একাকীত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে অঘোষিত পুরস্কার
আমরা আমাদের জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে একাকী হয়ে পড়ি। হতাশা আমাদের আঁকড়ে ধরে। অথচ,আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের পুরস্কৃত করার জন্য একাকীত্ব দান করেন। আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো, যে সাতটি কারণে আল্লাহ আমাদের একাকীত্ব অনুভব করান।
কখনো কখনো আমাদের মনে হয় আমাদের চারপাশে একাকীত্ব ঘিরে ধরেছে। চারপাশের সবকিছু আমাদের পিছনে রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সম্পর্ক গুলো ভেঙ্গে যায়। আর নীরবতা যেন আরো কর্কশ হয়ে ওঠে। মনে হয়, যেন আল্লাহ আমাদের সবার থেকে, সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আমরা মনে করি, আল্লাহ আমাদের শাস্তি দিচ্ছেন। কিন্তু আসলে, তেমনটা নয়। একাকীত্ব শাস্তি নয়, একাকীত্ব হচ্ছে পুরস্কার লাভের প্রক্রিয়া। আল্লাহ তাদের সেই বান্দাদের আলাদা করেন যাদের তিনি পরিশুদ্ধ করতে চান এবং তাদেরকে আরো মহান কোন কিছুর দিকে নিয়ে যেতে চান। আজকে আমরা জানবো, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের কেন একা করে দেন।
যে সাতটি কারণে আল্লাহ আমাদের একাকীত্ব দান করেন
হৃদয়কে রক্ষা করার জন্য
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে দেখবেন যে, যখন আপনি অনেক মানুষের মাঝে থাকেন তখন খুব সহজে আপনার মন ও হৃদয় বিভ্রান্ত হয়ে যায়। ক্ষণস্থায়ী কথাবার্তা, দুনিয়াবি তুলনা বা ক্ষতিকর প্রভাবের মাঝে আটকে পড়ে। তাই মাঝে মাঝে আল্লাহর এসব থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে নেই। একাকীত্ব শাস্তি নয় বরং আল্লাহ আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করার জন্য সম্পন্ন একা করে দেয়।। আমাদের হৃদয় হচ্ছে হীরার মতো। হীরাকে উজ্জ্বল রাখতে হলে এমন পরিবেশে রাখতে হবে যেখানে সেটি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। তেমনি মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের একা করে দেন, ভিড় থেকে সরিয়ে রাখেন যাতে আমাদের মন পবিত্র থাকে এবং খারাপ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে। আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ থাকে যারা ইসলামী মূল্যবোধ নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। তাদের সাথে যদি আমরা নিয়মিত চলাফেরা করি তাহলে একসময় আমরা তাদের মত হয়ে যাব, সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বো। কোন এক সময় যদি তারা আমাদের জীবন থেকে দূরে সরে যায় তাহলে হয়তো আমাদের কষ্ট হবে কিন্তু আমাদের আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা উচিত কেননা আল্লাহ আমাদের তাদের খারাপ থেকে রক্ষা করার জন্য একাকী করে দিয়েছেন। এই একাকীত্ব দানের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের একটি সুযোগ দিয়ে থাকেন নিজেকে পরিশুদ্ধ করার, তওবা করার এবং আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করার। আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বলেন"দুর্বল হয়োনা এবং দুঃখ করো না। তোমরাই হবে বিজয় যদি তোমরা মুমিন হও"
একাকীত্ব আসলে একটি স্থান যা আল্লাহ তাঁর ভালোবাসা তাঁর পথনির্দেশনা এবং তাঁর শান্তিতে পূর্ণ করবেন।
চরিত্র গঠনের জন্য একাকীত্ব
আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন, যখন আপনি নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করেন তখন চারপাশের কোলাহল, চঞ্চলতা কমে আসতে শুরু করে। আল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার জীবনের অপ্রয়োজনীয় মানুষ অবান্তর কথাবার্তা এবং মনোযোগ নষ্ট করে উৎসগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছেন।কারণ একাকীত্ব আল্লাহর একটি উপায় যা আপনাকে আরো পরিশুদ্ধ এবং উন্নত করার জন্য আসে। ভাবুন তো যখন আপনি প্রতিনিয়ত মানুষের কথাবার্তা, মতামত জানান, অর্থহীন ব্যস্ততা বা খারাপ সম্পর্কের মধ্যে থাকেন তখন কি আপনি নিজের কথা শুনতে পান অথবা আল্লাহর সঙ্গে গভীর ভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন? এই একাকীত্ব সে কোলাহল দূর করে আপনাকে নিজের ভেতরকার বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বাধ্য করে। এটি আপনাকে শেখায় কোন বিষয়গুলো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। এখন বলুন তো আপনি কি কখনো এমন অনুভব করেছেন যখন আপনি একা থাকেন এবং সেই নিস্তব্ধ অস্বস্তিকর মুহূর্তগুলো আসে তখন হঠাৎ এমন কিছু নিজের সম্পর্কে আবিষ্কার করেন যা আপনি এড়িয়ে চলছিলেন? হয়তো এটি একটি খারাপ অভ্যাস যা আপনি লুকানোর চেষ্টা করছিলেন অথবা একটি দুর্বলতা যা আপনি লুকিয়ে রেখেছিলেন। আল্লাহ আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য একা করেন না বরং আমাদের উন্নত করার জন্য একা করে থাকেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর জীবনী পড়ে আমরা দেখতে পাই যে, তিনি ওহি প্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে প্রায় হেরা গুহায় একাকী ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। একাকীত্ব শুধু শারীরিক না এটি ছিল তাঁর আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির একটি অংশ। সুতরাং, হতে পারে একাকীত্ব আপনার জীবনে একটি বড় নিয়ামক। আল্লাহর একটি পন্থা যা আপনাকে একটি বড় উদ্দেশ্যের জন্য প্রস্তুত করছে ।তবে বাস্তবতা হলো, একা থাকা সব সময় সহজ নয়। অনেক সময় এটি ভারী লাগে, এমনকি বেদনাদায়ক ও হতে পারে।আপনার মনে হতে পারে যেসব মানুষ একসময় আপনার কাছে ছিল তারা কেন হঠাৎ দূরে সরে গেল? জানেন কি সবাই আপনার সঙ্গে এই যাত্রাপথে থাকার জন্য নয়; কিছু মানুষ শুধু সাময়িক সঙ্গী আর কিছু মানুষ শিক্ষা দিয়ে চলে যাওয়ায় জন্য আসে।এটাই বাস্তবতা। একাকিত্বের অস্বস্তি সাময়িক কিন্তু এটি যে স্পষ্টতা ও শক্তি আনে তা আজীবন থাকতে পারে ।এই নীরবতায় আপনি শিখেন কেবল আল্লাহর উপর নির্ভর করতে, মানুষের গ্রহণযোগ্যতা নয়।বরং, স্রষ্টার সঙ্গে আপনার সম্পর্কই আপনার প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করে। একাকীত্ব কোন শাস্তি নয়,এটি আল্লাহ আপনাকে সেই ব্যক্তি বানাচ্ছেন যেটি আপনি হতে পারেন।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করে
আমরা প্রায় এমন অনুভব করি যে,আমাদের কষ্ট কেউ অনুভব করতে পারছে না। আমাদের কষ্টের কথা যখন অন্যকে বলতে চাই বা বলি তখন তাদের প্রতিক্রিয়া আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে না। এই অনুভূতি কিন্তু এমনি এমনি আসেনি। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিমন্ত্রণ। যখন আল্লাহ আমাদের একা করেন তখন এটি আল্লাহর দিকে টেনে নেওয়ার একটি উপায়। যখন আমাদের জীবন সহজ, সুন্দরভাবে চলে তখন আমরা পরিবার বা বস্তুগত স্বাচ্ছন্দের উপর নির্ভর করি। কিন্তু, যখন আমরা একা থাকি, সেসব ভরসা খুঁটিগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়।তখন আমাদের পাশে একমাত্র আল্লাহ থাকেন। একটা প্রশ্ন আমাদের মনে আসে, আমরা শেষ কবে আল্লাহর কাছে অশ্রুসিক্ত চোখে ফিরে গেছি? আমরা তখনই আল্লাহর কাছে ফিরে গেছি যখন আমরা বুঝতে পেরেছি আমাদের চারপাশে কেউ নেই আল্লাহ ব্যতীত। একাকীত্ব আমাদের এই গভীর নির্ভরশীলতার দিকে ধাবিত করে। যেন মনে হয় আল্লাহ আমাদের বলছেন, তুমি আমার কাছে ফিরে এসো, আমি তোমার জন্য যথেষ্ট। তবে একাকীত্ব বলতে নিজেকে সবার মধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হচ্ছে না। ইসলাম ঐক্যের ধর্ম। ঐক্যই হচ্ছে আমাদের শক্তি। এখানে একাকীত্ব বলতে একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা ও ব্যক্তিগত পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এই একাকীত্ব আমাদের আরো শক্তিশালী এবং অর্থবহ সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করবে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীরভাবে একাকিত্বের মুহূর্তগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন। হতে পারে সেটা হেরা গুহায়, যুদ্ধক্ষেত্রে এবং মক্কায় নির্বাচনের সময়। তবে এই মুহূর্তগুলো বিচ্ছিন্নতার জন্য বরং প্রস্তুতির জন্য ছিল। এই অভিজ্ঞতা থাকে এমন এক মহা মানবের্ পরিণত করেছিলেন যে ইসলামের পতাকা তলে সমস্ত উম্মাহকে একত্রিত করেছিলেন। আমাদের একাকীত্ব তেমনি মানুষ থেকে চিরতরে দূরে সরে যাওয়ার জন্য নয় বরং সাময়িকভাবে একটু পিছিয়ে আসা।যেন আমরা শক্তি সঞ্চয় করতে পারি এবং আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করত পারি।
যদি আপনি কোন একাকীত্ব অনুভব করেন তাহলে মনে রাখবেন এটি বিচলিত করার জন্য নয় বরং এটি আপনার ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য। আর যখন আপনার ভিত্তি মজবুত হবে তখন আপনি অন্যদের সঙ্গে একতাবদ্ধ হতে এবং তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে আরো সক্ষম হবেন।
একাকীত্ব একটি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে
একটা ব্যাপার প্রায় আমাদের সাথে ঘটে, যখন আমরা উন্নতি করতে যাই তখনই আমাদের জীবন থেকে কিছু না কিছু, কেউ না কেউ হারিয়ে যায়। হয়তো এমন এক বন্ধুত্ব ছিল যা ভেঙে যাওয়া কল্পনা তো দূরে থাক, দুঃস্বপ্নেও ভাবি না আমরা। হতে পারে এমন একটি সাপোর্টিভ মানুষ, ব্যবস্থাপনা যা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ করে তা বন্ধ হয়ে গেছে।
আমরা কি কখনো নিজেকে প্রশ্ন করেছি এমনটা আমাদের সাথে কেন হলো? একাকীত্ব মানেই শুধু প্রত্যাখ্যান নয় বরং একটি পরিশুদ্ধি আল্লাহ আমাদের জীবনে এমন বিষয়ে সম্পর্ক গুলোকে সরিয়ে দেন যা আমাদের জীবনকে মেঘাচ্ছন্ন করতে পারে ।তিনি আমাদের মনোযোগ আরও তীক্ষ্ণ করার জন্য এবং এমন শিক্ষা দেওয়ার জন্য এটি করেন যা আরামের মধ্য থেকে কখনোই শেখা সম্ভব নয়। আমরা নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর ঘটনা জানি, যখন তার রক্তের ভাইয়েরা কুপে তাঁকে নিক্ষেপ করেছিলেন ।তখন তিনি ছিলেন সবসময় একা এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। কিন্তু,সেই একাকীত্ব তাকে ছেড়ে দেওয়া ছিল না বরং এটা ছিল প্রস্তুতি। কুপের সেই নীরবতা এবং পরে কারাগারের সময়গুলোর মাধ্যমে ইউসুফ আলাইহিস ওয়াসাল্লাম কে একজন মহান নেতার রূপে গড়ে তোলা হচ্ছিল। যখন তিনি সেই পর্যায়ে গুলো অতিক্রম করলেন তখন তিনি শুধু একজন মানুষ ছিলেন না তিনি হয়ে উঠেছিলেন অসাধারণ প্রজ্ঞা এবং ঈমানের অধিকারী। হয়তো এই একাকীত্বের মাধ্যমে আল্লাহ আপনাকে এমন কিছু বলার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করছেন যে আপনি এখনো কল্পনাও করতে পারেননি। এটি স্বীকার করতেই হবে, একাকীত্ব কষ্ট দেয়। মানুষকে হারানোর নীরবতার মুখোমুখি হওয়া এবং উপেক্ষিত হওয়ার অনুভূতি আপনার আত্মমুল্য কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে আগুনে পুড়েই সবচেয়ে ভালো তরবারি তৈরি হয়। এই একাকীত্বের মাধ্যমে যে সংগ্রাম গুলো হচ্ছে এগুলো আল্লাহর সেই উপকরণ যার মাধ্যমে তিনি আপনাকে আপনার সর্বোত্তম রূপে পরিণত করছেন। তাড়াহুড়া করে এ নীরবতা পূরণের চেষ্টা করবেন না। যে সম্পর্ক বা সংযোগ গুলো আল্লাহ সরিয়ে দিয়েছেন তা পুনরায় জোর করে ফিরিয়ে আনা হয় আনার চেষ্টা করবেন না। বরং, এই সময়টা নিজের ভেতরে এবং উপরের দিকে তাকানোর জন্য কাজে লাগান। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন আল্লাহ আমাকে এর মাধ্যমে কি শিখাতে চাইছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন একাকিত্বের শাস্তি থেকে একটি উপহার বানিয়ে দেয়। যখন আপনি এই পথ টুকু অতিক্রম করবেন তখন একটি গভীর সত্য উপলব্ধি করবেন;এই একাকীত্ব আপনাকে ভাঙার জন্য ছিলনা বরং এটি আপনাকে গড়ে তোলার জন্য ছিল।
আরো পড়ুনঃতাকদীর নির্ধারিত হলে পাপের জন্য আল্লাহ নিজেই দায়ী
আল্লাহর পরিকল্পনা ও ধৈর্য
আপনার কি কখনো মনে হয়েছে আপনার জীবন যেন থমকে আছে, যেন আপনি যেটা চান তা সব সময় আপনার নাগালের বাইরে। হয়তো আপনি দেখছেন অন্যরা এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আপনি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। এটি আমাদের কাছে কষ্টদায়ক মনে হয়,কিন্তু আল্লাহ দেরি মানে তাঁর না বলা নয়। অনেক সময় তিনি আমাদের একাকিত্বে রাখেন ।কারণ,তিনি আমাদের জন্য আরো ভালো কিছু তৈরি করছেন।এই অপেক্ষার সময়টা অপচয় নয় এটি আসলে একটি প্রস্তুতির সময়। এটি একটি গুটির মত যেভাবে একটি সুমপোকা স্থিরতা সহ্য করে প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়। ঠিক তেমনি আপনার এই একাকীত্ব পরিবর্তনের একটি ধাপ। নবী মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। তাকে তাঁর জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান করার পূর্বে তিনি বহু বছর মিশরের বাইরে ছিলেন । তাঁকে মরুভূমিতে ভেড়া চড়াতে হয়েছিল ।এটা হয়তো তখনকার লোকদের কাছে পিছিয়ে যাওয়া মনে হয়েছিল কিন্তু এটি ছিল আল্লাহর পরিকল্পিত প্রস্তুতি। তিনি তাঁকে নেতা হওয়ার জন্য তৈরি করছিলেন। যদি আপনার অপেক্ষা হয় আল্লাহর, আপনার জীবনে কাজ করার প্রধান সময় যদি এই সময়টি হয়, আপনার ঈমান বাড়ানোর জন্য আপনার দক্ষতা গুলো আরো ভালো করার জন্য ।আর সেই সমস্ত জিনিস ছেড়ে দেওয়ার জন্য যেগুলো আপনাকে আটকে রেখেছে। ধৈর্য মানে হাত গুটিয়ে বসে থাকা নয়। এটি আল্লাহর আল্লাহর সময়ের উপর বিশ্বাস রাখা। এই সময়টি এমনভাবে কাজে লাগান যাতে আপনি মানসিক এবং আধ্যাত্মিক ও আবেগগত দিক থেকে নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারেন। যখন আল্লাহর সেই মুহূর্ত আসবে আপনি যেন প্রস্তুত থাকেন তাঁর পরিকল্পনা অংশ নিতে।মনে রাখবেন আল্লাহর সবকিছুর সঠিক সময় জানেন। যা এখন আপনার কাছে বিলম্ব মনে হচ্ছে তা তাঁর বড় পরিকল্পনার অংশ।এ থেমে থাকা কোন শাস্তি নয়, এটি আপনাকে প্রস্তুত করার জন্য।
একাকীত্ব আপনার উদ্দেশ্যকে শুদ্ধ করে
কখনো কখনো একা থাকা অসহনীয় মনে হতে পারে। সেই নীরবতা সেই একাকীত্ব এগুলো আপনাকে সব কিছু নিয়ে প্রশ্ন করতে বাধ্য করতে পারে।কিন্তু এর মধ্যে লুকিয়ে আছে একটি সত্য। একাকীত্ব হলো সেই স্থান যেখানে আপনার উদ্দেশ্য শুদ্ধ হয় ।যখন আপনি মানুষের ভিড়ে থাকেন তাদের মতামত বিচার এবং প্রত্যাশা আপনার হৃদয়কে বিভ্রান্ত করতে পারে আপনি হয়তো অজান্তে তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু যখন আল্লাহ আপনাকে কোলাহল থেকে দূরে সরিয়ে নেন তখন এটি একটি দাওয়াত। নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর নিজেকে প্রশ্ন করার। আমি এটা কার জন্য করছি মানুষের জন্য নাকি শুধু আল্লাহর জন্য। নবী ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদাহরণস্বরূপ যখন তিনি আল্লাহর প্রতি তাঁর অবিচল বিশ্বাসের কারণে তাঁর জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন তাঁর ব্যক্তিত্বই তা শক্ত ভিত্তি হয়ে উঠেছিল।তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে খুশি করার বিষয় চিন্তিত ছিলেন না। তিনি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রতি মনোযোগী ছিলেন তার কৃতিত্ব কোন শাস্তি ছিল না বরং তাড়াতাড়ি উজ্জ্বল হয়ে প্রকাশ করেছিল। আপনার ক্ষেত্রে কি এটি একই নয়? একবার ভাবুন, কতবার আপনি এই দুনিয়ার প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টায় জড়িয়ে পড়েন?কতবার আপনি অন্যের মতামতকে আপনার আত্ম মূল্যের নির্দেশক বানিয়ে ফেলেন? একাকিত্বে আল্লাহ আপনাকে এই ফাঁদ থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ দেন। একটু ভাবনা চিন্তা করুন, যদি কেউ আপনাকে না দেখতো তবুও কি আপনি একই নিষ্ঠার সঙ্গে নামাজ পড়তেন? তবুও কি আপনি দান খয়রাত করতেন? তবুও কি আপনি নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করতেন ?একাকীত্ব আপনার আসল উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করে। একটি বিভ্রান্তি দূর করে এবং আপনাকে আপনার আন্তরিকতার মুখোমুখি দাঁড় করায়। তাই পরের বার যখন আপনি নিজেকে একা অনুভব করবেন,এটি মনে রাখুন আল্লাহ আপনার হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করছেন। তিনি আপনাকে প্রস্তুত করছেন তাঁর সন্তুষ্টির জন্য, নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার জন্য। মানুষের প্রশংসার জন্য নয় এবং এখানে প্রকৃত শক্তি নিহিত।
একাকীত্ব অনন্য দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করে
যখন আল্লাহ আপনাকে একা করেন তখন এটি কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই নয়। তিনি আপনাকে এমন একটি মিশনের জন্য প্রস্তুত করছেন যা কেবলমাত্র আপনি পূরণ করতে পারবেন। সেই নীরবতা, সেই একাকীত্ব এগুলো তার পরিকল্পনার অংশ। এগুলো এমন অসাধারণ গুন তৈরি করার উপায় যা আপনার মধ্যে লুকিয়ে আছে। নবী ইউসুফ আলাইহিস ওয়াসাল্লাম এর কথা চিন্তা করুন। তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে একটি কুপে ফেলে দেয়। তাঁকে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি করা হয় এবং অন্যায় ভাবে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর একাকীত্ব কোন কাকতালীয় ঘটনা ছিল না ।প্রত্যেকটি নিঃসঙ্গ মুহূর্ত তাঁকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছিল, যিনি জাতিকে দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর দুনিয়া থেকে দূরে থাকার সময় কোন অভিশাপ ছিল না বরং এটি ছিল তাঁর ভাগ্যের জন্য প্রশিক্ষণ।আর আপনার কথা ভাবুন আপনার কি কখনো মনে হয় আপনার পথটি সবার চেয়ে আলাদা। এটি এতটাই কঠিন যে তা সহ্য করা প্রায় অসম্ভব। যে কেউ আপনার কষ্ট বোঝেনা। এটার কারণ আপনি যাত্রা অনন্য। আল্লাহ আপনাকে ভেঙে দেয়ার জন্য একা করছেন না। তিনি আপনাকে প্রস্তুত করছেন এমন একটি ভূমিকার জন্য যা অন্য কেউ পূরণ করতে পারবেন না। হয়তো আপনাকে শক্তিশালী করা হচ্ছে আপনার পরিবারের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ভিত্তি হতে অথবা হয়তো আপনাকে প্রস্তুত করা হচ্ছে আপনার সম্প্রদায়ের জন্য পথ নির্দেশক হতে। পৃথিবীতে এমন মানুষের প্রয়োজন যারা কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন।যারা একাকীত্ব সহ্য করেছেন এবং শেষে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন।
একবার চিন্তা করে দেখুন সবচেয়ে মজবুত ইস্পাত গড়া হয় সবচেয়ে উত্তপ্ত আগুনে পুড়িয়ে । একাকীত্ব কোন শাস্তি নয়, এটি একটি প্রক্রিয়া। এটি আল্লাহর একটি বার্তা ।আপনাকে বড় কিছুর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।বিশ্বাস রাখুন। তাই পরের বার যখন আপনি নিজেকে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করবেন মনে রাখুন এটি আপনার গল্পের শেষ নয় এটি একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু যেখানে আপনার শক্তি এবং ঈমান আগের চেয়ে উজ্জল হবে।
পরিশেষে কিছু কথা:
প্রিয় পাঠক /পাঠিকা একাকীত্ব কোন শাস্তি নয়। এটি আল্লাহর একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে তিনি আপনাকেও উন্নীত করছেন পরিশুদ্ধ করছেন এবং তার কাছে আরো নিয়ে আসছেন।প্রত্যেকটি অশ্রু, প্রত্যেকটি নিঃসঙ্গ মুহূর্ত,প্রত্যেকটি নীরবতা, দোয়া কিছুই বৃথা যায় না। এগুলো সবই একটি মহান পরিকল্পনার অংশ যা আপনাকে সেই ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে যার জন্য আপনি সৃষ্টি হয়েছেন। মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা মনে রাখুন: তিনি যখন হেরা গুহায় সময় কাটিয়ে ছিলেন। দুনিয়ার কোলাহল থেকে দূরে সরে ছিলেন।তখনই তিনি প্রথম ওহী পেয়েছিলেন। সেই মুহূর্ত মানবজাতির ইতিহাস কে চিরতরে বদলে দিয়েছিল। আপনার একাকীত্ব হতে পারে কোন বড় পরিবর্তনের পূর্বাভাস। সুতরাং,কখনো হতাশ হবেন না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, বিশ্বাস রাখুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url