সম্মানিত হতে চাইলে আলি(রা.) এর সাতটি উপদেশ মেনে চলুন
আজকের আর্টিকেলে আমরা এক আগন্তুক কে দেওয়া হযরত আলী (রা:) এর সাতটি উপদেশ সম্পর্কে জানব। যা মেনে চললে দুনিয়া এবং আখিরাতে আল্লাহ আমাদের সম্মানিত করবেন।
একবার এক ব্যক্তি হযরত আলী রাঃ এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন"হে আলী, আমি দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হতে চাই। আমার জীবনে যেন কোন সমস্যা না থাকে। আমি দুনিয়ার যে কোন জায়গায় যাই মানুষ যেন আমাকে সম্মান করে, আমার প্রতি যেন তাদের স্নেহ,ভালোবাসা,সহানুভূতি কাজ করে। আপনি আমাকে বলে দিন এ জীবনে আমি কি আমল করলে দুনিয়ায় একজন সম্মানিত মানুষ হতে পারব? এবং আমি যাতে দুনিয়ার বুকে সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি , সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে পারি।"
হযরত আলী রাঃ ওই আগন্তিক ব্যক্তিকে বললেন," যদি তুমি সত্যি চাও দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হবে, এবং যে কেউ তোমার দিকে তাকাবে তার হৃদয়ে যেন তোমার জন্য মহব্বত, স্নেহ, সহানুভূতি সৃষ্টি হয় তাহলে আমি তোমাকে কিছু উপদেশ দেবো। যদি তুমি সেগুলো মানতে পারো তাহলে তুমি সফল হবে। আমি আজ তোমাকে সাতটি উপদেশ দেবো।"
হযরত আলী এর ৭টি উপদেশ:
পিতা মাতার সাথে সর্বদা সদ্ব্যবহার করা
হযরত আলী বলেন," হে আমার ভাই তুমি যদি ইহকাল এবং পরকালে সম্মান পেতে চাও তাহলে সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে কোনক্রমে, কোনভাবেই, ভুলেও কোন পরিস্থিতিতে নিজের বাবা মা এর সাথে খারাপ আচরণ করবে না। মনে রাখবে, এখানে যদি তোমার বিচ্যুতি হয় তাহলে দুনিয়াতে তোমার রিযিক উঠে যাবে এবং আখেরাতেও তোমার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং লাঞ্ছনা।"
প্রিয় পাঠক পিতা-মাতা আমাদের জন্য রহমত এবং বরকত স্বরূপ। পিতা মাতা আমাদের অনেক কষ্টে করে লালন পালন করে। সেই সন্তান যখন, পিতা মাতা কে মুখের উপর অপমান-অপদস্থ করে, কষ্ট দেয় তখন ব্যাপারটা কতটা কষ্টের সেটা আমরা চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করলেই বুঝতে পারি। একবার ভেবে দেখুন, আপনি গর্ভে থাকতে লাথি মারতেন মায়ের পেটে তখন আপনার উপস্থিতিতে মা খুশিতে বিশ্ব জয় করে ফেলার আনন্দ অনুভব করত। কিন্তু যখন, সে সন্তান বড় হয়ে মায়ের অন্তরে আঘাত করে তখন ব্যাপারটা কতটা যন্ত্রণার একটু ভেবে দেখুন।
হযরত আলী বলেছেন,কখনোই আপনার পিতা মাতার সাথে কঠোর আচরণ করবেন না। আপনার পিতা-মাতা যদি আপনার সাথে জুলুম করে, আপনার সাথে বড় ধরনের অন্যায় করে, হতেই পারে। শয়তানের প্ররোচনা থেকে আমরা কেউই মুক্ত না। সে ক্ষেত্রে, ধৈর্য অবলম্বন করুন। চুপ থাকুন। বলতে হলে বিনয়ের সাথে বলুন। তবুও কাজ না হলে, ধৈর্য ধরুন। কিন্তু, কখনো সীমালংঘন করবেন না।
মহান রাব্বুল আলামিন বলেন"আমি আমার পক্ষ থেকে মা কে এমন একটি বিশেষ নিয়ামত দান করেছি, সেটা হচ্ছে আমি আমার পক্ষ থেকে মায়ের হৃদয়ে 70 গুণ ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দিয়েছি পিতার থেকেও।"
ফেরেশতারা মাকে সৃষ্টির পর আল্লাহতালাকে প্রশ্ন করেছিলেন ,"হে আল্লাহ মায়ের মধ্যে আপনি বিশেষ কি গুণ দান করেছেন।" আল্লাহতালা প্রতি উত্তরে বলেছিলেন, "আমি মায়ের মধ্যে পিতার থেকে ৭০ গুণ বেশি ভালোবাসা দান করেছি। মায়ের মমতা এত মধুর চেয়ে এ থেকে বঞ্চিত হলে পৃথিবীর আর কোন কিছুই যেন পাওয়া হয় না।"
আল কোরআনে পিতা মাতা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, "তোমার রব আদেশ দিয়েছেন, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো"। [সূরা: বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩]
আল্লাহ তাআলা বলেন, "আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় ২ বছরে।সুতরাং,আমার শুকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় করো"। [সূরা: লুকমান, আয়াত: ১৪]
আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আরো বলেন "আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো"। [সূরা: নিসা, আয়াত: ৩৬]
আল্লাহ সুবাহানাতায়লা, আমাদের পিতা মাতার প্রতি সদয় হওয়ার তৌফিক দান করুক। ভুল করেও কোনক্রমে আমাদের দ্বারা পিতা-মাতা যেন আঘাত না পায়; আমরা যেন পরকালকে নষ্ট করে না ফেলি।
কখনোই কারো উপর জুলুম করবেন না
কোনক্রমেই কারো উপর কখনো জুলুম করা যাবে না। হোক সে ধনী ,গরীব অথবা মিসকিন। সুযোগ পেলে যেমন আপনার ধনী ব্যক্তির উপর জুলুম করা উচিত না ঠিক তেমনি গরিব ব্যক্তির ক্ষেত্রেও। গরিব ব্যক্তির উপর জুলুম করলে পাপ আরও কয়েক গুণ বেশি হবে। জালিম ব্যক্তির উপর আল্লাহতালার আজাব অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ছাড় দিয়ে রেখেছেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। আমরা ইতিহাস পড়লে দেখতে পাই, ফেরাউন,নমরুদ,আবু জেহেল এর পরিণতি। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন জালিম ব্যক্তির শেষ পরিণতি কখনোই ভালো হয়নি। আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের জন্য যে শাস্তি দিয়েছে তা খুবই কঠোর ছিল। জুলুম একটি ভয়াবহ জিনিস যা এক জায়গায় স্থির থাকেনা। একটা পর্যায়ে আপনার নিজের দিকে ফিরে এসে আপনাকে ডুবিয়ে দেবে। যেমন ভাবে ফেরাউনকে নীলনদে ডুবিয়েছিল। আপনার করা জুলুম একসময় আপনাকে দেখিয়ে দেবে যে কারো উপর জুলুম করলে তার শাস্তি কতটা ভয়াবহ হয়।
সুতরাং, প্রতিটি মুহূর্তে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। হাঁটু গেড়ে আল্লাহর কাছে বলুন,'হে আল্লাহ আমাকে মাফ করুন। অন্তরকে প্রশান্ত করুন।
"রাব্বানা জালাম না আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তার তারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাসিরিন।" [সূরা আরাফ:২৩]
হে আমার আল্লাহ আমাদের জুলুম হয়ে গেছে, অন্যায় হয়ে গেছে, ভুল হয়ে গিয়েছে। হে আমার মালিক আমাকে ক্ষমা করে দিন। এভাবে আল্লাহ এর কাছে দোয়া করে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এ দোয়াটি পাঠ করে হযরত আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভ করেছিলেন। এ দোয়াটি পড়ে আপনি নিজেকে পরিশুদ্ধ করে দিন, শপথ করুন কখনো কারো উপর জুলুম করবেন না।
আরো পড়ুনঃদেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে এই চারটি আমল করুন
কখনোই মিথ্যা বলবেন না
মিথ্যার আশ্রয় নিলে সাময়িক লাভ হয়তো পেয়ে যাবেন, কিন্তু দীর্ঘকালীন ক্ষতির মুখে পড়বেন। কিন্তু,সত্যবাদীতার মাধ্যমে মনে হবে সাময়িকভাবে কোন লাভ বা উপকার পাবেন না। কেননা সত্য বলার জন্য আপনার পণ্য ভালো বিক্রি হচ্ছে না, সত্য বলার জন্য মানুষ আপনার সার্ভিস নিচ্ছে না। সত্য বলার জন্য অর্থনৈতিকভাবে সাময়িক ক্ষতির মধ্যে পড়লেও এ সত্য এমন একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যেটা দীর্ঘমেয়াদি আপনাকে সফলতা এবং লাভের মুখ দেখাবে। সেটা দুনিয়াবী ব্যবসা-বাণিজ্য বলেন, সম্পর্ক বলেন অর্থাৎ রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল ক্ষেত্রেই।
অপরদিকে মিথ্যা সকল গুনাহের মা। পৃথিবীতে যত রকমের গুনাহ রয়েছে আপনি সকল গুনাহের মূল কারণ খুঁজে বের করেন তাহলে দেখবেন যে সকল গুনাহের মূলে রয়েছে মিথ্যা। মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের লানত। তাই, কখনোই আমাদের মিথ্যা বলা উচিত না।
পাঠক আসুন, আমরা ওয়াদা করি আজ থেকে কখনো আর মিথ্যা কথা বলবো না, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর কাছে তওবা করি এবং নিজেদের পরিশুদ্ধ করি। সত্যের উপর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অটল থাকি।
কখনোই নেশা করবেন না
হযরত আলী(রা.) ওই ব্যক্তিকে চতুর্থ যে বিষয়টি বলেন তা হচ্ছে কখনোই নেশা করবেন না।
আসলে যারা নেশা করে তারা কখনোই জানে না নেশা তাদের কিভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর যখন জানতে পারে তখন আর ফিরে আসার রাস্তা থাকে না। যেটা স্পর্শ করে এর উপর নেশাগ্রস্ত হওয়া যায় কিন্তু সহজে এ থেকে বের হওয়া যায় না। নেশার জন্য অনেক পরিবার এবং বংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষের মানসিক প্রশান্তি নষ্ট হয়ে যায়। একজন নেশাগ্রস্থ মানুষ কখনই মানসিক শান্তি পায় না। একটি মুহূর্তের জন্য সে শান্তিতে থাকতে পারে না। আপনি যদি নেশা করেন তাহলে এর প্রভাব আপনার উপর তো পড়বেই এর সাথে আপনার পরিবারের সদস্যের উপর এর ভয়ংকর প্রভাব পড়বে। আপনি কি একাই কষ্ট ভোগ করবেন এমনটা নয়, আপনার পরিবারের সদস্যদের কে ও একই সাথে আপনার পরিণতির ফল ভোগ করতে হবে।
একজন নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি প্রচন্ড পরিমাণ গালাগালি করে, আত্মীয়-স্বজনকে অপদস্থ করে, ছোট করে, স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করে, বাবা মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, প্রায় সে পুরো পরিবারকে অসুস্থ করে ফেলে। এমনকি এ নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি দ্বারা সমাজের অধিকাংশ খারাপ কাজগুলো সংঘটিত হয়।
আল্লাহ আমাদের নেশা দ্রব্য থেকে হেফাজত করুক, আমিন।
যেনা থেকে দূরে থাকুন
পঞ্চম যে বিষয়টি হযরত আলী রাঃ ঐ ব্যক্তিকে নিষেধ করলেন তা হল যেনা। তিনি সেই ব্যক্তিকে বললেন, তুমি কখনোই যেনার ধারে কাছে যাবে না।
আস্তাগফিরুল্লাহ
আজকে যদি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতের সময়কাল হতো, আজকে যদি হযরত ওসমান(রা:) , হযরত উমার (রা:) কিংবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়কাল হতো তাহলে আজকের প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ তরুণীদের বিয়ে অনেক সহজ করে দেওয়া হতো। যেনা কঠিন হয়ে যেত সমাজে। বিয়ের সহজ হয়ে গেলে সাধারণত যেনা কঠিন হয়ে যায়। তবে,হ্যাঁ সমাজে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ আছে যারা বিয়ের পরও যেনায় লিপ্ত হয়। এরকম বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ যারা বিয়ের পরও যেনায় লিপ্ত হয় তাদের ইসলামী শরীয়তে একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।
আজকাল আমাদের সমাজে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা যেনায় লিপ্ত হচ্ছে এর প্রধান কারণ হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্কে বিয়ে না দেওয়া। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা দেখা গিয়েছে, বিয়ে যদি সহজ করে দেওয়া হয় তাহলে সমাজে যেনার পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়।
যেনার শাস্তি:
আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। তা একটি অশ্লীল কাজ এবং খারাপ পন্থা।’ [সুরা : বনি ইসরাঈল : ৩২]
আল্লাহ তাআলা বলেন, "স্মরণ রেখো, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার হোক এটা কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।" [সুরা : নুর, আয়াত : ১৯]
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন"চোখের ব্যভিচার হল দেখা। কানের ব্যভিচার শোনা। জিহ্বার ব্যভিচার বলা। হাতের ব্যভিচার ধরা। পায়ের ব্যভিচার হাঁটা। মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৫৭)
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ’–[সূরা নূর: ২]
যেনা হচ্ছে মানুষের রিজিকের জন্য সবচেয়ে বড় ধ্বংসের কারণ। এ পৃথিবীতে যেন কোন ব্যক্তি কখনোই সচ্ছলতার মুখ দেখেনা। এদের জীবনে কোন না কোন এক পর্যায়ে দারিদ্রতার গ্রাস করে। এছাড়া যেনাকারী ব্যক্তি প্রচন্ড মানসিক অশান্তিতে ভোগে। এ অশ্লীলতা তাঁকে তার ভেতর থেকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ আপনি আমাদের সবাইকে, যেনা থেকে হেফাজত করুন ,আমীন।
কখনো অহংকার করবেন না
ষষ্ঠ যে বিষয়টি হযরত আলী(রাঃ) ওই ব্যক্তিকে বলেন,তা হলো কখনই অহংকার করবেন না।
কেননা,অহংকার শুধুমাত্র ঐ এক আল্লাহর মানায় যিনি এক,অদ্বিতীয়। ইতিহাস পড়লে একটা বিষয় খুবই স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয় যে অহংকার পতনে মূল কারণ। অহংকারীর কোন ভবিষ্যৎ নেই। হয়তো আল্লাহতালা আপনাকে অনেক নিয়ামত দান করেছেন, অনেক সফলতা দান করেছেন যা আপনার থেকে অনেক জ্ঞানী বা মেধাবী ব্যক্তি পাইনি। এটা আল্লাহর এক প্রকার দয়া বা রহমত। আল্লাহ আপনাকে পছন্দ করে নেয়ামতগুলো দান করেছেন। আল্লাহর এই নিয়ামত পেয়ে যদি যদি আপনি অহংকারী হয়ে যান, মানুষকে মানুষ মনে না করেন, দাম্ভিকতায় মাটিতে পা না পড়ে তাহলে একটা বিষয় মনে রাখবেন যে যে আল্লাহ আপনাকে এত কিছু দিতে পেরেছেন তার সবকিছু নিয়ে নিতে এক মিনিটও সময় লাগবে না। তিনি শুধু 'কুন' বললে তা হয়ে যায়।
সুতরাং,সর্বদা আল্লাহর নিয়ামতের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, যে কখন আপনার মধ্যে যেন অহংকার না আসে। মনের মধ্যে অহংকার আসলে সাথে সাথে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করুন। মনে রাখবেন অহংকার এমন এক আগ্নেয়গিরির লাভা যে নিজে ধারণ করবে সে নিজে ধ্বংস হয়ে যাবে, আশেপাশের মানুষের কিছুই হবে না।
হারাম উপার্জন
হযরত আলী রাঃ সে ব্যক্তিকে বলেন তুমি কখনোই হারাম উপার্জন করবে না,খাবেনা। কেননা, মানুষ হারাম উপার্জন করে, হারাম উপার্জন খায়, হারাম কাপড় পড়ে আরে সকল মানুষরা জীবনে সবচেয়ে বেশি অশান্তিতে থাকে। সন্তানরা সু সন্তান হয় না, আত্মীয়-স্বজনের কাছে কখনো সম্মান পায় না, মানুষেরা তাদের ঘৃণা চোখে দেখে। তাহলে এত সম্পদ এতো কিছুর মূল্য কোথায়? সম্পদের লোভ অত্যন্ত খারাপ মানুষ মারা যায় অথচ তাদের সম্পদের লোভ কখনো পাবে না।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন"আদম সন্তানকে যদি একটু স্বর্ণের পাহাড়ও দান করা হয় এমনকি পুরো পৃথিবী স্বর্ণময় করে দেওয়া হয় তাহলে সে বলবে হে আল্লাহ দেওয়ার মতো আরও কয়েকটি স্বর্ণের পৃথিবী আছে কি? মনে রাখবে মাটি ছাড়া আদম সন্তানের পেট কখনো পূর্ণ হবে না।"
অতএব আসুন, আল্লাহ তাআলার কাছে আমরা প্রার্থনা করি আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের লোক থেকে দূরে রাখে, আমাদের চাহিদা সীমিত রাখে এবং সব সময় শুকরিয়া আদায় করার তৌফিক দান করে, আমিন।
লেখকের কিছু কথা:
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,আসুন আমরা উপরের সাতটি বিষয় এর উপর আমল করি। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করি,ক্ষমা প্রার্থনা করি আল্লাহ আমাদের হৃদয়ে নূর সৃষ্টি করে দেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "আমি যদি জ্ঞানের শহর হই তাহলে আলী হচ্ছে তার দরজা।"আসো সর্বদা আমরা হারাম থেকে বেঁচে থাকি, পিতা মাতার খেদমত করি যেভাবে তারা আমাদের ছোটবেলার লালন পালন করেছে, আমাদের আশা গুলো পূরণ করেছে, আমাদের ভালোবেসেছে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url