জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া

এই পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবন অনন্তকালের। আমাদের কর্মফল অনুযায়ী জাহান্নাম-জান্নাত নির্ধারিত হবে। আমরা সবাই জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাই এবং জান্নাত লাভ করতে চাই। আজকের আর্টিকেলে জান্নাত লাভের দোয়া সম্পর্কে জানবো, ইনশাআল্লাহ।

জাহান্নামের-আগুন-থেকে-বাঁচার-দোয়া

আল কোরআনে জাহান্নাম সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত

 কুরআনুল কারীমে জাহান্নামের বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার আগুনের কথা বলা হয়েছে। আগুনের তীব্রতা শরীরের চামড়া খসিয়ে দেবে পুরোপুরি এবং পুনরায় তা আবার নতুনভাবে শরীরে প্রতিস্থাপিত হবে। এভাবেই চলতে থাকবে শাস্তি। জাহান্নামীদের আঘাত করা হবে আগুনের মুগুর দিয়ে।


❤️ وَأَعْتَدْنَا لِمَن كَذَّبَ بِٱلسَّاعَةِ سَعِيرًا 

অর্থ:এবং যে কেয়ামতকে অস্বীকার করে, আমি তার জন্যে অগ্নি প্রস্তুত করেছি।[সূরা:ফুরকান ২৫:১১]


❤️  بَلَىٰ مَن كَسَبَ سَيِّئَةً وَأَحَٰطَتْ بِهِۦ خَطِيٓـَٔتُهُۥ فَأُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ 

অর্থ: হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে এবং সে পাপ তাকে পরিবেষ্টিত করে নিয়েছে, তারাই দোযখের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।[সূরা:বাকারা ২:৮১]


❤️  إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا سَوْفَ نُصْلِيهِمْ نَارًا كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُم بَدَّلْنَٰهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا 

অর্থ: এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী।

[সূরা:নিসা ৪:৫৬]

❤️ مِّن وَرَآئِهِۦ جَهَنَّمُ وَيُسْقَىٰ مِن مَّآءٍ صَدِيدٍ 

অর্থ :তার পেছনে দোযখ রয়েছে। তাতে পূঁজ মিশানো পানি পান করানো হবে।[সূরা:ইবরাহিম ১৪:১৬]


❤️  يَتَجَرَّعُهُۥ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُۥ وَيَأْتِيهِ ٱلْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍۖ وَمِن وَرَآئِهِۦ عَذَابٌ غَلِيظٌ 

অর্থ: ঢোক গিলে তা পান করবে। এবং গলার ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রতি দিক থেকে তার কাছে মৃত্যু আগমন করবে এবং সে মরবে না। তার পশ্চাতেও রয়েছে কঠোর আযাব।


❤️  فَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُءُوسِهِمُ ٱلْحَمِيمُ 

অর্থ: এতএব যারা কাফের, তাদের জন্যে আগুনের পোশাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে।[সূরা:হাজ্ব ২২:১৯]


❤️ "ফলে তাদের পেটে যা আছে, তা এবং চর্ম গলে বের হয়ে যাবে।"[সূরা:হাজ্ব ২২:২০]


❤️  كُلَّمَآ أَرَادُوٓا۟ أَن يَخْرُجُوا۟ مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا۟ فِيهَا وَذُوقُوا۟ عَذَابَ ٱلْحَرِيقِ 

অর্থ : "তারা যখনই যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে। বলা হবেঃ দহন শাস্তি আস্বাদন কর।"[সূরা:হাজ্ব ২২:২২] 

  হাদিসে জাহান্নাম সম্পর্কিত বর্ণনা

📢 জাহান্নামের নানা স্তরের আজাবের সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আগুনের ফিতাযুক্ত জুতা পরানো। নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, "জাহান্নামে যাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হবে তাকে জাহান্নামের দুটি জুতা পরানো হবে, যার দুই ফিতা হবে আগুনের। এর উত্তাপে মাথার মগজ টগবগ করতে থাকবে ডেগের ফুটন্ত পানির মতো। সে মনে করবে তাকে সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। মূলত তাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।"

(মুসলিম, হাদিস : ২১৩)

 📢 জাহান্নামের নানা স্তরের আজাবের সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আগুনের ফিতাযুক্ত জুতা পরানো। নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, "জাহান্নামে যাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হবে তাকে জাহান্নামের দুটি জুতা পরানো হবে, যার দুই ফিতা হবে আগুনের। এর উত্তাপে মাথার মগজ টগবগ করতে থাকবে ডেগের ফুটন্ত পানির মতো। সে মনে করবে তাকে সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। মূলত তাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।"

 (মুসলিম, হাদিস : ২১৩)

📢 জাহান্নামের নানা স্তরের আজাবের সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আগুনের ফিতাযুক্ত জুতা পরানো। নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, "জাহান্নামে যাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হবে তাকে জাহান্নামের দুটি জুতা পরানো হবে, যার দুই ফিতা হবে আগুনের। এর উত্তাপে মাথার মগজ টগবগ করতে থাকবে ডেগের ফুটন্ত পানির মতো। সে মনে করবে তাকে সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। মূলত তাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।" 

(মুসলিম, হাদিস : ২১৩)

📢 আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, "জাহান্নামিদের মাথায় উত্তপ্ত গরম পানি ঢালা হবে। তা পেট পৌঁছে সব নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে দেবে। এরপর তা পায়ের দিক থেকে বের হয়ে পড়বে। এটাকে ‘সাহর’ বা গলে যাওয়া বলেন। অতঃপর তা আগের মতো হয়ে পড়বে। (এভাবে শাস্তি চলতে থাকবে)।" (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৮৩)

📢 অহংকারীদের অপদস্থ করে রক্ত-পুঁজ পান করানো হবে। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, "কিয়ামতের দিন অহংকারীদের মানুষের আকৃতিতে পিঁপড়ার মতো সমবেত করা হবে। সব দিক থেকে লাঞ্ছনা তাদের আক্রান্ত করবে। জাহান্নামের বাওলাস নামের বন্দিশালায় তাদের নেওয়া হবে। কঠিন আগুন তাদের গ্রাস করবে। জাহান্নামিদের দুর্গন্ধময় পুঁজ-রক্ত ইত্যাদি তাদের পান করানো হবে।"

 (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯২)

📢 সর্বদা কান্না করায় একসময় জাহান্নামিদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, "রাসুল (সা.) বলেন, ‘জাহান্নামিদের জন্য কান্না পাঠানো হবে। এরপর তারা কাঁদতে থাকবে। এক পর্যায়ে তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাদের চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকবে। ফলে তাদের মুখে বিশাল গর্তসদৃশ তৈরি হবে। তাতে নৌযান পাঠানো হলে তা অনায়াসে চলতে পারবে।"

 (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩২৪)


 আরো পড়ুনঃ
একাকীত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে অঘোষিত পুরস্কার
তাকদীর নির্ধারিত হলে পাপের জন্য আল্লাহ নিজেই দায়ী

যে দোয়াটি দিনে তিনবার পড়লে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে

হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- مَنْ سَأَلَ اللَّهَ الْجَنَّةَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ الْجَنَّةُ اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ . وَمَنِ اسْتَجَارَ مِنَ النَّارِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ النَّارُ اللَّهُمَّ أَجِرْهُ مِنَ النَّارِ 

"কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর কাছে তিনবার জান্নাতের দোয়া করে, জান্নাত তখন বলে, ’হে আল্লাহ একে জান্নাতে দাখিল করে দাও।’ আর কোনো ব্যক্তি যদি জাহান্নাম থেকে তিনবার পানাহ চায়, তখন জাহান্নাম বলে, ’হে আল্লাহ একে জাহান্নাম থেকে পানাহ দিয়ে দাও।" (জামে’ তিরমিজি: ২৫৭২)


জান্নাত লাভের দোয়া

জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য এই দোয়াটি করতে পারেন—

@ اللَّهُمَّ إنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَاعوذ بِكَ مِنَ النَّارِ 

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাহ, ওয়া আঊযুবিকা মিনান্নার।’ 

অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’


উক্ত দোয়াটি আমরা আমরা সকাল সন্ধ্যা আমল করব। আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাইব এবং জান্নাত লাভের জন্য বেশি বেশি আল্লাহর কাছে চাইবো। আল্লাহ গাফুরুর রহিম। ইনশাআল্লাহ, আমরা উক্ত আমাদের মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবো।


@ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا ، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا ، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا


উচ্চারণ : ‘রাদিতু বিল্লাহি রব্বাউঁ ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনাউঁ ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যাঁও ওয়া রাসুলা’।

অর্থ : আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বিন এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি।


আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন— 

যে ব্যক্তি দোয়াটি পড়বে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’ হাদিসে আছে, এই কথাটি শোনে আবু সাইদ (রা.) আনন্দে বিস্মিত হয়ে যান।

(আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২৯)

অন্য এক হাদিসে মুনাইজির (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি- যে সকালে ‘রাদিতু বিল্লাহি রব্বাউঁ ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনাউঁ ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যাঁও ওয়া রাসুলা’ পড়বে— আমি তার হাত ধরে তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেবো। (মুজামুল কবির, হাদিস : ৩৫৫/২০; সিলসিলাতুস সহিহা, হাদিস : ২৬৮৬)

অপর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি সকাল-বিকেল তিনবার এই দোয়া পড়বে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির নেকি বৃদ্ধির মাধ্যমে তাকে সন্তুষ্ট করবেন। (তিরমিজি : ২/১৭৬)

পরিবারের জন্য জান্নাত লাভের দোয়া

اَللَّهُمَّ أَدْخِلْنَا وَأَهْلَنَا الْجَنَّةَ الْفِرْدَوْسَ بِغَيْرِ حِسَابِ وَلَا عَذَابِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আদখিলনা ওয়া আহলানাল জান্নাতাল ফিরদাউসা বিগাইরি হিসাবিও ওয়া লা আজাবি। অর্থঃ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আর আমার পরিবারকে হিসাব ও আজাব ছাড়া জান্নাতুল ফিরদাউস দান কর।’


বাবা-মা ও নিজের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দোয়া

رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ 

উচ্চারণ : ‘রব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’ 
অর্থ : ‘হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মা ও মুমিনদের ক্ষমা করে দেবেন।’
[সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪]

জান্নাতে বৃক্ষ রোপণ করার দোয়া 

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তাঁর জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হয়। [তিরমিজি : ৩৪৬৪]

লেখক এর কিছু কথা:

 আমরা সামান্য ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রার উত্তাপ সহ্য করতে পারিনা। আগুনে পাঁচ সেকেন্ড থাকতে পারিনা, শরীরে একটু গরম পানি পড়লে যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি না। তাহলে জাহান্নামের মতো এতো ভয়ানক একটি স্থানের শাস্তি আমরা কিভাবে সহ্য করব। আসুন আমরা সবাই আল্লাহর পথে ফিরে আসি। জাহান্নাম থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। বেশি বেশি জান্নাত লাভের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানের সহিত চলার তৌফিক দান করুক এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দান করুক, আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url