ক্রিপ্টো কারেন্সি কি; এটি হালাল নাকি হারাম?

ক্রিপ্টো কারেন্সি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও ক্রিপটো কারেন্সি মুদ্রা বিটকয়েন খুবই জনপ্রিয়। আজকের আর্টিকেল আমরা ক্রিপ্টো কারেন্সি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ক্রিপ্টো-কারেন্সি-কি;-এটি-হালাল-নাকি-হারাম?


ক্রিপ্টো কারেন্সি কি 

ক্রিপ্টো কারেন্সি  মূলত একপ্রকার ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবে ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করা হয়।ক্রিপ্টো শব্দের অর্থ গোপন বা লুকানো। সুতরাং, ক্রিপ্টো কারেন্সি বলতে এমন এক ধরনের মুদ্রাকে বোঝানো হয় যা স্পর্শ করা যায় না, যার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই; যার উপস্থিতি শুধু ভার্চুয়াল জগতে। ক্রিপ্টো ও ব্লক চেইন এর উপর সম্পূর্ণভাবে স্থাপিত হয়েছে ক্রিপ্টো কারেন্সির ধারণা। এটি হচ্ছে পেয়ার টু পেয়ার সিস্টেম। এই সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা অর্থের আদান প্রদান করে থাকে। ফলে,নগদ অর্থ সাথে রাখার প্রয়োজন হয় না। বিশ্বের যে কোন দেশে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে অর্থের ব্যবহার করতে পারবেন সে দেশের অর্থ মুদ্রা সাথে না রেখেই। টাকা কনভার্টের প্রয়োজন হয় না।

ধরেন, আপনি নেপালে গিয়েছেন। সেখানে অবশ্যই বাংলাদেশী টাকায় কোন পণ্য ক্রয় করতে পারবেন না। সর্বপ্রথম আপনাকে টাকা নেপালী রুপিতে কনভার্ট করতে হবে। কিন্তু, ক্রিপ্টো কারেন্সি এ ব্যাপারটাকে একদম সহজ করে দিয়েছি। ক্রিপ্টোকেন্সি ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন দেশে অনায়াসে লেনদেন করতে পারবেন। এই মুদ্রা সকল দেশে বিনিময় যোগ্য।  টাকা কনভার্টের প্রয়োজন হয় না। ক্রিপ্টো কারেন্সি এর অপর নাম গ্লোবাল মুদ্রা। ক্রিপটো কারেন্সির মূল ধারণাই হলো যে কেউ তার পরিচয় গোপন করে নিরাপদে সাধারণ মুদ্রার মত ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করতে পারবে।

ক্রিপটো কারেন্সি কারা নিয়ন্ত্রণ করে 

প্রতিটা দেশের সরকার সে দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যেমন:বাংলাদেশের সরকার টাকা কে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, পাকিস্তান সরকার রুপি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, ইংল্যান্ড সরকার ইউরো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, আমেরিকা ডলার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু, ক্রিপ্টো কারেন্সি এর ব্যাপারটা একদম ভিন্ন। এটি কোন নির্দিষ্ট দেশের সরকার, কোম্পানি,এজেন্সি বা ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত হয় না। এটি সম্পূর্ণভাবে অনলাইন ভিত্তিক মুদ্রা। অনলাইন ব্যবহারকারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। ক্রিপ্টো কারেন্সি যেহেতু একটি গোপন মুদ্রা সেহেতু এর লেনদেনের সকল তথ্য গোপন থাকে এবং লেনদেনের সকল তথ্য ব্লক চেইন এ জমা থাকে। তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা পক্ষের কাছে কোন রকম ডাটা থাকে না।

ক্রিপ্টো কারেন্সি কিভাবে কাজ করে 

ক্রিপ্টো কারেন্সি ওয়ালেট খুলতে নাম ঠিকানা বা ব্যক্তির কোন তথ্যের প্রয়োজন হয় না। ক্রিপ্টো কারেন্সি সরাসরি এক ব্যক্তির ওয়ালেট থেকে আরেক ব্যক্তির ওয়ালেটে ট্রান্সফার হয়। ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহারির কাছে একটি key থাকে যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী ক্রিপ্টো কারেন্সি দিয়ে অর্থ লেনদেন করতে পারবে। কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খবরদারি করতে পারে না। 

ক্রিপ্ত কারেন্সি তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল ব্লক চেনের জন্য। ব্লক চেইন হচ্ছে তথ্য সংরক্ষণে একটা নতুন পদ্ধতি। ব্লক চেইন হচ্ছে একটি লেজার বা হিসাবের খাতা এর মত যা ব্যাংকের মতো ডিজিটাল অর্থনৈতিক লেনদেন এর তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। কিন্তু, এ লেনদেনের হিসাব কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে কুক্ষিত থাকে না। বরং, এ লেজার ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে দেখা যায়। এবং প্রতিটি লেনদেন ঘটার সাথে সাথে হিসেবের খাতা আপডেট হয়ে যায়। ক্রিপ্টো  কারেন্সি বিশাল হিসাব মিলানো সহজ কাজ নয়। আবার এ কাজ করার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান ও নেই। এ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য একদল লোক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে। বিনিময়ে সেসব স্বেচ্ছাসেবক কে ব্লক চেইন সিস্টেম ক্রিপ্টো কারেন্সি কয়েন প্রদান করে থাকে।

Cryptocurrency কিভাবে কিনব 

প্রথমত, আপনাকে একটি ট্র্যাডিশনাল ব্রোকার বা একটি ক্রিপ্টো কারেন্সি এক্সচেঞ্জ এর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে।

অনলাইনে এখন অনেক ব্রোকার ক্রিপ্টো কারেন্সি ক্রয় বিক্রয় করে। এছাড়াও, বন্ড স্টক এবং অন্যান্য আর্থিক অপশন গুলো ও একই সাথে রাখে।

ফিচার এবং চার্জের বিষয়টা মাথায় রেখেই আপনাকে প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ট্রেডিং শুরু করার জন্য আপনার সিলেক্ট করা প্ল্যাটফর্মে গিয়ে আপনার একাউন্টে ফান্ড দিতে হবে। ফান্ড দেওয়া হলেই কেবল আপনি ট্রেডিং শুরু করতে পারবেন। সাধারণত,ডলার ব্রিটিশ পাউন্ড বা ইউরো ব্যবহার করে ক্রিপ্টো কেনার অনুমতি দেয় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ক্রিপ্টো কিনা অনেকাংশে ঝুঁকিপূর্ণ। লোন এর মাধ্যমে ক্রিপ্টো কেনা পরিহার করা উচিত। ট্রান্সফার এবং ওয়ার ট্রান্সফার সুবিধা গ্রহণ করে ক্রিপ্টো কিনা অনেকাংশে ঝুঁকিমুক্ত। 

তৃতীয়ত, ফান্ড দেওয়া সম্পন্ন হলে আপনাকে ব্রোকার বা এক্সচেঞ্জের ওয়েবে ক্রিপ্টো কারেন্সি জন্য অর্ডার দিতে হবে। একই সাথে আপনি, PayPal, cash app, Venmo ব্যবহার করে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই অ্যাপ গুলোর মাধ্যমে ক্রিপ্টো কারেন্সি কেনা বেচা করা যায়।

ক্রিপ্টো কারেন্সি হালাল নাকি হারাম 

তুরস্কের ফতোয়া বোর্ড, মিশরের ফতোয়া বোর্ড বা উলামায়ে একরাম, দেওবন্দের ওলামায়ে একরাম এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় ওলামায়ে একরাম এর ফতোয়া প্রায় একই। তা হচ্ছে, ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে লেনদেন বা এর কেনাবেচা ইসলামে জায়েজ নেই। এটি সম্পূর্ণ হারাম। কোন কোন ওলামায়ে একরাম এটাকে সন্দেহজনক মনে করে পরিত্যাগ করতে বলেছেন। ক্রিপ্টো কারেন্সি ইসলামী দৃষ্টিতে জায়েজ নয় এই মতটি অধিক শক্তিশালী।

কেন জায়েজ নয় 

প্রথমত, ক্রিপ্টো কারেন্সি প্রকাশক কে, এটার  গ্রাহক কে, দাতা কে এটা সম্পূর্ণ গোপন থাকে। জানা যায় না। যেকোনো মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বা প্রতারণার সুযোগ থাকে। এছাড়া কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই, কোন নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক নেই ফলে এর মাধ্যমে জোয়ার প্রসার ঘটানো হয় এবং আপনাকে অর্থনৈতিক বড় ধরনের ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাবে। বিট কয়েনের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায় আবার কমে যায়। কে এটা নিয়ন্ত্রণ করছে তারও ঠিক নাই। ফলে অল্প সময়ে অনেকে ধনী হচ্ছে আবার অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইসলামে অল্প সময়ে এভাবে লাভবান হওয়া এবং ঝুঁকি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জায়েজ নয়। তাছাড়া, ভার্চুয়াল মুদ্রা হওয়ায় অবৈধভাবে প্রচুর অর্থের লেনদেন ঘটে।

অস্ট্রেলিয়ার একজন গবেষক ক্রিপ্টো কারেন্সি এর লেনদেনের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে, ক্রিপ্টো কারেন্সি এর ৫০% এর বেশি লেনদেন হয় অবৈধ খাতে। হ্যাকিং , মাদক ও অন্যান্য অবৈধ খাতে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ খাতে লেনদেন এটি শরীয়ত সম্মত না হওয়ায় না হওয়া হারাম হওয়ার অন্যতম কারণ। 

ক্রিপ্টো কারেন্সি বাংলাদেশে বৈধ না অবৈধ 

বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ক্রিপ্টো কারেন্সি অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৪৭ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-2012 অনুযায়ী বাংলাদেশের সমস্ত ক্রিপ্টো কারেন্সি অবৈধ। বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টো কারেন্সি এর যে কোন প্রকার লেনদেন অনুমোদন করে না। এবং কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে এর মাধ্যমে অর্থায়ন করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে ঘোষণা করা করেছে। ক্রিপ্টো কারেন্সি একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা হওয়ায় এর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। বরং,এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থের লেনদেন হয়। অবৈধভাবে ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে বিশ্বে 35 তম।

শেষ কথা: 

ক্রিপ্টো কারেন্সি মুদ্রা বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও আমাদের উচিত হবে সম্পূর্ণভাবে এটাকে পরিহার করা। প্রথমত ধর্মীয় দৃষ্টিতে বিষয়টি জায়েজ নয়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৪৭ অনুসারে ক্রিপ্টো কারেন্সি সম্পূর্ণ অবৈধ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url