঝে বিরক্তিকর বটে। যেহেতু অন্যদেরকে পরিবর্তনের ক্ষমতা আপনার নেই, সেহেতু তাদের মাপকাঠিতে নিজেকে তুলনা করে হতাশাগ্রস্থ হওয়া বোকামি। যেদিন হতে আপনি অন্য মানুষদের মন্তব্য হতে নিজেকে যাচাই করা শুরু করবেন ঠিক সেদিন হতেই আপনি নিজের সুখের চাবি উন্নতি হাতে সঁপে দিবেন। কিন্তু,এমনটা যেন না হয় তাই নিজেকে নেগেটিভ বিষয় হতে দূরে রাখুন, নিজের সুখের মানদন্ড নিজের মতো করে গড়ে তুলুন।

সমস্যা নয়, সমাধানে মনোযোগী হোন 

নেগেটিভ কোন মানুষের সাথে কথোপকথনে লিপ্ত হলে ,'উফ উনি এমন কেন?' কখন থামবে! ধুর! কি বিরক্তিকর ইত্যাদি চিন্তা মাথায় না এনে বরং চিন্তা করুন যে কিভাবে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবেন। অর্থাৎ, সমস্যার কথা চিন্তা না করে সমাধানের চিন্তা করুন। আপনি এরকম পরিস্থিতিতে বিরক্তিবোধ করবেন নাকি মাথা ঠান্ডা করে স্বাচ্ছন্দে থাকবেন তা কিন্তু, একান্তই আপনার উপর নির্ভর করে। যদি বিরক্তিতে পর্যবসিত হতে না চান, সমাধানের প্রতি মনোযোগী হোন। নেগেটিভ একটি পরিস্থিতি হতে বেরিয়ে আসার উপায় চিন্তা করার সময় আপনার মধ্যে একটি পজিটিভ মনোভাব তৈরি হয় যা আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে। সুতরাং, নিজের জীবনে অথবা কোন পরিস্থিতিতে নেগেটিভ অবস্থায় পড়লে সমস্যা নিয়ে আকাশ-পাতাল না ভেবে সমাধানে মনোযোগী হন। 

পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন 

ভবিষ্যৎ কোন ভোগান্তি বা ভুল থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষা সর্বদাই মাথায় দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যর্থতা সাফল্যের চাবিকাঠি নয়। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজে লাগানোই সাফল্যের চাবিকাঠি। আপনি ঠিক একইভাবে মনে রাখুন যে পূর্বে কিভাবে আপনি কোন একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হতে নিজেকে উদ্ধার করেছিলেন। ভবিষ্যতে সেই বুদ্ধিটা খাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। 

আপনার চিন্তায় আপনার বাস্তব কে গড়ে তোলে।অন্যদের মন্তব্য হয়তো আমাদের কিছুটা হলেও ভাবায়। কেউ আমাদের নিয়ে নেগেটিভ একটি কথা বললে সারাদিন রাত আমরা হয়তো তা নিয়ে ভাবা শুরু করে দিই। কিন্তু,একটা পর্যায়ে পৌঁছে যখন আমরা নিজেদের নিয়ে আসলেই তা বিশ্বাস করতে শুরু করি তখনই সত্যিই আমরা হীনমন্যতায় ভুগি। আমরা যা চিন্তা করি আমরা ধীরে ধীরে তাই হয়ে উঠি। আপনার করণীয় হল বিষয়টাকে এত প্রকট পর্যায়ে না নিয়ে যাওয়া। কিভাবে? সহজ! তাদের মন্তব্য গুলো শুনুন আর বিবেক দিয়ে যাচাই করুন যে আসলেই আপনার নিজেকে নিয়ে অমন উপলব্ধি কখনো হয়েছে কিনা। যদি তা না হয় তাহলে তা মাথা হতে ঝেড়ে ফেলে দিয়েন। কিন্তু, 'আমি মনে হয় আসলে এরকম'-নিজেকে দূরে রাখুন। তা না হলে এটা আপনার মনের দীর্ঘায়িত একটি খারাপ প্রভাব ফেলবে যা হতে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে আপনার জন্য।

চিন্তাগুলো শেয়ার করুন: 

জীবনে সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা মানুষ নিজে নিজে সামলাতে পারে না বলেই হয়তো বন্ধু বা পরিবার নামক শব্দগুলো বিরাজ করে পৃথিবী বুকে। অপ্রীতিকর কোন পরিস্থিতি হতে বের হওয়ার জন্য তৎক্ষণাৎ কি করা উচিত বা গতানুগতিক চিন্তা থেকে ব্যতিক্রম দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারবে সে পরিস্থিতির বাইরে থেকে কোন মানুষ। কেননা আপনার মস্তিষ্ক ইতিমধ্যেই ঘোর চিন্তায় মগ্ন। সমাধানের জন্য আলাদা করে চিন্তা করে কাজটি তখন আপনার মস্তিষ্ক কার্যকরী ভাবে করতে পারে না। তাই নির্ভরযোগ্য কোনো বন্ধু,সহকর্মী কিংবা খুব কাছের মানুষের সাথে আপনার সমস্যাটি শেয়ার করুন এবং সাহায্য নিন। সমাধানের চিন্তা করার ধারাবাহিকতা বদলাতে এটা খুবই জরুরি এবং কার্যকরী একটি উপায়।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা: 

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ ধরে আমরা নেগেটিভিটি থেকে বেরিয়ে আসার কিছু পরীক্ষিত উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে একজন মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো এসব প্রচেষ্টার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, তার শরণাপন্ন হওয়া, তার কাছে প্রার্থনা করা। কেননা তার কাছে চাইলে তিনি তার বান্দাদের কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন"আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে তখন তুমি তাদের বলে দাও: আমি তাদের অন্তরের নিকটে রয়েছি। যখন আমার কাছে কেউ প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনা কবুল করে নেই। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎ পথে আসতে পারে।"[সূরা বাকারা: ১৮৬]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে সকল প্রকার নেগেটিভিটি থেকে হেফাজতে থাকার তৌফিক দান করুক,আমিন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url